এইচটিসির ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলো এক দিক দিয়ে সবার কাছ থেকেই প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। আর তা হচ্ছে এর দারুণ ডিজাইন ও প্রিমিয়াম বিল্ড কোয়ালিটি। স্পেনের বার্সেলোনায় আজ শুরু হওয়া মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এইচটিসির নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন এইচটিসি ওয়ান এম৯-এও সেই প্রশংসা ধরে রাখতে পেরেছে কোম্পানিটি।
তবে এইচটিসির সাড়া জাগানো ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ ওয়ান এর নতুন ফোন এম৯-এও হতাশাজনক দিক রয়েছে। মূলত ডিজাইনকেই এই ফোনের সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক বলে বলা হচ্ছে। সেটুকু বাদ দিলে পূর্ববর্তী ফোনের তুলনায় নতুন ফোনটির পার্থক্য প্রত্যাশার চেয়ে কমই মনে করছেন অনেকে। প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট দি ভার্জ এইচটিসির নতুন ফোনটিকে ‘বিউটিফুল ডিসঅ্যাপয়েন্টমেন্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
আসলেই কতটুকু প্রশংসা আর কতটুকু সমালোচনা পাবার যোগ্য এইচটিসির নতুন ওয়ান এম৯ সেটটি? চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক এর হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন ও বৈশিষ্ট্য, তারপর আপনিই মন্তব্য করুন আপনার কী মত।
ডিজাইন ও ডিসপ্লে
যেই ফুল-মেটাল ইউনিবডি ডিজাইনের জন্য এইচটিসি ওয়ান এম৮ প্রায় সবার কাছ থেকেই ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে নিয়েছে, ওয়ান এম৯-এও সেই ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটিই ধরে রেখেছে তাইওয়ানের কোম্পানি এইচটিসি। দু’টো প্রজন্মের ফোনের মধ্যে মিল এতোটাই যে, মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে অনেকেই এইচটিসি ওয়ান এম৯-কে ওয়ান এম৮ বলে ভুল করেছেন।
তাই এইচটিসি ওয়ান এম৮-এর ডিজাইনের ভক্ত যারা, তারা জেনে খুশি হবেন যে, নতুন ফোনেও তাদের পছন্দের ডিজাইন রয়েছে। তবে যারা নতুনত্ব আশা করছিলেন, তাদের খানিকটা হতাশই করেছে এইচটিসি।
এইচটিসি ওয়ান এম৯-এ রয়েছে ৫-ইঞ্চি ১০৮০পি ফুল এইচডি রেজুলেশনের ডিসপ্লে। এর উপর রয়েছে করনি গরিলা গ্লাস ৪ প্রটেকশন। ফোনটির ডিজাইন এম৮-এর মতো হলেও ওয়ান এম৯-এর তুলনায় এর পুরুত্ব খানিকটা বেশি।
হার্ডওয়্যার
এইচটিসি ওয়ান এম৯-এ ব্যবহৃত হবে ৬৪-বিট সমর্থিত কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮১০ অক্টা-কোর প্রসেসর। এর মাধ্যমে কেবল ফোনে তুমুল গতি ও ভালো প্রসেসিং পাওয়ারই না, বরং ইমপ্রুভড ৪কে ভিডিও সাপোর্টও পাওয়া যাবে। পাশাপাশি এটি তুলনামূলক কম ব্যাটারি খরচ করবে বলেও জানিয়েছে এইচটিসি। প্রসেসরের চারটি কোর চলবে ১.৫ গিগাহার্জ গতিতে ও চারটি চলবে ২.০ গিগাহার্জ গতিতে। ফোনে কী কাজ করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করেই প্রসেসর কাজ করবে। ফলে কম ক্ষমতার প্রয়োজন হলে কম গতির কোরগুলো চালু থাকবে যা সাশ্রয় করবে ব্যাটারি। আর যখন দরকার হবে, তখন চালু হয়ে যাবে বেশি গতির কোর বা সবগুলো কোর একসঙ্গে।
এইচটিসির নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোনে আরও ব্যবহার করা হচ্ছে ৩ গিগাবাইট র্যাম। এতে থাকছে ৩২ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ ও সর্বোচ্চ ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রোএসডি মেমোরি কার্ড সাপোর্ট।
ক্যামেরা
