বাংলাদেশে বর্তমান মোবাইল ডিভাইসের বাজারে অ্যান্ড্রয়েড চালিত ডিভাইসের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। আর দেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথমবারের মত প্রিমো সিরিজের অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাজারে এনে অ্যান্ড্রয়েড বাজারকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে ওয়াল্টন।
গত বছর থেকেই প্রিমো সিরিজের ফোনগুলো এনে একের পর এক চমক সৃষ্টি করে চলেছে এই কোম্পানিটি। আর তারই ধারাবাহিকতায় তারা এবার আনলো দেশের প্রথম ব্র্যান্ড হিসেবে কোয়াড কোর প্রসেসর সমৃদ্ধ ফোন ওয়াল্টন প্রিমো এন১। সম্প্রতি অ্যান্ড্রয়েড কথনে ওয়াল্টনের আসন্ন ফোন এন১, ডি১ এবং সি১ নিয়ে একটি পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াল্টনের তথ্যমতোই ইতোমধ্যেই বসুন্ধরা সিটিতে ডিসপ্লেতে রাখা হয়েছে ওয়াল্টন প্রিমো এন১। বসুন্ধরা সিটি ঘুরে এসে ফার্স্ট লুক হিসেবে Walton Primo N1 নিয়েই আজকের এই পোস্ট।
ওয়াল্টন প্রিমো এন১
ওয়াল্টন প্রিমো এন১ হচ্ছে এই সিরিজের সবচেয়ে বড় ৫.৩ ইঞ্চি আকারের ডিসপ্লে সম্পন্ন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। একে দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রথম “ফ্যাবলেট”-ও বলা চলে। প্রিমো সিরিজের আর১, এফ১, জি১ এবং জি২-এর মতোই দেখতে প্রায় একই ধরনের বিল্ড কোয়ালিটিতে তৈরি করা হয়েছে ওয়াল্টন প্রিমো এন১, যা নিয়ে অনেকদিন ধরেই অ্যান্ড্রয়েডপ্রেমীদের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না।
ডিজাইনের দিক দিয়ে বলা যায়, কিছুদিন আগে বাজারে আসা প্রিমো সিরিজের চারটি ফোনের মতোই দেখতে এন ১; কেবল এটির আকার অন্যগুলোর তুলনায় বেশ বড়। স্বাভাবিকভাবেই দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য খুব একটা পারফেক্ট ডিভাইস নয় এন১। এর বিশাল আকৃতির জন্য সাধারণ এটি পকেটে রাখাই দায় হবে।
প্রিমো এন ১-এর আরো দু’টি বড় সুবিধা হলো এতে ৩জি ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে এবং এটি ডুয়েল সিম সুবিধা সম্পন্ন। কাজেই একাধিক সিম ব্যবহারকারীদের চাহিদা মেটাতে পারবে প্রিমো এন১।
সিপিইউ
Walton N1-এ রয়েছে Mediatek এর MTK6589 (Cortex A7) কোয়াড-কোর সিপিইউ যা ১.২ গিগাহার্জ গতিতে চলবে। গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটে থাকছে PowerVR SGX544MP। আরও থাকছে ১ গিগাবাইট RAM। কিন্তু এখানে একটি ব্যাপার দেখে আমরা বেশ অবাক হয়েছি। সেটটিতে ১ গিগাবাইট RAM-এর মধ্যে ৯৭৬ মেগাবাইটই ইউজার অ্যাভেইলেবল বা ব্যবহার করা যায়। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীমাত্রই জানেন যে, সেটে যতটুকু RAM থাকে, তারচেয়ে কিছুটা কম ব্যবহারোপযোগী হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত আমার দেখা এটাই প্রথম ফোন যেটায় ১ গিগাবাইট RAM-এর মধ্যে এতো ব্যবহার করা যায়। নিঃসন্দেহে এর ফলে বিভিন্ন গেমস ও অ্যাপ্লিকেশনে বাড়তি সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা।
ফোনটিতে রয়েছে সব ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার জন্য ১ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ (রম) এবং অন্যান্য ফাইল রাখার জন্য ১.৭ গিগাবাইট পার্টিশন। তাছাড়া এন ১-এ সর্বোচ্চ ৩২ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছেই।
