গেমিংয়ের জন্য এনভিডিয়ার নতুন শিল্ড ট্যাবলেট (২০১৪)

এনভিডিয়া শিল্ড ট্যাবলেট

স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে গেম বলতে কিছুদিন আগেও অ্যাংরি বার্ডস আর হিল ক্লাইম্ব রেসিংই প্রধান ছিলো। কাজের ফাঁকে বা রাস্তার জ্যামে সময় কাটানোর বাইরে সেসব গেম খেলার আর কোনও কারণ ছিলোনা। তবে সেটি বদলাতে খুব বেশী দেরি হয়নি। পিসি বা কনসোলের সমকক্ষ বা কনসোল বা পিসির গেমের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ চলে আসার পর সেটিও একটি মূলধারার গেমিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যেতে পারে অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট ও আইপ্যাডের কারণে বহনযোগ্য কনসোল যেমন পিএস ভিটা বা উই-ইউ তাদের বাজার অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে।

তবে যারা হার্ডকোর গেমার তারা কখনোই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে গেমিং মেশিন হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। প্রথমে OUYA চেষ্টা করেছিল অ্যান্ড্রয়েড গেমিং কনসোল বানানোর জন্য কিন্তু সেটি তেমন সারা ফেলতে পারেনি। এরপর এনভিডিয়া তাদের টেগরা শিল্ড দিয়ে আবারো চেষ্টা করে কিছুটা সফল হয়েছিল – তার হাত ধরেই আজকে তারা নতুন ট্যাবলেট নিয়ে এসেছে। ট্যাবলেটটির নাম আরেকটু বদলে রাখলে খারাপ হতোনা – এর আগের কনসোলের নাম শিল্ড, এবারের ট্যাবলেটের নাম ও রাখা হয়েছে শিল্ড। একটির কথা বললে অন্যটির সাথে গুলিয়ে ফেলাটা আশ্চর্য নয়। তবে দুটি ডিভাইসের মিল নামেই শেষ।

এনভিডিয়া শিল্ড ট্যাবলেট

শিল্ড ট্যাবলেটটি দেখে অন্যান্য ট্যাবলেটের সাথে তেমন অমিল খুঁজে পাওয়া যাবেনা – সামনে ৮ ইঞ্চি ফুল এইচডি ডিসপ্লে, কালো ধাতব বডি – অন্যান্য ট্যাবলেটের মতই গড়ন। প্রথম অমিল চোখে পড়বে হচ্ছে এর সামনে বসানো স্পিকার – সাধারণত ট্যাবলেট চিকন করার জন্য একটি স্পিকার বসানো হয় পেছনে, আর স্টেরিও স্পিকার তো মেলা ভার। তবে গেমিং এ ভালো স্টেরিও স্পিকার লাগবে সে কথা ভেবেই এনভিডিয়া এতে ডিসপ্লের দুপাশে স্পিকার দিয়েছে, অনেকটা এইচটিসি ওয়ান এর মতো। স্পিকারগুলোতে গম্ভীর ব্যাস সাউন্ডের জন্য ব্যাস পোর্ট ও দেয়া হয়েছে, ট্যাবলেটে যা এই প্রথম। সামনে আরও রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যা এনভিডিয়া বলছে মূলত গেম স্ট্রিমিং করার সময় ধারাভাষ্য দেয়ার জন্য। তবে পেছনে ক্যামেরা নেই।

এনভিডিয়া ট্যাবটির ডিজাইনে প্রসেসরের উৎপন্ন তাপ দ্রুত বের করে দেয়ার ওপর বেশী জোর দিয়েছে। তাদের কথা হচ্ছে অন্যান্য ডিভাইসে শক্তিশালী চিপ থাকলেও সেগুলো অতিরিক্ত গরম হয়ে যাবার ফলে টানা অনেকক্ষণ পূর্ণ শক্তিতে কাজ করতে পারেনা। এর ফলে বেশ কিছুক্ষন গেম খেললে ডিভাইস স্লো হয়ে যায়। এনভিডিয়া দাবী করেছে শিল্ড ট্যাবে এই সমস্যা হবেনা।

