৭ মিলিয়ন ডলার নিয়ে সায়ানোজেনমড-এর লক্ষ্য ৩য় অবস্থান

সিএম

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা সায়ানোজেনমড বা সংক্ষেপে সিএম-এর নাম শুনে থাকবেন। নতুন-পুরাতন প্রায় সব ফোনেই সায়ানোজেনমডের রম ব্যবহার করে থাকেন বিশ্বব্যাপী ৮০ লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকা এই ব্যবহারকারীদের নিয়ে এবার স্মার্টফোন বাজারে তৃতীয় অবস্থান জয় করার লক্ষ্যে কাজে নামছে সায়ানোজেনমড। আর এই যাত্রায় তাদের হাতে রয়েছে ৭০ লক্ষ ডলার।

সায়ানোজেনমড কী?

সায়ানোজেনমড মূলত বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য অ্যান্ড্রয়েডের কাস্টম রম তৈরি করে থাকে। প্রথমদিকে অপ্রয়োজনীয় সব অ্যাপ্লিকেশন, এমনকি গুগলের অ্যাপ্লিকেশনসহ, মুছে দিয়ে এই সিএম রিলিজ করা হতো। ফলে ব্যবহারকারীরা পেতেন ল্যাগবিহীন ও দারুণ এক পারফরম্যান্স। অতিরিক্ত অ্যাপ্লিকেশন না থাকার কারণে ব্যাটারি ব্যাকআপ তো বাড়তোই, সেই সঙ্গে ফোনের ইন্টারনাল মেমোরিই অনেকখানি খালি থাকতো।

সাম্প্রতিক সময়ে সায়ানোজেনমড নিজেদের অ্যাপ্লিকেশনও তাদের রম-এর সঙ্গে জুড়ে দিতে শুরু করে। ফাইল ম্যানেজার, ক্যামেরা অ্যাপ ইত্যাদি সহজেই ব্যবহারকারীদের মন জয় করে নেয়। কেবল তাই নয়, সায়ানোজেনমড-এর আইডিয়া পরবর্তীতে মূল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমেও যোগ করেছে গুগল।

সিএম-এর জনপ্রিয়তা

নতুন নতুন ডিভাইস বাজারে আসার ফলে ক্যারিয়ার ও ফোন প্রস্তুতকারকরা পুরনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে নতুন আপডেট দেয়া বন্ধ করে দেয়। স্বভাবতঃই ব্যবসায়িক স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট সময় পর একটি ফোনে আর নতুন অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ দেয়া হয় না। কিন্তু সায়ানোজেনমড ব্যবহার করার মাধ্যমে ২০১০-১১ কিংবা তারও অনেক আগের ফোনেও ২০১৩-তে আসা অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ডিভাইসের হার্ডওয়্যার দুর্বল হলেও সায়ানোজেনমড খুবই কম রিসোর্সে ভালোমতো কাজ করতে পারে বলে পুরনো হার্ডওয়্যারেও এটি ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

আর এ কারণেই এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। কেবল পুরনো ফোনেই নয়, নতুন ফোনেও অনেকে সিএম ব্যবহার করতে শুরু করেন। কেননা, স্টক অ্যান্ড্রয়েড ছাড়া অন্যান্য রমে বাড়তি প্রচুর অ্যাপ্লিকেশন থাকে বলে অ্যান্ড্রয়েডের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে। স্টক অ্যান্ড্রয়েডেও গুগলের ‘ম্যাপস’-এর মতো অ্যাপ্লিকেশনের কারণে পারফরম্যান্স বিঘ্নিত হয়। কিন্তু সায়ানোজেনমড রমগুলোতে গুগলের জিঅ্যাপস ডিফল্ট অবস্থায় দেয়া থাকে না। এ কারণে এর পারফরম্যান্স ক্ষেত্রবিশেষে স্টক অ্যান্ড্রয়েডের চেয়েও ভালো হয়ে থাকে।

সায়ানোজেনমড

এসব সমস্যা এড়াতেই সিএম ইন্সটল করা বেশ ঝামেলার হলেও ব্যবহারকারীরা সেসব ঝামেলা পোহাতে রাজি থাকেন। এখানে ঝামেলা বলা হচ্ছে এই অর্থে যে, সাধারণত ডিভাইস ক্যারিয়ার দ্বারা বুটলোডার লক করা থাকে। সেই বুটলোডার আনলক করা, রুট করা, কাস্টম রম ফ্ল্যাশ করা ইত্যাদি প্রযুক্তি নিয়ে খুব একটা জ্ঞান রাখেন না এমন মানুষের কাছে খানিকটা কষ্টসাধ্য বটে।

