হ্যান্ডস-অন রিভিউঃ Ramos W17 Pro ট্যাব

ramos w17 pro

বিল্ড কোয়ালিটির দিক দিয়ে আমাদের দেখা সেরা ট্যাবলেট রামোস ডব্লিউ ১৭ প্রো।

বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজারে এখন সবচেয়ে আলোচিত ডিভাইস হলো ট্যাবলেট কম্পিউটার। বিশেষ করে ৭ ইঞ্চি ট্যাবলেটগুলোর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। নামীদামী ব্র্যান্ডের প্রচলন সর্বাধিক হলেও, চাহিদার সাথে সাথে বাজারে বিস্তৃতি লাভ করায় চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান কিছু প্রায় অজানা ব্র্যান্ডও আজকাল জনপ্রিয় হচ্ছে শুধু সাশ্রয়ী মূল্যে অনেক শক্তিশালী পারফরম্যান্সের ট্যাব দিয়ে। এই কাতারে রয়েছে আইনল, ওনডা, মাইক্রোম্যাক্স ইত্যাদি বিভিন্ন ব্র্যান্ড।

আজ আমরা যে ট্যাবটি রিভিউ করবো সেটি তেমনই জনপ্রিয়তা পাওয়া একটি ব্র্যান্ড রামোস (Ramos) এর। যদিও তারা আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাত করে থাকে মিউমিউ (miumiu) নামে। নাম শুনে এরই মধ্যে হয়তো অনেকে হাসির রোল তুলে ফেলেছেন। কিন্তু আমি তাদের বলছি একটু ধৈর্য্য ধরে রিভিউটি পরুন, আশা করি হতাশ হবেন না।

রামোস ডব্লিউ ১৭ প্রো

এবার পর্যায়ক্রমে দেখা যাক এই ট্যাবটিতে কী কী আছে এবং এর হার্ডওয়্যারে কীরকম পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। তাহলে শুরু করা যাক।

প্রসেসর ও জিপিইউ

একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর প্রসেসর এবং জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। কারণ, এর উপরই নির্ভর করে ডিভাইসটির ক্ষমতা কতটুকু। সেক্ষেত্রে এই ট্যাবটি নামীদামী ব্র্যান্ডের ডিভাইসগুলোর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কারণ,  Ramos W17 Pro-এ রয়েছে AML8726-M  ARM Cortex A9 ১.৩২ গিগাহার্জ  ডুয়াল কোর প্রসেসর যা ওভারক্লক করে ১.৫ গিগাহার্জ পর্যন্ত নেয়া সম্ভব।

শুধু প্রসেসরই নয়, এর জিপিইউতেও রয়েছে চমক। এতে আছে Mali 400 MP কোয়াড কোর জিপিউ। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন, এতে রয়েছে কোয়াড কোর জিপিইউ অর্থাৎ প্রতিটির প্রসেসরের জন্য দুটি করে মোট চারটি জিপিইউ যা গেমিং এর জন্য বেশ কার্যকরী।

CPU Identifier-এর পর্দায় রামোস ডব্লিউ ১৭ প্রো।

প্রসেসর ও জিপিইউ সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারনা পেতে উপরের ছবিটি Ramos W17 Pro তে ইন্সটল করা CPU Identifier অ্যাপ্লিকেশন থেকে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই ডিভাইসটির নতুন ফার্মওয়্যারে এটির build.prop এ পরিবর্তন এনে একে Samsung GT-P6200 অর্থাৎ Galaxy Tab হিসেবে দেখানো হয়। মূলত গ্যালাক্সি ট্যাবের এই মডেলটির সাথে Ramos W17 Pro এর হার্ডওয়্যারে বেশ মিল রয়েছে। তাই অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বাড়ানোর জন্য এর নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।

র‌্যাম

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর র‍্যাম। আপনি কতগুলো অ্যাপ্লিকেশন একসাথে চালাতে পারবেন বা কতটা শক্তিশালী গেমস বা অ্যাপ্লিকেশন কোনরকম বাধা ছাড়া চালাতে পারবেন তার অনেকটা নির্ভর করে র‍্যামের উপর। এদিক দিয়েও Ramos W17 Pro আপনাকে হতাশ করবেনা কারণ এতে রয়েছে ১ গিগাবাইট ডিডিআর ৩ র‍্যাম।

