হ্যান্ডস-অন রিভিউ – Xiaomi Mi পাওয়ার ব্যাংক

স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের নানা সুযোগ সুবিধার কারণে এগুলো অনেক আগেই আমাদের প্রতিদিনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে। যদিও এখনও এগুলো কম্পিউটারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি, তবুও দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার চেয়ে খানিকটা বেশিই ক্ষমতা রাখে এখনকার বিভিন্ন মোবাইল ও ট্যাবলেট ডিভাইস।

তবে নতুন নতুন সব সুযোগ-সুবিধার কিছু নেতিবাচক দিকই রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাটারি ব্যাকআপ। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই যখন-তখন ডিভাইসের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়া কিংবা ফোন ব্যবহারের চেয়ে চার্জে লাগিয়ে রাখা রেখেই বেশি সময় কাটানোর মতো নানাবিধ অভিজ্ঞতা রয়েছে।

হাই-এন্ড ফোন ও হাতেগোণা কয়েকটি ফোন ছাড়া প্রায় সব ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপই তুলনামূলক কম সময়ের হয়ে থাকে। বিশেষ করে স্বল্পমূল্য থেকে মধ্যম-মানের ফোনগুলোতে ১৫০০-২১০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারিই বেশি দেখা যায়, যা স্মার্টফোনের ইন্টারনেট নির্ভর যাবতীয় অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যথেষ্ট নয়।

Xiaomi Mi Power Bank

তবে সুখবর হলো, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি পথ খোলা রয়েছে। যদিও সে পথে আপনাকে বাড়তি আরেকটি ডিভাইস সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হবে, তবুও ফোনের চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার চেয়ে তো ভালো! এতক্ষণে সবাই নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, পাওয়ার ব্যাংকই হতে পারে সবচেয়ে সুলভ ও সহজ সমাধান।

বাজারে বিভিন্ন দাম ও ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া যায়। তবে এগুলো টেকসই হবে কি না তা আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন। যে কারণে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড Xiaomi-এর পাওয়ার ব্যাংক হতে পারে একটি সহজ সমাধান। চীনের এই কোম্পানি তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছে। আর তাই পাওয়ার ব্যাংক কিনতে চাইলে তাদের Mi Power Bank অনেকেরই হতে পারে প্রথম পছন্দ।

চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক বিশ্ববিখ্যাত এই কোম্পানির পাওয়ার ব্যাংক।

(This review was also published on Android Kothon English)

Xiaomi Mi পাওয়ার ব্যাংক

Xiaomi Mi Power Bank

পাওয়ার ব্যাংকের ব্যবহার খুব সাধারণ। আপনি প্রথমে এটি কম্পিউটার বা সরাসরি বিদ্যুত সংযোগে চার্জ করে রাখবেন। পরবর্তীতে যে কোনো সময় আপনার মোবাইল বা ট্যাবলেট ডিভাইসে চার্জ কমে আসলে ডিভাইসের চার্জারের সঙ্গে পাওয়ার ব্যাংক সংযুক্ত করলেই এর মাধ্যমে আপনার ফোন বা ট্যাবলেট চার্জ হতে থাকবে।

Xiaomi Mi পাওয়ার ব্যাংকটির ক্যাপাসিটি ১০,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার। বুঝতেই পারছেন, আপনার ফোন যদি ২১০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির হয়ে থাকে, তাহলে এই পাওয়ার ব্যাংক ফুল চার্জ থাকলে এটি দিয়ে আপনার ফোন ৫ বার খালি ব্যাটারি থেকে ফুল চার্জ করা যাবে। যেহেতু ব্যাটারি পুরোপুরি খালি হওয়ার আগেই সবাই চার্জে দিয়ে থাকেন, সেহেতু ধরে নেয়া যায় ৫ বারের বেশিও ফোন চার্জ দেয়া সম্ভব হতে পারে। তবে এতো লম্বা সময়ের মাঝে আপনি হয়তো পাওয়ার ব্যাংকটিই আবার রিচার্জ করে নিতে পারবেন।