কিন্তু তবুও জনপ্রিয়তা থেমে নেই। এক সময় পিটসবার্গের এক ডেভেলপারের সাইড প্রজেক্ট হিসেবে চালু হওয়া এই সায়ানোজেনমডে আজ কাজ করছেন ১৭ জন ফুলটাইম ডেভেলপার। আর এর সিইও কির্ট ম্যাকমাস্টারের মতে, এর ব্যবহারকারী সংখ্যা এখন ৮০ লক্ষাধিক। বলা বাহুল্য, এই হিসেব কেবল তাদের যারা সিএম-কে তাদের ইন্সটলেশন সংক্রান্ত তথ্য পাঠিয়েছেন। কির্টের বিশ্বাস, মূল সংখ্যাটা এরচেয়েই দুই-তিন গুণ বেশি।

লক্ষ্য: তৃতীয় অবস্থান

সায়ানোজেনমড-এর লক্ষ্য ব্ল্যাকবেরি, উইন্ডোজ ফোন ও অন্যান্যদের পেছনে ফেলে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস-এর পর তৃতীয় অবস্থান ধরা। অনেকে ভাবতে পারেন সিএম তো অ্যান্ড্রয়েডই, সেক্ষেত্রে বলা যায়, অ্যামাজনের কিন্ডলও একরকম অ্যান্ড্রয়েড। এগুলোকে বলা হয় অ্যান্ড্রয়েড ফর্ক যেগুলো গুগল সার্টিফায়েড নয়। তবে সিএম-কে পুরোপুরি গুগল থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে কি না সে ব্যাপারে এখনও কোনো কিছু জানানো হয়নি। গুগল এ ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। এই বিষয়ে তাই গুগলের মন্তব্যের অপেক্ষায় আছেন অনেকে।

সিএম-এর প্রধানের মতে, তার লক্ষ্য সিএম-এর মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েডের এমন একটি সংস্করণ তৈরি করা যার দ্বারা মানুষ কিছু কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। তার মতে, কোম্পানিগুলোর কাছে স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম কেবলই ক্যাশ রেজিস্টারের মতো টাকা তৈরির যন্ত্র। “কিন্তু আমরা চাই এগুলোকে আসল প্রোডাক্টিভিটির জন্য উপযোগী করে তুলতে। আর সে লক্ষ্যেই সায়ানোজেনমডকে আমরা সমৃদ্ধ করে চলেছি,” বলেন কির্ট। তবে তাদের এই পরিকল্পনার ফলে ফার্মওয়্যারে কোনো লকডাউন করা হবে না। বরং বিনামূল্যেই তাদের ফার্মওয়্যার পাওয়া যাবে।

তবে সেক্ষেত্রে সিএম নিজে আয় করবে কী করে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা থাকলেও খোলাসা করতে রাজি হয়নি তারা। “যখন আপনার কাছে এতো সংখ্যক ব্যবহারকারী থাকেন, তখন আয়-উপার্জনের একটা না একটা রাস্তা বের করা যায়ই!”

লক্ষ্য বহুদূর

যেখানে মাইক্রোসফট হাজার হাজার ডলার ব্যয় করেও ব্যবহারকারীদের খুব একটা উইন্ডোজ ফোনমুখী করতে পারছে না, সেখানে সিএম-এর ইতোমধ্যেই রয়েছে অনেক ব্যবহারকারী। কিন্তু তাই বলে তৃতীয় অবস্থানে আসা এতোটাও সহজ হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগল প্লে থেকে অ্যাংরি বার্ডস ডাউনলোড করে ইন্সটল করে ফেলা যেমন সহজ, ঠিক তেমনি সিএম ডাউনলোড করে ইন্সটল করা সহজ করে তুলতে হবে। আর তখনই সব শ্রেণীর ব্যবহারকারীরা এর প্রতি আগ্রহী হবেন।

সিএম-এর মতে, বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেয়া কঠিন শোনালেও যখন ব্যবহারকারীরা কী চায় তার প্রতি খেয়াল রেখে কিছু করা হয়, তখন সেখানে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়ে ওঠে।

সায়ানোজেনমড সম্পর্কে আপনার কী মত? আপনার কি ধারণা আসলেই উইন্ডোজ ও ব্ল্যাকবেরিকে টপকে তৃতীয় অবস্থানে যেতে পারবে সায়ানোজেনমড? মন্তব্যের ঘরে জানান আমাদের।