এইচটিসি তাদের প্রধান বা ব্যাক ক্যামেরা থেকে বাদ দিয়েছে আল্ট্রাপিক্সেল প্রযুক্তির ক্যামেরা এবং যোগ করেছে ২০.৭ মেগাপিক্সেলের নতুন ক্যামেরা। ডুয়াল-এলইডি সুবিধার এই ক্যামেরায় রয়েছে এইচডিআর, প্যানোরামা ও একইসঙ্গে ভিডিও ও ছবি তোলার সুবিধা। তবে অনেক ওয়েবসাইটই বলছে, ২০.৭ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দেয়ার পরও খুব একটা ভালো ছবি আসে না এইচটিসি ওয়ান এম৯-এর ক্যামেরায়। অবশ্য এইচটিসি জানিয়েছে এম৯-এর ক্যামেরা অল্প আলোয়ও ভালো ছবি তুলতে সক্ষম।
পেছনের ক্যামেরা থেকে আল্ট্রাপিক্সেল প্রযুক্তি বাদ দিলেও সেলফিপ্রেমীদের জন্য ৪ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা রেখে দিয়েছে এইচটিসি। তবে ২০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায়ও তুলনামূলক প্রত্যাশিত মানের ছবি না আসায় অনেকেই তাদের প্রতিবেদনে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ফোনটি বাজারে এলেই বোঝা যাবে আসলেই কতটুকু খারাপ এইচটিসির নতুন ফোনের ক্যামেরা।
ব্যাটারি
এইচটিসি ওয়ান এম৯-এ ব্যবহৃত হচ্ছে ২৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটির ব্যাটারি। এটি এইচটিসির ফোনের অন্যতম বেশি ক্যাপাসিটির ব্যাটারি। আশা করা হচ্ছে, পাওয়ার এফিশিয়েন্ট প্রসেসর ও ডিসপ্লের ফলে এইচটিসি ওয়ান এম৯ এর ব্যাটারি থেকে সহজেই এক দিনের বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যেতে পারে। তবে অন্যান্য বিষয়ের মতো এটিরও বাস্তবিক অভিজ্ঞতা জানার জন্য ফোনটি বাজারে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য
এই মুহূর্তে বাজারে আসা যে কোনো ফ্ল্যাগশিপ ফোনেই অ্যান্ড্রয়েড ললিপপ থাকা বাধ্যতামূলক। নইলে সেটিই হয়ে যাবে ফোনের অন্যতম নেতিবাচক বিষয়। এইচটিসি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে তাদের পুরনো ওয়ান এম৮, এম৭-সহ বেশ কিছু মিডরেঞ্জের স্মার্টফোনও অ্যান্ড্রয়েড ললিপপ আপডেট পেতে যাচ্ছে। আর ওয়ান এম৯ শুরু থেকেই চলবে অ্যান্ড্রয়েড ললিপপ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি এইচটিসির নিজস্ব ইউজার ইন্টারফেস সেন্স ৭-এ।
এইচটিসি তাদের সেন্স ৭ ইউজার ইন্টারফেসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের নতুন কিছু অভিজ্ঞতা দিতে যাচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েড ললিপপ এর ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন বনাম এইচটিসি সেন্স ৭ এর ডিজাইন, এমন তুলনা না হয় না-ই করা হলো। তবে সেন্স ৭-এর দারুণ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন আপনি কোনো ছবি তুললে সেই ছবির রঙ-এর উপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে থিম তৈরি করে নিবে এইচটিসি। ফলে আপনার পছন্দের ছবিকে ওয়ালপেপার এবং সেই ছবির রঙের সংমিশ্রণে বিভিন্ন আইকনের রঙে পরিবর্তন আনতে পারবেন সহজেই।
এ মাসের মাঝামাঝিই বাজারে আসবে এইচটিসির নতুন এই ফ্ল্যাগশিপ ফোন। নতুনত্বের অভাবে ভুগতে পারে নতুন এই স্মার্টফোন, এমনই প্রাথমিক মন্তব্য করেছেন অনেকে। ফোনটির ২০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা হতে পারতো এর অন্যতম দারুণ একটি সুবিধা, তবে বেশি মেগাপিক্সেল মানেই যে ভালো ক্যামেরা এ কথা যে সত্য নয়, তা-ই যেন প্রমাণ হতে যাচ্ছে এইচটিসির নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোনে।
অবশ্য যেহেতু এইচটিসি ওয়ান এম৯-এর কনজিউমার ইউনিট এখনও বাজারে আসেনি, তাই এখনও আশা করা যায় এইচটিসি তাদের ক্যামেরায় শেষ মুহূর্তের ইমপ্রুভমেন্ট সম্পন্ন করবে। ডিজাইনের দিক দিয়ে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছে এইচটিসি ওয়ান সিরিজ। বাকিটুকু অর্জন করে নেয়া এইচটিসির পক্ষে খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা না।
এইচটিসি ওয়ান এম৯ নিয়ে আপনার কী মত?
ইমেজ কার্টেসি: টেকরাডার