প্রথম প্লে স্টোর থেকে কোনো গেম কেনার অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশ পাইরেসির দেশ। শুনতে যতই খারাপ লাগুক, সফটওয়্যার পাইরেসির দিক দিয়ে বাংলাদেশ তালিকার বেশ উপরের দিকেই আছে। আর থাকবেই না বা কেন, এ দেশে হাজার হাজার টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কেনার সামর্থ্য খুব কম মানুষেরই আছে। আর সামর্থ্য থাকলেও ৫০ টাকায় সিডি পাওয়া গেলে ৫০০০ টাকা খরচ করে সফটওয়্যার কেনা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ মনে হয় না। আর এমন পরিস্থিতির ব্যতিক্রম আমিও নই। বলতে বাধা নেই, এ পর্যন্ত যত সফটওয়্যার আর গেমস দোকান থেকে কিনেছি, সবই পাইরেটেড। অর্থাৎ, আমি টাকা দিয়ে কিনেছি ঠিকই, কিন্তু গেমের ডেভেলপার সেখান থেকে এক পয়সাও পাননি।

গুগল প্লে

দু’সপ্তাহ আগে গুগল প্লে স্টোরে ২৫ বিলিয়ন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড উপলক্ষ্যে ৭৫% ছাড়ের খবর প্রকাশিত হয় অ্যান্ড্রয়েড কথনে। আর দশজনের মতোই আমিও বিভিন্ন পেইড গেমস বা অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ক্র্যাকড এপিকে ফাইল ডাউনলোড করে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সেদিন গুগল প্লে স্টোরে ঘোরাঘুরির সময় মনে হলো, এতো কম দামে এসব অ্যাপ্লিকেশন যখন কেনাই যায়, তখন কী দরকার ডেভেলপারদের কষ্ট করে তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশন বা গেমটি অবৈধভাবে ডাউনলোড করার? হ্যাঁ, ফটোশপ বা আফটার ইফেক্টস-এর মতো ৫০০-৬০০ ডলারের সফটওয়্যার কেনার সামর্থ্য নেই, কিন্তু প্লে স্টোরের ২৫ সেন্ট, ৫০ সেন্ট, ৯৯ সেন্ট ইত্যাদি দামের অ্যাপ্লিকেশনগুলো কেনার সামর্থ্য তো আছে। ছাড়ে ২৫ সেন্টের অ্যাপ্লিকেশন বা গেমগুলোর দাম পড়েছে মাত্র ২০ টাকা করে। আর ছাড় ছাড়া অন্যান্য সময় অ্যাসফাল্টের মতো গেমগুলো বিক্রি হয় মাত্র ০.৯৯ ডলারে যা বাংলাদেশি টাকায় ৮০ টাকা। তো সেদিন মনে হলো, মাত্র ২৫ সেন্টেই যখন বিক্রি হচ্ছে, কিনেই দেখি কেমন লাগে।

প্রথম কেনা

আগেই বলেছি, টাকা দিয়ে সিডি কিনলেও সেগুলো পাইরেটেড ছিল। তা সফটওয়্যারই হোক আর গেমসই হোক। তাই গুগল প্লে থেকে কেনা গেমটিই ছিল আমার কেনা প্রথম গেম যা সত্যি সত্যিই “কিনেছি!” ছাড় উপলক্ষ্যে মাত্র ২৫ সেন্টেই এয়ার কন্ট্রোল নামের বেশ মজাদার একটি গেম কিনে ফেললাম।

এয়ার কন্ট্রোল যেই ধরনের গেম, ঠিক একই ধরনের একটি গেম ব্রাউজারে খেলেছিলাম অনেক আগে। তাই জানতাম এই গেমটা কিনলে টাকাটা জলে যাবে না; যায়ও নি। এতোটাই অ্যাডিক্টিভ গেম এই এয়ার কন্ট্রোল, যে একবার শুরু করলে ছাড়তেই পারবেন না। তবে এয়ার কন্ট্রোল নিয়ে রিভিউ অন্য কোনোদিন। এখন আসুন দেখি কিছু স্ক্রিনশট।

