যেভাবে অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাটারি ব্যাকআপ নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলবেন

ফিচার ফোন থেকে অ্যান্ড্রয়েডে চলে আসার পর প্রথম যেই জিনিসটা আমরা মিস করতে শুরু করি তা নিঃসন্দেহে ব্যাটারি ব্যাকআপ। যেখানে সাধারণত অন্যান্য ফিচার ফোনে ৩ থেকে ৪ দিন এমনকি তারও বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়, সেখানে দামি অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো দুইদিন টানা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতেই হিমশিম খেয়ে যায়। অনেক দামি বা হাই-এন্ড স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারি লাইফ তুলনামূলক বেশি হলেও আমরা যারা স্বল্প বাজেটে লো থেকে মিড-রেঞ্জের স্মার্টফোন কিনি, তারাই ব্যাটারির খুব শর্ট ব্যাকআপজনিত সমস্যার সম্মুখীন হই।

আসুন জেনে নেয়া যাক মাত্র কয়েকটি টিপস কাজে লাগিয়ে যেভাবে আপনি আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারেন।

ডিসপ্লে ব্রাইটনেস

যে কোনো সময় সেটিংস থেকে ব্যাটারি ইউসেজে পরীক্ষা করলে দেখবেন প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যাটারিই ফোনের পর্দা বা ডিসপ্লে টানতে থাকে। আপনার ফোনের বাড়তি রেজুলেশনের জন্যই এটি অন্যান্য ফিচার ফোনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাটারি পাওয়ার খরচ করে। ডিসপ্লে তো আর সারাক্ষণ বন্ধ করে রাখতে পারবেন না, তাই সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হবে এর ব্রাইটনেস বা উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখা।

ফোনের ডিসপ্লে ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখলে অনেকের কাছেই দেখতে ভালো না লাগলেও এটা আপনার ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়িয়ে দেবে অনেকখানি। সবচেয়ে ভালো হয় যতোটা সম্ভব ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখলে। ৫০%-৬০% এর দিকে ডিসপ্লে ব্রাইটনেস রাখলে পরদিনই টের পাবেন আপনার স্মার্টফোন কত কম ব্যাটারি খরচ করছে।

ডিসপ্লে ব্রাইটনেস সেটিংস থেকে ডিসপ্লে অপশনেই কমাতে পারবেন।

ডেটা ট্রান্সফার অফ

অ্যান্ড্রয়েড ব্যাটারি

সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো সেটে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় থেকে বাড়িয়ে ৪৮+ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ আনা সম্ভব হয়েছে ডেটা ট্রাফিক টানা চালু না রেখে।

বিদেশের ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটা গলি-ঘুপচিতেই ওয়াই-ফাই হটস্পট রয়েছে তাই বলা হয় ওয়াই-ফাই যত কম চালানো যাবে ততোই ব্যাটারি খরচ কমবে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সময়ই সেলুলার নেটওয়ার্ক বা জিপিআরএস/এজ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। কম্পিউটারের মতোই স্মার্টফোন সারাক্ষণই ডেটা ট্রান্সফার করতে থাকে বলে সাধারণত ১ গিগাবাইট বা এরকম প্যাকেজ কিনলে সাশ্রয়ী হয়। কিন্তু এভাবে কিন্তু আপনি প্রচুর ব্যাটারিও খরচ করছেন।

আমরা সবাই চাই নতুন স্মার্টফোন সবসময় আমাকে অনলাইন রাখুক। বন্ধু ফেসবুকে মেসেজ দেয়ামাত্রই তা পুশ নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানান দিক। ইমেইল আসা মাত্রই মোবাইল অ্যালার্ট দিক। কিন্তু এসবের জন্য আপনি যে ব্যাটারি খরচ করছেন, তা কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত?

বাসায় থাকলে হয়তো প্রতিদিন ব্যাটারি রিচার্জ করতে পারবেন। কিন্তু যদি বাইরে ঘোরাঘুরি করেন, তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হবে ডেটা ট্রাফিক অফ করে দেয়া। এর মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিচ্ছেন। ফলে মোবাইলের ব্যাটারি ব্যাকআপ বেড়ে যাবে নাটকীয়ভাবে। যখন ফেসবুক বা ইমেইল চেক করার দরকার হবে, কেবল মোডটি অন করে নিলেই হবে। আপনি মূহুর্তেই কানেক্টেড হয়ে যাবেন।

ডেটা ট্রাফিক অফ করতে সেটিংস থেকে Wireless & Networks > Mobile Networks > Data Traffic Enabled-টি থেকে টিকচিহ্ন তুলে দিন। এছাড়াও হোম স্ক্রিনেও উইজেট হিসেবে ওয়ান টাচ অন/অফ করার জন্য ডেটা ট্রাফিক আইকনটি যোগ করে নিন।

জিপিএস অফ

জিপিএস অফ রাখলে আপনার ব্যাটারি ব্যাকআপ বেড়ে যাবে বহুগুণে। খেয়াল করলে দেখবেন, জিপিএস সেটিংসের নিচেই লেখা রয়েছে যে এটি আপনার ফোনের ব্যাটারি টানবে প্রচুর। এটি বন্ধ করে রাখলে আপনি অনেক ব্যাটারি পাওয়ার বাঁচাতে পারবেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, জিপিএস অফ রেখেও আপনি লোকেশন-শেয়ারিং সুবিধাগুলো পাবেন। স্মার্টফোনের এ-জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি যেই এলাকার মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছেন, সেই টাওয়ারের ঠিকানা অনুযায়ী আপনার অবস্থান বের করা যায়। তাই চেক-ইন বা জিওট্যাগ করার জন্য জিপিএস চালু রাখতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

এ-জিপিএস রয়েছে এমন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সেটিংস থেকে Location & Security > Use Wireless Networks-এ টিকচিহ্ন দিন।

উপরের তিনটি সাধারণ উপায় অবলম্বন করে আপনি অবিশ্বাস্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারবেন আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ। গুগল প্লে স্টোরে ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানোর জন্য অনেক অ্যাপ্লিকেশন থাকলেও নিজে সতর্ক ও সচেতন থাকলে এমনিতেই ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়িয়ে তোলা যায়।