Xiaomi Mi পাওয়ার ব্যাংকের প্যাকেজিংই বেশ মনোমুগ্ধকর। খুবই সিম্পল সাদা একটি বাক্সে এটি থাকে যেই বাক্সে কেবল Mi-এর লোগো ছাড়া বড় অক্ষরে কিছুই লেখা নেই। বাক্স থেকেই এই ডিভাইসে আপনি অ্যাপলের প্যাকেজিং ও ডিজাইনের সঙ্গে বেশ অনেকখানি সামঞ্জস্য ধরতে পারবেন।

Xiaomi Mi Power Bank

প্যাকেট খুললে এর ভেতরে আরেকটি বাক্সের মধ্যে মূল পাওয়ার ব্যাংক রাখা থাকে, যার ফলে বেরিয়ে থাকা কাগজের বাড়তি অংশ ধরে ডিভাইসটি বের করা বেশ সহজ হয়ে যায়।

প্যাকেজিংয়ের ভেতরে পাবেন মূল পাওয়ার ব্যাংক, একটি ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল যেটি পুরোপুরি চাইনিজ হওয়ায় আপনার কোনো কাজে আসবে না, এবং একটি খুবই ছোট মাইক্রোইউএসবি টু ইউএসবি ক্যাবল।

মূল পাওয়ার ব্যাংকটি বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়। তবে আমাদের রিভিউ ইউনিট ছিল সিলভার রঙের। এখানেও অনেকে রঙ ও ফিনিশিং-এর সঙ্গে অ্যাপলের হার্ডওয়্যার (ম্যাকবুক, ম্যাক মিনি, ইত্যাদি)-এর যথেষ্ট মিল পাবেন।

mi4macmini

পাওয়ার ব্যাংকটি রাউন্ডেড কর্নার ডিজাইনের, যে কারণে এটি ধরতে বেশ আরাম। যদিও এর ফিনশিং-এর কারণে শীতকালে এটি হিমশীতল হয়ে থাকে, তবে সেটাকে এই ডিভাইসের খারাপ দিক হিসেবে হয়তো ধরা যাবে না! প্যাকেজিং-এর মতোও পাওয়ার ব্যাংকটির এক পাশে কেবল Mi লোগো ও অন্য পাশে ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেয়া রয়েছে। মিনিমাল এই ডিজাইনের কারণে এটি হঠাৎ দূর থেকে দেখলে অনেকেই অ্যাপলের কোনো ডিভাইস বলে ভুল করতে পারেন।

ডিভাইসটির নিচে ক্যাপাসিটিসহ অন্যান্য তথ্য রয়েছে, আর উপরের দিকে রয়েছে মূল পোর্ট। এতে একটি পাওয়ার বাটন রয়েছে যা ক্লিক করার মাধ্যমে আপনি ব্যাংকটিতে কতটুকু চার্জ রয়েছে তা দেখতে পারবেন। বলা বাহুল্য, এই সুবিধাটি হুবহু ম্যাকবুক প্রো ও এয়ারের কয়েকটি মডেল থেকে নেয়া হয়েছে। অ্যাপলের সেসব কম্পিউটার চালু না করেই বাম দিকের একটি বাটন প্রেস করে দেখে নেয়া যেত কতটুকু ব্যাটারি চার্জ রয়েছে।

Xiaomi Mi Power Bank

Xiaomi Mi পাওয়ার ব্যাংক ঠিক একই পদ্ধতি কাজে লাগিয়েছে। ফলে আপনি যে কোনো সময় পাওয়ার বাটনে প্রেস করে এক নজরে দেখে নিতে পারবেন কতটুকু পাওয়ার রয়েছে আপনার পাওয়ার ব্যাংকে। এছাড়াও এটি চার্জে দেয়ার সময়ও আপনি এই ৪টি লাইটের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন কতটুকু চার্জ হয়েছে। এগুলোর একটি জ্বলতে ও নিভতে থাকে, ফলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন পুরো চার্জ হতে আর কতটুকু বাকি।