ডিসপ্লে
এন১ এ থাকছে বিশাল আকারের ৫.৩” ইঞ্চি ডিসপ্লে যার রেজুলেশন 960 X 540(qHD) পিক্সেল এবং PPi বা (পিক্সেল পার ইঞ্চি) ২০৮ পিপিআই। যদিও ৫.৩ ইঞ্চি ডিসপ্লের জন্য 960 X 540(qHD) রেজুলেশন একটু কম হয়ে যায়, তবুও ডিসপ্লে শার্পনেস বেশ ভালোই মনে হয়েছে। তাই তুলনামূলক কম রেজুলেশন চোখে লাগবে না খুব একটা।
সেন্সর
সেন্সর নিয়ে কথা বলা যাক। স্মার্টফোনের প্রায় সব ধরণের সেন্সরই রয়েছে প্রিমো এন১-এ। রয়েছে মোশন-সেনসিটিভ গেম খেলার জন্য অ্যাক্সেলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি সেন্সর, লাইট সেন্সর, ওরিয়েন্টেশন সেন্সর এবং ম্যাগনেটিক ফিল্ড সেন্সর।
ক্যামেরা
Walton N1 এর পেছনে দেয়া হয়েছে অটো-ফোকাস সুবিধাসহ ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং সামনে থাকছে ১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। অবশ্য ভিড় থাকার কারণে ক্যামেরা দিয়ে খুব একটা ভালো স্যাম্পল ছবি তোলা সম্ভব হয়নি তাই আউটডোরে কেমন ছবি আসে তা জানা সম্ভব হলো না। তবে এন১-এর ক্যামেরায় ইনডোরে তোলা দু’টি ছবি নিচে দেয়া হলো।
পেছনের ক্যামেরা দিয়ে ৭২০পি এইচডি ভিডিও রেকর্ড করারও সুবিধা রয়েছে যা এমপি৪ ফরম্যাটে ভিডিও রেকর্ড করতে পারে। তবে বাজারে আসার আগে প্রিমো এন১-এর ক্যামেরা স্যাম্পল হয়তো পাওয়া যাচ্ছে না।
বেঞ্চমার্ক
বেঞ্চমার্ক এখন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার আগে অত্যাবশ্যকীয় বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। Antutu benchmark এতোটাই জনপ্রিয় ও ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোও বেঞ্চমার্ককে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেই সূত্রেই অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার আগে ডিভাইসের বেঞ্চমার্ক রেজাল্ট জানার আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। সে কথা মাথাই রেখেই আমি সবার আগে বেঞ্চমার্ক এর তথ্যগুলো জোগাড় করেছি। প্রথমেই Antutu benchmark। Antutu Benchmark এ Walton N1 মোট ১২,৮১৭ এর Result পেয়েছে।
তারপর আসা যাক Nenamark 2-তে, এখানে N1 কোন ধরনের Lag ছাড়াই ৪৯.৫ এফপিএস পেয়ে গ্যালাক্সি এস২ এর নিচে স্থান দখন করেছে!
অন্যান্য
ডিভাইস এর এতোকিছুর ক্ষমতা যোগানোর জন্য থাকছে একটি ৩০০০ এমএএইচ এর ব্যাটারি। রেকর্ডিং সুবিধাসহ এফএম রেডিও, জিপিএস ও ব্লুটুথ ৪.০, Micro-ইউএসবি ২.০ পোর্ট থাকলেও এইচডিএমআই পোর্ট নেই। সেহেতু ব্যবহারকারীরা এইচডিএমআই সুবিধা পাবেন না। আমাদের মতে, এমন একটি ডিভাইসে এইচডিএমআই পোর্ট থাকা প্রয়োজন ছিল।
শেষ কথা
ওয়াল্টন প্রিমো এন ১-এর দাম সম্পর্কে Walton এর শোরুমের কর্মচারীরা বলেছেন যে, এর দাম ১৭ হাজারের নিচে হবে। শোরুমে থাকা আরেকজন মজা করে বললেন, সর্বোচ্চ হয়তো ১৬,৯৯৯ টাকা হবে। তারা এও জানিয়েছেন যে, ফোনটি এপ্রিলের শেষের দিকে বাজারে আসাবে। যদি সত্যিই ১৭,০০০ টাকার নিচে বিক্রি হয় প্রিমো এন১, তাহলে একেবারেই খারাপ বলা যাবে না ওয়াল্টন প্রিমো এন১-কে।
ওয়াল্টন প্রিমো এন১ কিনতে যাচ্ছেন কারা? প্রিমো এন১-এ আপনার পছন্দের ও অপছন্দের বিষয়টি তুলে ধরুন মন্তব্যের ঘরে।