উপরের স্ক্রিনশটটি নেয়ার সময় আমি GTA Vice City এবং NFS Most Wanted এর মত হাই গ্রাফিক্সের গেমসহ মোট ২০ টির মত অ্যাপ্লিকেশন চালু রেখেছিলাম। দেখতেই পারছেন এরপরও পুরো অর্ধেক র‍্যামই ফ্রি ছিল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এর র‍্যাম কতটা শক্তিশালী।

ডিসপ্লে

ট্যাব বলুন বা ফোন বলুন, একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অংশ কিন্তু এর ডিসপ্লেই। আর Ramos W17 Pro ট্যাবটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর পিওর IPS ডিসপ্লে। ৫ পয়েন্ট ক্যাপাসিটিভ টাচের আইপিএস স্ক্রিনটির আকার ৭ ইঞ্চি যার চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। এর রেজুলেশন ১০২৪x৬০০ পিক্সেল এবং পিক্সেল ডেনসিটি ১৬০ পিক্সেল। আর এর রেজুলেশন দেখেই বুঝতে পারছেন এতে হাই ডেফিনেশন মুভি দেখতে কোন সমস্যাই হয়না। তাছাড়া এর ডিসপ্লেটি বাইরে ব্যবহার করার জন্যও বেশ উপযোগী। খুব বেশি কড়া রোদ না থাকলে বাইরেও এর স্ক্রিন স্পষ্টই দেখা যায়। এর টাচ রেসপন্সিভনেসও বেশ চমৎকার।

স্টোরেজ:

Ramos W17 Pro তে রয়েছে ১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ যার ১ গিগাবাইট রয়েছে ইন্টারনাল হিসেবে আর বাকিটুকু এসডি হিসেবে। তাছাড়া এক্সটার্নাল মাইক্রো এসডি কার্ড লাগানোর জন্য স্লট তো আছেই।

এটি আমার Ramos W17 Pro থেকে নেয়া স্ক্রিনশট। প্রথমেই রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটলের জন্য ১ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ। এরপর রয়েছে ১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল এসডি কার্ড স্টোরেজ এবং সবার শেষে রয়েছে আমার ব্যক্তিগতভাবে কেনা ১৬ গিগাবাইট মাইক্রো এসডি কার্ড যা এক্সটার্নাল এসডি কার্ড হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

ডিজাইন:

ট্যাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর ডিজাইন। সেদিক থেকে Ramos W17 Pro কে স্মার্টই বলা চলে। স্লিম ও স্মার্ট ডিজাইনের ট্যাবটি ধরে আপনি বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন। এর পুরো বডিটাই নন স্লিপ করে বানানো এবং পেছনটাও গ্রিপ করা তাই হাত ফসকে পড়ে যাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। একই কারনে এই ট্যাবে গেম খেলাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। এছাড়াও ট্যাবটি যথেষ্ট মজবুত।

ramos w17 pro

পেছনে গ্রিপ থাকায় ট্যাবটি স্বাচ্ছন্দ্যে ধরা যায়।

ট্যাবটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে গেম খেলার জন্য একে ল্যান্ডস্কেপ মোডে ধরলে স্ক্রিনের দু’পাশে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রয়েছে। ফলে, ধরে রাখার সময় ভুলে স্ক্রিনে আঙুল লেগে যাবারও কোনো সম্ভাবনা নেই। সবমিলিয়ে বিল্ড-কোয়ালিটির দিক দিয়ে অন্যতম সেরা একটি ট্যাবলেট হচ্ছে এই রামোস ডব্লিউ ১৭ প্রো।

ক্যামেরা

ক্যামেরার দিক দিয়ে আপনাকে হতাশ হতে হবে কারন এই ট্যাবে কোন ব্যাক ক্যামেরা নেই। শুধুমাত্র ০.৮ মেগাপিক্সেল ভিডিও কল কোয়ালিটির একটি সাধারণ ফ্রন্ট ক্যামেরা রয়েছে যা আপনি শুধু ভিডিও কলের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে পারবেন।

বেঞ্চমার্ক

কোন ডিভাইস টেস্টের শুরুতেই আমরা যেটা করে থাকি তা হলো বেঞ্চমার্ক। যারা বেঞ্চমার্ক এর ব্যাপারে খুব একটা জানেন না তাদের বলছি, এটা খুব সহজ ভাবে বললে টেস্ট পরীক্ষার মত। সব ডিভাইস এই পরীক্ষা দিয়ে থাকে এবং যে যত বেশি মার্ক পায় সে তত শক্তিশালী। এই টেস্টে ডিভাইসের হার্ডওয়্যারগুলোর ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে তুলনা করা হয়। সবশেষে যেই মার্ক আসে সেটাই ডিভাইসের সার্বিক বেঞ্চমার্ক রেজাল্ট বা স্কোর হিসেবে ধরা হয়।

ramos w17 pro

AnTuTu Benchmark Result.