আপনারা জানেন যে, গুগল প্লে থেকে কিছু কিনতে হলে গুগল ওয়ালেট নামে গুগলের একটি সেবা ব্যবহার করতে হয়। গুগল ওয়ালেটে আপনি আপনার ভিসা, মাস্টারকার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেসের লোগো-সম্বলিত ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড অ্যাড করে নিতে পারবেন। ফলে প্রতিবার কোনো কিছু কেনার সময় আপনাকে বারবার কার্ডের ইনফরমেশন দিতে হবে না। বাংলাদেশে অনেকেরই ভিসা বা মাস্টারকার্ডের কার্ড নেই, আমারও থাকতো না, কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ওডেস্কে কাজ করার সুবাদে “পেওনিয়ার” নামের একটি কোম্পানি মাস্টারকার্ড (ডেবিট) ইস্যু করেছে। এটি দিয়েই আমি যাবতীয় ডোমেইন ও অনলাইন পেমেন্টের কাজ করি। তাই ভাবলাম, এটা দিয়েই গুগল ওয়ালেট সেটআপ করি।

গুগল ওয়ালেট

বড় করে দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন।

গুগল ওয়ালেট সেটআপ করা বেশ সহজ ছিল। ওয়ালেট সেটআপ করার পরপরই প্লে স্টোর থেকে এয়ার কন্ট্রোল গেমের গুগল প্লে পেজে গেলাম। ছাড় থাকায় দাম দেখাচ্ছিল ২৫ সেন্ট। (এখন দাম হয়ে গেছে ৩.১৯ ডলার) তাই দেরি না করে কিনে ফেললাম। কম্পিউটার থেকে কেনার পর মোবাইলে ইন্টারনেট চালু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গেমটি ডাউনলোড হয়ে গেল।

গুগল প্লে স্টোর

বড় করে দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন।

প্রথমবার অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করার পর লাইসেন্স ভ্যালিডেশন চাইলো। ইন্টারনেট চালু করা ছিল বিধায় নিজে নিজেই লাইসেন্স ভ্যালিডেট হয়ে গেল। এরপর গেমটি খেলার পালা!

গুগল প্লে স্টোর

তবে এয়ার কন্ট্রোল গেম নিয়ে রিভিউ পরে কোনো একদিন দিবো। গেমটি এতোটাই মজার যে, এটি নিয়ে আলাদা একটি পোস্ট হওয়ার দাবি রাখে।

শেষ কথা

গেম কিনে খেলার মধ্যে একটি বড় সুবিধা আছে। তা হলো এপিকে ফাইলের জন্য খোঁজাখুজি না করা আর বারবার ফাইল পিসি থেকে মোবাইলে ট্রান্সফার করার দরকার না পড়া। অবশ্য কিছু টাকা বাঁচাতে গেলে কিছু ঝামেলা তো পোহাতে হয়ই। তবুও যাদের সামর্থ্য বা সুবিধা আছে, বিশেষ করে যাদের পেওনিয়ার কার্ড আছে, তাদের আমি অনুরোধ করবো কমদামী এই অ্যাপ্লিকেশন বা গেমগুলো সম্ভব হলে কিনে খেলতে। এগুলো আপনার সামর্থের বাইরে নয়। আপনি যেমন আয়ের জন্য কাজ করছেন, কেউ একজন তেমনি আয়ের জন্যই গেমগুলো তৈরি করেছেন। সম্ভব হলে তাদের সেই প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না করাটাই বোধহয় ভালো। 🙂

গুগল প্লে স্টোর থেকে কখনও কোনো অ্যাপ্লিকেশন বা গেমস কিনেছেন? যদি কার্ড থাকে আপনার, তাহলে কি কিনতেন? মন্তব্যের ঘরে আপনার মতামত জানান।