এইচটিসির নতুন ফ্ল্যাগশিপ ওয়ান এম৮: পাওয়া না পাওয়ার সমাহার

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫, এক্সপেরিয়া জেড২ যেখানে অ্যান্ড্রয়েড ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসের বাজার দখল করে নিচ্ছে সেখানে এইচটিসি বসে থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। তবে ঘটনা হচ্ছে, সবাই যেখানে প্রায় একই স্পেসিফিকেশনের ফোন নিয়ে আসছে সেখানে নতুনত্ব খুঁজে বের করাটা আসলেই কঠিন। সবাই স্ন্যাপড্রাগন ৮xx চিপসেট ব্যবহার করছে, সকলের ফোনেই রয়েছে ৫ ইঞ্চির চেয়েও বড় ফুল এইচডি ডিসপ্লে, সকলের ফোনেই সর্বশেষ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। নতুনত্বের যে দু-একটি জায়গা বাকি ছিল – যেমন বডি ডিজাইন, ইন্টারফেস – সে সব ও বড় স্ক্রিন ও গুগলের ইন্টারফেস গাইডলাইনের ফলে পরিবর্তন করা কষ্টসাধ্য। তাহলে কি নতুন দেয়ার কিছুই নেই? না, ঘটনা তাও নয়। বড় বড় ফিচারের দৌড়ে প্রায় সবাই এক অবস্থানে চলে এলেও, ছোট ছোট জিনিষের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মাঝে নিজের অবস্থান করে নেয়ার দৌড়ের সবে মাত্র শুরু।

One vs one m8

প্রথম দেখায় এইচটিসি ওয়ান এম৮ আর প্রথম ওয়ানের মাঝে তেমন পার্থক্য পাওয়া যাবে না। সেই অ্যালুমিনিয়াম বডি, সেই ডিসপ্লের নীচে ও উপরে স্পিকার গ্রিল, পেছনের ক্যামেরা – প্রায় সবকিছুই রয়ে গেছে প্রায় আগের মতোই। তবে যেখানে গ্যালাক্সি এস৫ বা আইফোনের ডিজাইন অপরিবর্তিত থাকার কারণে ব্যবহারকারীরা অসন্তুষ্ট হন, সেখানে ওয়ানের ডিজাইনে পার্থক্য না হওয়াটাই আশীর্বাদ। তবে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেমন ফোনটির কোন সমূহ আগের তুলনায় আরও স্মুথ রাউন্ডেড করা হয়েছে, বাদ পরেনি এজগুলোও। এর ফলে ওয়ান এম৮ এর মাঝে কিছুটা গ্যালাক্সি বা আইফোনের ছায়া পড়েছে তবে মূলত এর ব্যবহার হয়েছে আরও অনেক আরামদায়ক। ফোনটি তৈরিতে ব্যবহার করা অ্যালুমিনিয়ামেরও কোয়ালিটি আরও উন্নত করা হয়েছে।

যারা ফ্যাবলেট ব্যবহার করেছেন তাদের কাছে ৫ ইঞ্চি ফোনের পাওয়ার বাটন চাপার ঝামেলা অজানা নয়, তবে এই ফোনটির ক্ষেত্রে সেটি ব্যবহারের তেমন প্রয়োজনও নেই। স্ক্রিনে ট্যাপ করেই আনলক বা অ্যাপ চালু করার সুবিধাটি লক অবস্থায়ও কাজ করবে, নিঃসন্দেহে সবার জন্যই বেশ কাজের একটি ফিচার। এর ব্যাটারি লাইফেরও বেশ উন্নতি করা হয়েছে – দেখা গেছে অন্তত ২৪ ঘন্টা ব্যবহার করা যাবে সহজেই।

one m8 bottom

তবে ক্যামেরা নিয়ে সমস্যা রয়েই যাচ্ছে – সেই ৪ আল্ট্রা পিক্সেল ক্যামেরা এবারও ব্যবহার করা হয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলেও, ছবির মান আজও ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস পর্যায় নিয়ে আসতে পারেনি এইচটিসি। ফলে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এর ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা মাঝে মাঝেই ব্যাক ক্যামেরাকে হারিয়ে দিচ্ছে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, ৪ আল্ট্রা পিক্সেল এত কিছুর পরও সাধারণ লো বা মিড রেঞ্জ ফোনের চেয়ে ভালো ছবি তুলতে সক্ষম। তবে মজার একটি ফিচার যোগ করা হয়েছে তা হলও মূল ক্যামেরার সাথে একটি ছোট ক্যামেরা যোগ করা হয়েছে – ফলে ডেপথ অফ ফিল্ড ও ছবির সাথে রেকর্ড হয়ে যাবে, যা দিয়ে পরে রি-ফোকাস বা হাল্কা থ্রি-ডি ইফেক্ট বসানো সম্ভব। লাইট্রো ক্যামেরার মত এই ফিচারটি বেশ কিছু ফোনে আজকাল দেখা যাচ্ছে। নিচে একটি স্যাম্পল ছবি দেয়া হলো।

one m8 camera sample

সাউন্ডে তেমন পরিবর্তন নেই – দরকারও ছিলোনা কখনোই। তবে দুটি বুম-সাউন্ড স্পিকারকে আরও জোরালো করা হয়েছে, এই মুহূর্তের সকল স্মার্টফোনের চেয়ে এর স্পিকারের লাউডনেস সবচাইতে বেশী, কোয়ালিটি তো বটেই। ডিসপ্লের পিপিআই একটু কমে গেলেও, ৪০০ এর কাছাকাছি পিপিআই এর ডিসপ্লেটি আরও উজ্জল ও বাস্তবসম্মত কালার দেখাতে সক্ষম।

ফোনটি পাওয়া যাবে সিলভার ও গোল্ড – দুটি ফিনিশিং এ। দাম থাকছে ওয়ানের তুলনায় প্রায় অপরিবর্তিত, চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮০১ ও র‌্যাম দেয়া হয়েছে ২ গিগাবাইট। অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪.২ কিটক্যাট চালিত এই ফোনটিতে রয়েছে সেন্স ৬ ইন্টারফেস।

এইচটিসির নতুন এই ফ্ল্যাগশিপ নিয়ে আপনার কী অভিমত?