AnTuTu Benchmark করার সময়ই আমরা প্রথম সারপ্রাইজটা পেলাম। উপরের ছবিটিতেই দেখতে পাচ্ছেন এর স্কোর ৯০০০+! তাই বুঝতেই পারছেন এটি নিঃসন্দেহে একটি গেমিং ট্যাব যার সাহায্যে হাই গ্রাফিক্সের গেমসহ প্রায় সবরকম অ্যাপ্লিকেশনই চালানো সম্ভব। উল্লেখ্য যে, অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বাড়ানোর জন্য এখানেও build.prop পরিবর্তন করার ফলে এটিকে Samsung Galaxy Tab 7 হিসেবে দেখাচ্ছে। আসলে এটি Ramos W17 Pro এরই বেঞ্চমার্ক।

ব্যাটারি ব্যাকআপ

কোনো ট্যাব কেনার আগে সবারই একটি বড় চিন্তার বিষয় থাকে সেটি হলো ব্যাটারি। ট্যাব কেনার সিদ্ধান্ত নেবার আগে ব্যাটারি ব্যাকআপের বিষয়টির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এক্ষেত্রেও Ramos W17 Pro নির্ভরযোগ্য। হাতে কলমে এটির ব্যাটারি মাত্র ৫০০০ mAh হলেও টানা ওয়াইফাইসহ ব্যবহার করার পরও Ramos W17 Pro প্রায় ৮ ঘন্টারও বেশি ব্যাকআপ দিয়েচে।অবশ্য এর পেছনে একটি কারণ আছে।

উপরের ছবিতেই দেখতে পারছেন যে ট্যাবটিতে বিল্ট-ইন সিপিইউ কন্ট্রোল দেয়া রয়েছে যার সাহায্যে আপনি আপনার প্রয়োজনমতো সেটিংস বাছাই করে ব্যাটারির ব্যাকআপ বাড়াতে পারবেন। যেমন যখন সাধারণ কাজ করবেন তখন CPU Mode টি Normal করে চালাবেন। ফলে মোটামুটি পর্যায়ে থাকবে, ব্যাটারিও মোটামুটি খরচ হবে।

আবার যখন হাই গ্রাফিক্স এর গেম খেলতে যাবেন তখন সেটা পরিবর্তন করে Performance দিয়ে দেবেন। এতে প্রতিটি প্রসেসর ও জিপিইউ একসাথে চালু থাকবে। ফলে ভাল গেমিং পারফরম্যান্স পাবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাটারি খরচটা বেশি হবে।

আবার যখন ট্যাবটি এমনি রেখে দেবেন বা তেমন কোন কাজ করা হবেনা, শুধু নেট ব্রাউজ বা বই পড়ার মত কাজ করবেন তখন চাইলে CPU Mode পরিবর্তন করে Power Saving দিয়ে দেবেন। এতে ট্যাবটি নিজেই ব্যাটারি খরচ করার মত কাজগুলো বন্ধ করে দেবে। এতে আপনার ব্যাকাপ অনেকখানি বেড়ে যাবে। তাই আপনার কোন এক্সটার্নাল অ্যাপ্লিকেশনেরও প্রয়োজন পড়বেনা।

আমি টেস্ট করার জন্য রাতে ঘুমাবার আগে Power Saving Mode দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম, সকালে উঠে দেখলাম মাত্র এক পার্সেন্ট কমেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটা কতটা কার্যকরী।

