অ্যাপল-স্যামসাং মামলায় স্যামসাং-এর শোচনীয় পরাজয়

apple samsungপ্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে অ্যাপল ও স্যামসাং-এর মর্ধবর্তী আইনি যুদ্ধ। বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানি অ্যাপল স্মার্টফোন শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলেকট্রনিক সামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে প্রায় এক বছর আগে পেটেন্ট চুরির অভিযোগ আনে। সম্প্রতি সেই বিশাল আইনি লড়াইয়ের আপাতত সমাপ্তি হলো স্যামসাং-এর শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে।

ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে রায় ঘোষণার দিন বিচারকরা রায় দিয়েছেন, অ্যাপলের দাবি করা প্রায় সবগুলো প্রযুক্তি ও আইফোনের দু’টি মডেলের ডিজাইন নকল করার দায়ে অ্যাপল দায়ী। এ জন্য স্যামসাংকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১.০৫ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি) ডলার দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে স্যামসাংও তাদের কিছু ওয়্যারলেস প্রযুক্তি অবৈধভাবে অ্যাপল ব্যবহার করছে বলে দাবি করলেও বিচারকদের দৃষ্টিতে অ্যাপল কোনো পেটেন্টই ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ব্যবহার করেনি। যার অর্থ হচ্ছে, স্যামসাং ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক ডলারও পাবে না, উপরন্তু তাদের অভিযুক্ত ডিভাইসগুলো থেকে অ্যাপলের পেটেন্ট করা প্রযুক্তি ও ডিজাইন সরিয়ে ফেলতে হবে।

আইফোনের সামনের দিকের ডিজাইনের একটি পেটেন্ট, হোমস্ক্রিনের পেটেন্ট, ট্রেড ড্রেস-এর পেটেন্টসহ বিভিন্ন পেটেন্ট করা সামগ্রী স্যামসাং “নকল” করে ব্যবহার করছে বলেই রায় দিয়েছেন আদালত। সাধারণত অ্যাপল তাদের পণ্যের সবকিছুরই পেটেন্ট করে রাখে যাতে করে অন্য কোনো কোম্পানি তাদের আইডিয়া চুরি করতে না পারে। তাই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অ্যাপলের আইফোন বা আইপ্যাড কীভাবে দেখানো হবে, যাকে বলে ট্রেড ড্রেস, তাও পেটেন্ট করে রেখেছিল অ্যাপল। কিন্তু স্যামসাং তাদের কিছু ডিভাইসের বিজ্ঞাপনে তাদের পণ্য অনেকটা অ্যাপলের পণ্যের মতো করেই উপস্থাপন করেছে যা পেটেন্ট ভঙ্গের দায়ে পড়েছে।

samsung apple design

লক্ষ লক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও আগ্রহীদের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার ইতি টেনে ক্যালিফোর্নিয়ার আলাদত এই রায় ঘোষণা করলো। এতে স্যামসাং ও একইসঙ্গে অ্যান্ড্রয়েডভক্তরা বেশ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে অ্যাপল-স্যামসাং আইনি যুদ্ধের বিষয়টি খুবই জটিল। অ্যাপল জিতলে যেমন পুরো বাজারে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে, ঠিক তেমনি স্যামসাং জিতলে ভোক্তাদের সামনে আরও বিভিন্ন চয়েস বাড়বে ঠিকই কিন্তু ইউনিক বা নতুন উদ্ভাবনে কোম্পানিগুলো খুব একটা সময় দেবে না বা অন্যরা সহজেই নকল করতে পারবে ভেবে উদ্ভাবনও ধীরগতির হয়ে যাবে। এবার অ্যাপল জিতে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে স্যামসাংকে ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ যেসব প্রযুক্তি (সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার) অ্যাপলের পেটেন্টের নকল হিসেবে পাওয়া গেছে সেগুলো তাদের মুছে ফেলতে হবে। নতুন করে তৈরি করতে হবে সফটওয়্যার। এতে পুরো অ্যান্ড্রয়েড জগতও কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্যামসাং-এর সামনে এখনো আপিল করার দরজা খোলা আছে। আর স্যামসাং নিঃসন্দেহে আপিল করবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপিলের উপর খুব একটা আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই। পেটেন্ট সংক্রান্ত আপিলে সাধারণত মূল রায়ে পরিবর্তন আসে না এবং আপিল নাকচ করা হয়। আর এই ক্ষেত্রে বিচারকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, অ্যাপলের পেটেন্টগুলো বৈধ এবং স্যামসাংই এগুলো অবৈধভাবে ব্যবহার করছে।

অ্যাপল-স্যামসাং যুদ্ধের ফলাফল কী হতে পারে এবং ভোক্তার উপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণী পোস্ট শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। আপডেট পেতে অ্যান্ড্রয়েড কথনের সঙ্গেই থাকুন