একইভাবে পাওয়ার ব্যাংক থেকে মোবাইল চার্জ করতে গেলেও লাইটগুলো বিশেষভাবে কাজ করে। তখন একটির বদলে সবগুলো লাইট জ্বলতে-নিভতে থাকে। ধীরে ধীরে কতগুলো লাইট জ্বলবে তা কমতে থাকে এবং আপনি তা দেখে বুঝে নিতে পারবেন কতখানি পাওয়ার অবশিষ্ট রয়েছে।

Xiaomi Mi Power Bank

আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো এর পোর্ট। একটি ইউএসবি ও একটি মাইক্রোইউএসবি পোর্ট দেয়া হয়েছে এতে। সঙ্গে রয়েছে ছোট একটি মাইক্রোইউএসবি টু ইউএসবি ক্যাবল। আপনি চাইলে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সঙ্গে ক্যাবলটি কানেক্ট করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ল্যাপটপের ইউএসবি পোর্ট ও পাওয়ার ব্যাংকের মাইক্রোইউএসবি পোর্ট ব্যবহার করতে হবে।

আবার ফোন চার্জের ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটা উল্টে যাবে। আপনার ফোনে যাবে মাইক্রোইউএসবি এন্ড এবং পাওয়ার ব্যাংকের ইউএসবি পোর্টে ঢুকবে ফুল ইউএসবি ক্যাবল। এতে করে কেবল একটি ক্যাবলের মাধ্যমেই আপনি পাওয়ার ব্যাংক চার্জ ও ফোন চার্জ দু’টো কাজই করতে পারবেন। তবে পাওয়ার ব্যাংকটির সঙ্গে থাকা ক্যাবলটি নিতান্তই ছোট। এটি ব্যাংক থেকে ফোন চার্জ করার জন্য সুবিধাজনক হলেও কম্পিউটার থেকে চার্জ করা হয়তো সুবিধাজনক হবে না।

Xiaomi Mi Power Bank

অবশ্য আপনি চাইলে ওয়াল চার্জারের সঙ্গেও পাওয়ার ব্যাংকের মাইক্রোইউএসবি পোর্টের সংযোগ দিয়ে পাওয়ার ব্যাংকটি চার্জ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার বর্তমান ফোনের চার্জার দিয়েই কাজ চলে যাবে।

Xiaomi কোম্পানির এই পাওয়ার ব্যাংকটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়, রুচিশীল এবং খুবই সাদাসিধে। এটি কতক্ষণ ব্যাকআপ দেয় এমন প্রশ্ন হয়তো অনেকেই করতে পারেন। তাদের বলছি, আপনার ফোনের ব্যাটারি কতক্ষণ ব্যাকআপ দেয় এটা যেমন আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে, এটিই অনেকটা তেমনই আপনার ফোন কতবার কত পার্সেন্ট করে চার্জ নিতে পারে তার উপর নির্ভর করে। তবে পাওয়ার ব্যাংক পুরোপুরি খালি হয়ে গেলে ফুল চার্জ নিতে বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে থাকে।

চীনের জনপ্রিয় কোম্পানির বিভিন্ন ফোনের পাশাপাশি এই পাওয়ার ব্যাংকও দেশে কিনতে পারবেন সরাসরি গ্যাজেট গ্যাং ৭-এর কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানটি ১০৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের এই পাওয়ার ব্যাংকের দাম রাখছে ২,৭০০ টাকা।

পাওয়ার ব্যাংক এখনকার স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি কাজের জিনিস। যদিও Xiaomi Mi পাওয়ার ব্যাংকটি বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেই কাজ করবে (মাইক্রোইউএসবি চার্জার পোর্ট থাকা যে কোনো ডিভাইস), তবে এখনকার অধিকাংশ ফোন ও ট্যাবলেটের চার্জিং পোর্টই মাইক্রোইউএসবি। তাই আপনার যদি পাওয়ার ব্যাংকের প্রয়োজন হয়, তাহলে আগে দেখে নিন আপনার ডিভাইসের চার্জিং পোর্ট মাইক্রোইউএসবি কি না। যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে অবশ্যই জনপ্রিয় কোম্পানিটির এই পাওয়ার ব্যাংক হতে পারে আপনার দৈনন্দিন গ্যাজেট ব্যবহারের (আরেক) সঙ্গী!

(This review was also published on Android Kothon English)