ঘুমানোর আগে কয়েক মিনিটের ফেসবুক আপনার শরীরের যা ক্ষতি করছে

ঘুমোনোর আগে স্মার্টফোন

ঘুমের আগে বই পড়ার অভ্যাস মানুষের অনেক আগের। এখনও হয়তো অনেকেই ঘুমের আগে বই পড়ে থাকেন। কিন্তু এই যুগের বেশিরভাগ মানুষই সেই বই পড়ে থাকেন তাদের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ই-রিডার (যেমন কিন্ডল) ডিভাইসে। সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের আগে এসব ডিভাইসে বই পড়া কিংবা ওয়েব ব্রাউজিংয়ের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল কর্তৃক পরিচালিত ও প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে আপনি কী করছেন তা মূখ্য নয়, বরং এসব কৃত্রিম ব্যাকলাইটের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকাই আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল তাদের গবেষণায় ১২জন স্বেচ্ছাসেবকের ঘুমের বিভিন্ন প্যাটার্ন দুই সপ্তাহ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।

গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকরা রাত ঠিক দশটায় ঘুমানোর আগে প্রতিদিন একটি করে বই পড়েছেন। এর মধ্যে পাঁচদিন তারা বই পড়েছেন আইপ্যাডে ও পাঁচদিন পড়েছেন ছাপানো বই। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, কৃত্রিমভাবে আলোকিত ডিভাইসে বই পড়ার ফলে স্বেচ্ছাসেবকরা গড়ে ১০ মিনিট দেরিতে ঘুমাচ্ছেন। এছাড়াও ডিভাইসে বই পড়ার কারণে তারা গড়ে ১০ মিনিট কম REM Sleep পাচ্ছেন।

অনেকেরই মনে হতে পারে ১০ মিনিটে আর এমন কী হবে। তবে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ব্লাড স্যাম্পল পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, তাদের শরীরের বডি ক্লক (সার্কাডিয়ান রিদম) প্রায় দেড় ঘণ্টা করে পিছিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, সাধারণ মানুষের উপর প্রতিদিন ঘুমানোর বিভিন্ন ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকার প্রভাব ভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে তাই বলে এই প্রভাব মোটেই উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। গবেষণায় অংশ নেয়া এক বিজ্ঞানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি লিখেছে, বিভিন্ন ই-রেডার, আইপ্যাড, ট্যাবলেট কিংবা স্মার্টফোনগুলোর কৃত্রিম আলো সরাসরি ব্যবহারকারীর চোখে পড়ছে। অন্যদিকে ছাপানো বই কিংবা অরিজিনাল কিন্ডল (যার কোনো ব্যাকলাইট নেই) পড়ার সময় রুমের অন্যান্য আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে পাঠক বই পড়ছেন, যার ফলে এর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে না।

কৃত্রিম এই আলো সরাসরি চোখের উপর পড়ে বলেই ঘুমের উপর এবং আমাদের শরীরের বডি ক্লকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। মানুষের শরীর হাজার বছর ধরেই কেবল প্রাকৃতিক আলোর প্রতি সহনশীল হয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কৃত্রিম আলোর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় অসুস্থতাও বেড়েছে বহুগুণে। প্রতিনিয়ত ঘুমের অভাব হলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগেরও ঝুঁকি থাকে বলে জানিয়েছেন গবেষণায় অংশ নেয়া এক বিজ্ঞানী।

স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ঘুমের আগে ওয়েব ব্রাউজিং বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহার করা এখন প্রায় সবারই নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ঘুমোনোর আগে কয়েক মিনিটের এই মোবাইল বা ট্যাবলেট ব্যবহার দীর্ঘমেয়াদী যেসব রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, সেসব কথা ক’জন ভাবেন?