বহুল প্রতীক্ষিত অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ অবশেষে মুক্তি পেয়েছে আরেক প্রতীক্ষিত ডিভাইস গুগল নেক্সাস ৫-এর সঙ্গে। নেক্সাস ৪ বাজারে আনার মধ্য দিয়ে স্মার্টফোনের বাজারেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিতে সক্ষম হয় গুগলের নেক্সাস প্রোগ্রাম। আর তাই দ্বিতীয় এই ডিভাইস নিয়ে মানুষের প্রত্যাশার সীমা ছিল না বলাই যায়।
গুগল অবশেষে ৩৪৯ ডলারে প্লে স্টোরে মুক্তি দিয়েছে এলজির তৈরি নেক্সাস ৫; তবে যারা নেক্সাস ৪ ব্যবহার করছেন, তাদের কি নতুন এই ডিভাইস নেয়া উচিৎ হবে? অথবা যারা এখনও বাজারে থাকা নেক্সাস ৪ কিনবেন নাকি নতুন নেক্সাস ৫ কিনবেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন, তাদের জন্যই আজকের এই পোস্ট, যেখানে আমরা তুলে ধরবো গুগলের নেক্সাস ৪ ও নেক্সাস ৫ ডিভাইসের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়গুলো।
ডিসপ্লে
এলজির তৈরি নেক্সাস ৪-এর ডিসপ্লের আকার ৪.৭ ইঞ্চি, যার রেজুলেশন 1280×738 পিক্সেল ও পিপিআই (পিক্সেল পার ইঞ্চি) ৩২০। অন্যদিকে নেক্সাস ৫-এর ডিসপ্লের আকার ৪.৯৫ ইঞ্চি, স্ক্রিন রেজুলেশন 1920×1080 ফুল এইচডি এবঙ পিক্সেল পার ইঞ্চি ৪৪৫।
এছাড়াও নেক্সাস ৪-এর ডিসপ্লেতে ব্যবহৃত হয়েছে করনিং গরিলা গ্লাস ২ যেখানে নেক্সাস ৫-এ রয়েছে করনিং গরিলা গ্লাস ৩।
প্রসেসর
এলজি নেক্সাস ৪-এ প্রসেসর হিসেবে রয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এস৪ প্রো। তবে নতুন নেক্সাস ৫-এ দেয়া হয়েছে কোয়ালকমের আরও শক্তিশালী প্রসেসর স্ন্যাপড্রাগন ৮০০। দু’টো ফোনেই ব্যবহৃত হচ্ছে ২ গিগাবাইট র্যাম।
ক্যামেরা
ফ্রন্ট ও ব্যাক ক্যামেরা নেক্সাস ৪ ও নেক্সাস ৫-এ একই রকম। সামনে ১.৩ মেগাপিক্সেল ও পেছনে ৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেয়া হয়েছে গুগলের দু’টি ফোনেই। তবে নেক্সাস ৫-এর ক্যামেরায় নতুন ব্যবহৃত হচ্ছে OIS বা অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন। এছাড়াও নতুন সফটওয়্যার ব্যবহৃত হওয়ায় নেক্সাস ৫-এর ক্যামেরায় তোলা ছবির কোয়ালিটি নেক্সাস ৪-এর চেয়ে খানিকটা উন্নত বলেই মতামত দিয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক প্রকাশনাগুলো।
অপারেটিং সিস্টেম
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নেক্সাস ৫-এর সঙ্গে রয়েছে গুগলের সর্বশেষ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সংস্করণ, অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ কিটক্যাট। অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ কিটক্যাটে নতুন বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হলেও এই সংস্করণটি শিগগিরই নেক্সাস ৪-এও চলে আসবে। তবে কিছু কিছু সুবিধা কেবল নেক্সাস ৫-এই সীমাবদ্ধ, যার কারণে কিটক্যাটের জন্য নেক্সাস ৫ বেশি উপযোগী বলা যায়।
ব্যাটারি
নেক্সাস ৪-এর ২১০০ এমএএইচ ব্যাটারি থেকে বেড়ে নেক্সাস ৫-এ গুগল ব্যবহার করেছে ২৩০০ এমএএইচ ব্যাটারি। খুব বড় আপডেট না হলেও বাড়তি ব্যাটারির ক্ষমতা কাজে আসবে তা বলার প্রয়োজন রাখে না।
নেটওয়ার্ক
নেক্সাস ৪-এর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার যে হাতেগোণা কয়েকটি কারণ ছিল, তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল এতে ৪জি এলটিই সুবিধা না থাকা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ব্যবহারকারীদের জন্য ৪জি এলটিই না থাকা একটি বড় নেতিবাচক দিক। নেক্সাস ৫-এর মধ্য দিয়ে গুগল সেই ভুল শুধরে নিয়েছে। ফলে নেক্সাস ৪-এর ২জি ও ৩জি সুবিধা থেকে বেড়ে নেক্সাস ৫-এ রয়েছে ২জি, ৩জি ও ৪জি এলটিই সুবিধা।
এটি বাংলাদেশে বসবাসকারীদের জন্য খুব একটা কাজে কিছু না। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ৪জি এলটিই চালু হলেও ততোদিনে কেউ নেক্সাস ৫ ব্যবহার করতে থাকবেন না এমনটা ধারণা করাই হয়তো নিরাপদ!
