অ্যাপলের আইপ্যাড মিনি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটি একইসঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী, অ্যান্ড্রয়েড প্রেমী ও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবার জন্য যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা, ১০ ইঞ্চির চেয়ে ছোট আকারের এই আইপ্যাড অ্যাপল বাজারে এনেছেই পাশাপাশি আকৃতির অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উদ্দেশ্যে। যদিও ৭-৮ ইঞ্চির অনেক কোম্পানির অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস রয়েছে, অ্যাপলের নতুন আইপ্যাড মিনির সরাসরি প্রতিযোগী হচ্ছে গুগলের নেক্সাস ৭। অ্যামাজনের কিন্ডল ফায়ারও অ্যাপলের আইপ্যাড মিনির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, তবে গুগলের মতো অতোটা বেশি নয়।
নানা গুজব ও ধারণার অবসান ঘটিয়ে অ্যাপল উন্মোচন করলো আইপ্যাড মিনি। কিন্তু কেমন প্রভাব ফেলবে এটি অ্যান্ড্রয়েডের বাজারে?
আইপ্যাড মিনির কাজ চলছে এমন গুজব ছড়ানোর পর প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে এর দাম নিয়ে। কেবল ছোট আকৃতির আইপ্যাড বানালেই হবে না, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে দামও কমাতে হবে। কেননা, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের অন্যতম সুবিধাই হচ্ছে এগুলো বেশ কম দামে সহজলভ্য। বিশেষ করে নেক্সাস ৭ ডিভাইসে মাত্র ১৯৯ ডলারে গুগল যেসব শক্তিশালী হার্ডওয়্যার দিয়েছে, তা এই ডিভাইস বাজারে আসার আগে কল্পনাও করা যায়নি।
আইপ্যাড মিনির গুজব কিছুটা সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যে রূপান্তর হওয়ার পর শোনা যায় এর দাম সম্পর্কে তথ্য। ধারণা করা হয়, ২৫০ থেকে ২৮০ ডলারে বিক্রি করা হবে আইপ্যাড মিনি। ২৮০ ডলারে আইপ্যাড বিক্রি হলে অ্যান্ড্রয়েড বাজারটা সত্যিই কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পড়ে যেত। ১৯৯ ডলার দিয়ে নেক্সাস ৭ বা এ জাতীয় অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস না কিনে মানুষ অ্যাপলের আইপ্যাডই কিনতো মাত্র ৮০ ডলার বাড়িয়ে। কেননা, অ্যাপল ডিভাইস সব মানুষ কেবল এর সুবিধা বিবেচনা করেই কেনেন না। একটি বড় অংশই বন্ধুমহলে দেখানোর জন্য ও অ্যাপলের প্রতি আসক্তি থেকে অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইস কিনে থাকেন। “আমার একটি নেক্সাস ৭ আছে” এর চেয়ে “আমার একটি আইপ্যাড আছে” বাক্যটি যে বেশি ভাবের সৃষ্টি করে তা কমবেশি সবাই জানেন।
আরও পড়ুনঃ যে ৮টি কারণে অ্যান্ড্রয়েড আইফোনের চেয়ে ভালো
তবে কেবল ভাবের জন্যই আইপ্যাড বা আইফোন কেনেন, এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। কিছু কিছু দিক দিয়ে অ্যাপলের পণ্য অদ্বিতীয় এ কথা মেনে নিতেই হবে। কিন্তু ২৮০ ডলার এমনকি ৩০০ ডলারেও অ্যাপল ডিভাইস পাওয়া গেলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা নেক্সাস ৭ বা এ জাতীয় ৭ ইঞ্চি আকারে ট্যাবলেট ডিভাইস কেনার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতেন।
কিন্তু নতুন আইপ্যাড মিনির দাম শুরু হয়েছে ৩২৯ ডলার থেকে। অনেকেই ভাবতে পারেন, ৩০০ ডলার দিয়ে কিনতে পারলে ২৯ ডলারের জন্য ক্রেতা ফিরে যাবেন না। কিন্তু হিসেবটা শুরু হবে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নেক্সাস ৭-এর ১৯৯ ডলার মূল্য থেকে। ১৯৯ ডলার থেকে ৫০-৮০ ডলার বাড়িয়ে আইপ্যাড অনেকেই নিতে চাইবেন। কিন্তু বাজেটের মধ্যে ট্যাবলেট ডিভাইস কিনতে গেলে ১২৮ ডলার অঙ্কটা নিতান্ত কম না।
প্রসঙ্গত, আইপ্যাড মিনির পর্দার আকৃতি হচ্ছে ৭.৯ ইঞ্চি যা নেক্সাস ৭-এর তুলনায় ০.৯ ইঞ্চি বড়। কিন্তু ডিসপ্লে রেজুলেশন হচ্ছে ১০২৪X৭৬৮ পিক্সেল যা নেক্সাস ৭-এর তুলনায় যথেষ্টই কম। এতে ব্যবহৃত হয়েছে পুরনো যুগের এ৫ চিপ (যেখানে নেক্সাস ৭-এ রয়েছে যুগান্তকারী এনভিডিয়া টেগরা ৩), ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও ইন্টারনেটের জন্য ৪জি সুবিধা সম্বলিত আলাদা ইউনিট।
তাই স্বাভাবিকভাবে বলা যায়, আইপ্যাড মিনি অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেটের সঙ্গে এখনই সরাসরি প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে না। অন্তত বাজেট নিয়ে ট্যাবলেট কিনতে বের হলে আইপ্যাড মিনি আইপ্যাডের মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। তবে কেউ যদি টাকার চিন্তা না করেন বরং আইপ্যাড মিনি নাকি ৭ ইঞ্চি অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট এই দ্বিধায় পড়েন, তাহলে তাদেরকে বিবেচনা করতে হবে বেশ কয়েকটি বিষয়। তবে সেগুলো নিয়ে পরে কোনো একদিন অ্যান্ড্রয়েড কথনে পোস্ট দেয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েড কথনের ফেসবুক পেজের সঙ্গে থাকুক সর্বশেষ আপডেট পেতে।
কেবল দামের বিচারে অ্যান্ড্রয়েড চালিত ডিভাইস বেছে নেবেন নাকি অ্যাপলের আইপ্যাড মিনি বেছে নেবেন? হার্ডওয়্যারের বিচারে প্রশ্ন করলাম না কারণ তার আগে হার্ডওয়্যারের তুলনামূলক চিত্র নিয়ে পোস্ট প্রকাশ করতে হবে যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।