ট্যাবলেটের গেইমের ব্যাপারে আরও একটি অভিযোগ রয়েছে, তা হচ্ছে টাচ-স্ক্রিনের কন্ট্রোল কন্ট্রোলারের মত সুবিধাজনক নয়। এজন্যেই ট্যাবলেটের সাথে তারা ওয়্যারলেস কন্ট্রোলার ও ছেড়েছে, তবে সেটি আলাদা ভাবে কিনতে হবে। ওয়্যারলেস কন্ট্রোলার ল্যাগ করে বলে অনেক গেমার ব্যবহার করতে চান না তাই এনভিডিয়া তাদের কন্ট্রোলারে ব্লুটুথের বদলে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করেছে, ফলে রেসপন্স টাইম ২০ মিলিসেকেন্ড থেকে কমে ১০ মিলিসেকেন্ডে দাঁড়িয়েছে। কন্ট্রোলার ও টাচস্ক্রীন ছাড়াও ট্যাবলেটটিতে স্টাইলাস ব্যবহার করা যাবে। ছবি আঁকার মত ভারী কাজ করা না গেলেও সেটি যথেষ্ট সেনসিটিভ বলে জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা।

এনভিডিয়া

শিল্ড ট্যাবটিকে গেমিং ট্যাব বলার মূল কারণ হচ্ছে এর চিপসেটটি। ট্যাবটিতে ব্যবহৃত টেগরা কে-১ চিপসেটটির কথা নতুন করে বলতে গেলে এ লেখা আর শেষ হবেনা – ছোট করে বলতে গেলে শুরুতেই বলতে হয় এর প্রসেসর কর্টেক্স এ-১৫, সেখানে নতুনত্ব না থাকলেও এর জিপিউ কেপলার আর্কিটেকচারের, যা এনভিডিয়ার জিফোর্স টাইটান ও তার পরবর্তী সকল জিপিউ থেকে সরাসরি তুলে আনা। ১৯২টি কোরের এই জিপিউটি সরাসরি ডেস্কটপ গেমের গ্রাফিক্স রেন্ডার করতে সক্ষম। সফটওয়্যারের দৃষ্টি থেকে বললে এটি ট্যাবটি সরাসরি ডাইরেক্ট-এক্স ১১+ ও ওপেন-জিএল ৪+ সমর্থন করে। ফলে গেম ডেভেলাপাররা চাইলেই তাদের নতুন গেমগুলোকে সহজেই এই ট্যাবে চালাতে পারবেন। এই মুহূর্তে বাজারে আর কোনও চিপসেট নেই যা টেগরা কে-১ কে জিপিউর দিক থেকে টেক্কা দিতে পারে। এই চিপটির অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য বেশ কিছু গেমে শুধুমাত্র এই ট্যাবেই চলবে এমন গ্রাফিক্স দেয়া হয়েছে। ভালভ তাদের তুমূল জনপ্রিয় গেম হাফ-লাইফ ২ ও পোর্টাল কেবল এই ট্যাবটির জন্য পোর্ট করেছে। শুধু যে পারফরম্যঅন্সের দিকেই এনভিডিয়া নজর দিয়েছে তাই নয়, ট্যাবটি অন্তত ১০ ঘন্টা টানা ব্যবহার করা যাবে বলে তারা জানিয়েছে।

ট্যাবলেটটির গেমিং শুধু অ্যান্ড্রয়েডেই সীমাবদ্ধ নয়, ব্যবহারকারীরা তাদের এনভিডিয়া জিপিউ সমৃদ্ধ পিসি থেকে ফুল এইচডি-৬০ এফপিএস এ গেম ট্যাবলেটে স্ট্রিম করতে পারবেন। স্ট্রিমিং করা গেম ট্যাবলেটের মাধ্যমে টিভিতেও খেলা যাবে ঝামেলা ছাড়াই।

ট্যাবটি দুটি সংস্করণে পাওয়া যাবে, শুধু ওয়াইফাই ও এলটিই। এসডি কার্ড স্লট ছাড়াও ইন্টার্নাল স্টোরেজ দেয়া হয়েছে ১৬ গিগাবাইট তবে সকল গেম এসডি কার্ডে ইন্সটল করা যাবে। ট্যাবটির মূল্য ধরা হয়েছে ২৯৯ ডলার থেকে শুরু, সাথে কন্ট্রোলার কিনতে হলে গুনতে হবে আরও ৩৯ ডলার। তবে এর পরও বাজারের অনেক ট্যাবের চেয়েই দাম অনেক কম। এখন দেখার বিষয় গেমারদের মাঝে কেমন সাড়া ফেলে এই ট্যাবলেটটি।

This post also appears on Android Kothon English.