মূল্য
বাড়তি স্ক্রিন সাইজ, বাড়তি রেজুলেশন, আরও শক্তিশালী প্রসেসর অথচ হালকা ওজনের নেক্সাস ৫-এর জন্য আপনাকে কিন্তু এক টাকাও (বা ডলারও) বেশি গুণতে হচ্ছে না! গুগল নেক্সাস ৫ ঠিক নেক্সাস ৪-এর দামেই বিক্রি করছে। নেক্সাস ৪ গুগল প্লে স্টোরে ৮ গিগাবাইট মডেল ২৯৯ ডলারে এবং ১৫ গিগাবাইট মডেল ৩৪৯ ডলারে বিক্রি করে।
নেক্সাস ৫-ও ঠিক একই দামে অর্থাৎ ১৬ গিগাবাইট মাত্র ৩৪৯ ডলারে বিক্রি করছে। বেশি স্টোরেজের প্রয়োজন বোধ করলে মাত্র ৫০ ডলার বেশি দিয়ে ৩৯৯ ডলারে ৩২ গিগাবাইট মডেলটি কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
তবে উল্লেখ্য যে, গুগল প্লে স্টোর ছাড়া বাইরের ইলেকট্রনিক্স স্টোরে নেক্সাস ফোনের দাম তুলনামূলক বেশি থাকে। আর বাংলাদেশে যেহেতু প্লে স্টোর থেকে সরাসরি ডিভাইস বিক্রি করা হয় না, সেহেতু তৃতীয় কোনো ক্রেতার কাছ থেকে কিনতে গেলে এই দামে পাওয়া নাও যেতে পারে।
তারপরও নেক্সাস ৫-এর দাম তুলনা করলে আনলকড অন্যান্য স্মার্টফোন (যেমন এলজি জি২, মটো এক্স)-এর দামের তুলনায় নেক্সাস ৫ বেশ সস্তা। তাই নেক্সাস ৫-এর চাহিদা নেক্সাস ৪-এর চেয়ে বেশি হবে, বিশেষ করে ৪জি এলটিই সুবিধা থাকার কারণে, এ ভবিষ্যত বাণী এমনিতেই করা যায়!
এক নজরে
নেক্সাস ৪ ও নেক্সাস ৫-এ যেসব বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি, সেগুলো নিয়ে উপরেও কিছু লেখা হয়নি। তবে এবার চলুন দেখে নিই নেক্সাস ৪ ও নেক্সাস ৫-এর স্পেসিফিকেশনগুলো এক নজরে।
পার্থক্যের বিষয় | নেক্সাস ৪ | নেক্সাস ৫ |
---|---|---|
প্রস্তুতকারক | LG | LG |
স্টোরেজ | 8 গিগাবাইট, 16 গিগাবাইট | 16 গিগাবাইট, 32 গিগাবাইট |
মূল্য | $299, $349 | $349, $399 |
ডিসপ্লে | 4.7-ইঞ্চি, 1280×738, 320 পিপিআই | 4.95-ইঞ্চি, 1920×1080, 445 পিপিই |
স্ক্রিন | করনিং গরিলা গ্লাস ২ | করনিং গরিলা গ্লাস ৩ |
প্রসেসর | কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এস৪ প্রো | কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮০০ |
র্যাম | ২ গিগাবাইট | ২ গিগাবাইট র্যাম |
ব্যাক ক্যামেরা | ৮ মেগাপিক্সেল | ৮ মেগাপিক্সেল ওআইএস |
ফ্রন্ট ক্যামেরা | ১.৩ মেগাপিক্সেল | ১.৩ মেগাপিক্সেল |
ব্যাটারি | ২,১০০ এমএএইচ | ২,৩০০ এমএএইচ |
নেটওয়ার্ক | ২জি/৩জি | ২জি/৩জি/৪জি এলটিই |
ব্লুটুথ | ৪.০ | ৪.০ |
এনএফসি | অ্যান্ড্রয়েড বিম | অ্যান্ড্রয়েড বিম |
কানেক্টর | মাইক্রো-ইউএসবি | মাইক্রো-ইউএসবি |
দৈর্ঘ্য | ৫.২৭-ইঞ্চি (133.9 mm) | ৫.৪৩ ইঞ্চি (137.84 mm) |
প্রস্থ | ২.৭ ইঞ্চি (68.7 mm) | ২.৭২ ইঞ্চি (69.17 mm) |
পুরুত্ব | ০.৩৫ ইঞ্চি (9.1 mm) | ০.৩৪ ইঞ্চি (8.59 mm) |
ওজন | ১৩৯ গ্রাম | ১৩০ গ্রাম |
রঙ | কালো, সাদা | কালো, সাদা |
অপারেটিং সিস্টেম | অ্যান্ড্রয়েড ৪.২ জেলি বিন | অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ কিটক্যাট |
অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪-চালিত নেক্সাস ৫ ইতোমধ্যেই প্লে স্টোরে বিক্রি শেষ বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তবে একই ঘটনা এলজি নেক্সাস ৪ প্রথম মুক্তি পাবার পরও ঘটেছিল। গুগল যদি সেই ঘটনা থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে থাকে, তাহলে শিগগিরই আবার সহজলভ্য হবে নেক্সাস ৫ ফোনটি। তবে কবে নাগাদ অন্যান্য বিক্রেতাদের কাছে নেক্সাস ৫ পৌঁছাবে সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
তবে উপরের পার্থক্যগুলো দেখে আপনি এটি কিনতে আগ্রহী কিনা বা কেনার পরিকল্পনা করছেন কি না তা কিন্তু এখনই বলা সম্ভব! তাই দেরি না করে নেক্সাস ৫ নিয়ে আপনার মন্তব্য (আপনি যদি নেক্সাস ৪ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে তো আরও আগে!) এখনই মন্তব্যের ঘরে আমাদের জানান।