গেমিং

গেমিং পাগলদের জন্য এই ট্যাবটি হতে পারে একটি মাস্টারপিস কারন এতে প্রায় সবরকম গেমই কোন ঝামেলা ছাড়াই খেলা সম্ভব। উপরের স্ক্রিনশটটি Dead Trigger গেমস এর যেটা আমার Ramos W17 Pro থেকেই নেয়া।  এই গেমটি অত বড় না হলেও, এটির গ্রাফিক্স খুবই উন্নত মানের এবং এটি ফ্রি। এ কারণে প্রথমেই Dead Trigger দিয়ে টেস্ট করি। পুরো হাই গ্রাফিক্সেই কোনরকম ল্যাগ ছাড়াই গেমটি খেলে দেখেছি। রেসপন্সও ছিল চমৎকার। তাছাড়া আমরা সাধারনত Grand Theft Auto গেমটি দিয়েই সব ডিভাইস টেস্ট করি কারণ এটিতে অনেক বিশাল শহর আছে, যা তুলে ধরার জন্যে ডিভাইসের বেশ ভাল পরিমান র‍্যাম এবং দ্রুতগতির প্রসেসর ও জিপিউ লাগে।

GTA 3 এবং Vice City এই দুটো গেমই আমরা সর্বোচ্চ গ্রাফিক্সে খেলে দেখেছি কোন প্রকার ল্যাগ ছাড়াই। সুতরাং, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই বলে দেয়া যায় যে এটি একটি পিওর গেমিং ট্যাব।

রামোস ডব্লিউ ১৭ প্রো-তে জিটিএ ভাইস সিটি।

ব্রাউজিং ও অন্যান্য

ওয়েব ব্রাউজিং আপনি আন্ড্রয়েডের কাছ থেকে যা আশা করেন সেটিই, দ্রুতগতির কানেকশন থাকলে পেজ লোডিং খুবই দ্রুত এবং এটি ফ্ল্যাশ প্লেয়ার সাপোর্ট করে, তাই অনায়েসে আপনি স্ট্রিমিং ভিডিও দেখতে বা ফ্ল্যাশ গেম খেলতে পারবেন। সুতরাং বলা যায় ব্রাউজিং ও বই পড়ার জন্য Ramos 17 Pro একটি অসাধারণ ট্যাবলেট। এর আইপিএস স্ক্রিনে ব্রাউজিং করার পাশাপাশি বই পড়েও আপনি স্বস্তি পাবেন। আর গেমের পারফরম্যান্স শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ভিডিও প্লেব্যাকেও কোন সমস্যা নেই, ৭২০পি খুব সহজেই চলে, ১০৮০পি তে হালকা স্লো হয় শুধুমাত্র ফাস্ট ফরওয়ার্ড বা রিভার্স করলে, তাছাড়া কোন সমস্যা হয়না।

আর Ramos W17 Pro তে দেয়া হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৪.০.৪ যা ৪.১ পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব। তবে এর স্টক ফার্মওয়্যারটিই CM9 (সায়ানোজেনমড ৯) এর উপর ভিত্তি করে বানানোর কারনে স্টক রমটিই কোন সমস্যা ছাড়াই ব্যবহার করতে পারেন। এর জেলি বিন রমটিতে বেশ বড় রকমের কিছু বাগ থাকায় আমাদের পরামর্শ থাকবে আপডেট না করার জন্য।

অনেক চাইনিজ ট্যাবলেট এর অ্যান্ড্রয়েড এ অসংখ্য চাইনিজ অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায় কিন্তু এই ট্যাবটিতে কোন চাইনিজ অ্যাপ্লিকেশন নেই; কেবল চাইনিজ রামোস অ্যাপ্লিকেশন স্টোর আছে। অনেক সময় দেখা যায় চাইনিজ ট্যাবগুলোতে গুগল প্লে স্টোরই থাকেনা, কিন্তু ভয় পাবার কোন কারণ নেই, এটাতে প্লে স্টোর সহ গুগলের সবরকম সার্ভিসই আছে অর্থাৎ এটিকে পিওর অ্যান্ড্রয়েডই বলা চলে।

আরেকটি সারপ্রাইজ ছিল অডিও টেস্টে। আমাদের মাপার যন্ত্র নেই, কিন্তু এটির অডিও আউটপুট খুবই ভাল মানের। আমাদের ব্যবহার করা এক্সপেরিয়া মিনির মতই, আর এক্সপেরিয়া মিনির অডিও লাইভ উইথ ওয়াকম্যান এর কোয়ালিটিরই যেহেতু হার্ডওয়্যার এক।

ট্যাবটির আরেকটি আকর্ষনীয় ব্যাপার হলো এর মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট এবং ওটিজি সাপোর্ট। মাইক্রো ইউএসবি থাকায় আপনার মোবাইল ফোনের ডাটা ক্যাবলই এটিতে ব্যবহার করতে পারবেন, চার্জ করতেও কোন সমস্যা হবেনা। আর ট্যাবটিতে ওটিজি ক্যাবল ব্যবহার করে আপনি টেলিটক মডেমসহ প্রায় যেকোন ইউএসবি মডেম চালাতে পারবেন, তবে সেটির জন্যে আপনার ppp widget আ্যাপ্লিকেশনটি লাগবে যা প্লে স্টোরেই পাবেন। আর সাথে অবশ্যই রুট করা থাকতে হবে, সেটি আমি আরেকটি পোস্টে জানাবো তা কিভাবে করবেন। এছাড়া ওটিজি ব্যবহার করে পেনড্রাইভ, কিবোর্ড, মাউস ও গেমপ্যাডও ব্যবহার করতে পারবেন।

(আরও দেখুনঃ কীভাবে অ্যান্ড্রয়েডে এক্সটার্নাল কিবোর্ড লাগিয়ে বাংলা লিখবেন)

সমস্যা

এই ট্যাবটির একটি কমন বাগ হলো পাওয়ার না পাওয়া। অনেকদিন অব্যবহৃত রাখলে বা কোন কারণ ছাড়াই ট্যাবটি আর চালু হয়না। অনেকের কাছে এটা হার্ডওয়্যারের সমস্যা মনে হলেও আমরা অ্যান্ড্রয়েড কথন টিম বের করেছি যে এটা আসলে ফার্মওয়্যারেরই বাগ। আমাদের কাছে এই একই মডেলের দুটি ট্যাব হাতে এসেছিল। দুটিই আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ যাবৎ টেস্ট করেছি । তার মাঝে একটিতে পাওয়ার বাগ পাওয়া গেছে যেটায় অফিসিয়াল পুরানো ফার্মওয়্যারটি দিয়ে চালানো হচ্ছিলো আর অপরটি এখন আমার কাছে যেটা এখনও একটি কাস্টম রম দিয়ে চালানো হচ্ছে। মূলত স্টক ফার্মওয়্যারে সবকিছু ওভারক্লক করে রাখার কারনেই পাওয়ার চিপে সমস্যা করে যেটা কাস্টম রমটি সমাধান করে দেয়।

এই ট্যাবটির রুট করার প্রক্রিয়া জানানোর সময়ই আমি কাস্টম রমটির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আর ভয় পাবারো কিছু নেই, কারণ কাস্টম রম হলেও সেটা কিন্তু তাদের অফিসিয়াল সাইটেই দেয়া আছে। তাই কোনরকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই রমটি ফ্ল্যাশ করে নিতে পারেন।

আরেকটি সমস্যা হলো এটিতে কোন ব্লুটুথ নেই। অবশ্য এটাকে কোন সমস্যাও বলা যায় না কারণ এতে WiFi Direct এর অপশন আছে ফলে WiFi এর সাহায্যেই ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবেন সরাসরি। এছাড়া ট্যাবটিতে আর কোনরকম বাগ পাওয়া যায়নি।

সিদ্ধান্ত

সিদ্ধান্ত নেবার আগে এবার অবশ্যই প্রশ্ন আসবে এর দাম কত। আমাদের হাতে এটি আসে Gadget Gang 7 এর ক্লিয়ারেন্স সেলের সময়, তখন এর মূল্য ছিল মাত্র ১১,৭০০ টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের দর অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষে এটির দাম ১৬-১৭ হাজার টাকার মত। এই দামের ভিতরে এটি যথেষ্টই শক্তিশালী একটি ট্যাব যা আপনাকে একটি ট্যাবের সবরকম কাজ করতেই সাহায্য করবে। শক্তিশালী হার্ডওয়্যার, আপডেটেড অপারেটিং সিস্টেম ও প্রায় ৮ ঘন্টা ব্যাকআপ এবং সাথে তুলনামুলক কম দামের কারনেই এটিকে নিঃসন্দেহে এই দামের সেরা ট্যাবগুলোর একটি বলা যায়।

এখন ট্যাবটি কিনবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত আপনার। ট্যাবটি সম্পর্কে আপানাদের মতামত জানাতেও ভুলবেন না। তাছাড়া এমনই সব অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের হ্যান্ডস-অন রিভিউ ও সর্বশেষ তথ্যের জন্য ফেসবুকে লাইক করুন অ্যান্ড্রয়েড কথনের পাতায়