অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের হাইজ্যাকের অপচেষ্টা মাইক্রোসফটের!

কিছুদিন আগে আমরা মাইক্রোসফট কীভাবে গুগলের বিরুদ্ধে হাস্যকর মার্কেটিং-এ নেমেছিল তা নিয়ে পোস্ট প্রকাশ করেছি। কেবল আমরাই না, সারাবিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোও এই খবর প্রকাশ করেছে এবং মাইক্রোসফট যথেষ্ট হাসির পাত্র হয়েছে। কিন্তু সেখানেই থেমে যায়নি মাইক্রোসফট। সম্প্রতি আরেক দফা গুগলের প্রতি আক্রমণ চালিয়ে বসেছে মাইক্রোসফট। এবার একেবারে ঠাণ্ডা মাথায় ব্যবহারকারীদের অ্যান্ড্রয়েড থেকে হাইজ্যাক করার পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে মাইক্রোসফট!

সম্প্রতি মাইক্রোসফট “গুগল প্লে স্টোরে” একটি অ্যাপ্লিকেশন রিলিজ করেছে। অ্যাপ্লিকেশনটির নাম, সুইচ টু উইন্ডোজ ফোন। অ্যাপ্লিকেশনটির কাজ হলো, এটি ইন্সটল করার পর আপনার ফোনে থাকা সব অ্যাপ্লিকেশন স্ক্যান করে এটি এবং কত শতাংশ অ্যাপ্লিকেশন উইন্ডোজ ফোনেও রয়েছে তা জানায়। আপনি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টে লগইন করলে এই অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপ্লিকেশনগুলোর তালিকা মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টে সংরক্ষণ করে রাখবে।

এরপর আপনার উইন্ডোজ ফোনে গিয়ে একটি কমপ্যানিয়ন অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করতে হবে যেটি এই তালিকা অনুযায়ী উইন্ডোজ ফোনের জন্য যেসব অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে অথবা যেই বিকল্প অ্যাপ্লিকেশনগুলো রয়েছে তার তালিকা দেখাবে। শুনতে বেশ চতুর এক চাল বলে মনে হলেও আসলে ততোটা নয়।

দি ভার্জের এক লেখক জানিয়েছেন, তার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ৮৭ শতাংশ অ্যাপ্লিকেশনই উইন্ডোজে রয়েছে এমন তথ্য দেখিয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশনটি। কিন্তু তিনি যখন উইন্ডোজ ফোন দিয়ে সেসব অ্যাপ্লিকেশনের খোঁজ করেছেন (তিন লিখতে ভুল করেননি যে, উইন্ডোজ ফোনে সেই অ্যাপ্লিকেশনটি কয়েকবার ক্র্যাশ করে তারপর কাজ করেছে!), তখন উইন্ডোজ তাদের অ্যাপ স্টোর থেকে এমন সব অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছে, যেগুলো পুরোপুরি এক তো নয়-ই, বরং অনেক ক্ষেত্রে মূল অ্যাপ্লিকেশনের বিকল্প হিসেবেও ধরা যায় না।  অর্থাৎ, মাইক্রোসফট যেই আশা দেখিয়ে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের উইন্ডোজে নেয়ার পরিকল্পনা করছে, সেই আশায় নিরাশ হতে পারেন প্রায় সবাই।

ব্যবহারকারীরা সাধারণত স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে নিজেকে অনেকটাই জড়িয়ে ফেলেন। একই অ্যাপ্লিকেশন হলে হয়তো প্লাটফর্ম পরিবর্তন করা যায়, কেননা কেবল লগইন করলেই নিজের সব সেটিংস চলে আসবে, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অ্যাপ্লিকেশনে অনেকেই সঙ্গত কারণেই যেতে চাইবেন না।

মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ফোনের জন্য যথেষ্ট অ্যাপ্লিকেশন হওয়ার আগেই এ ধরনের কাজ শুরু করায় ব্যবহারকারীদের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি উইন্ডোজ ফোনে কী কী কম্প্যাটিবল অ্যাপ্লিকেশন আছে তার কোনো তালিকা দেখায় না, কেবল পার্সেন্টেজ দেখায়। কেউ যদি বিশ্বাস করে উইন্ডোজে স্থানান্তরিত হনও, তিনি পরবর্তীতে উইন্ডোজ স্টোরের বিকল্প সেসব অ্যাপ্লিকেশন দেখে হতাশই হবেন।

মাইক্রোসফট এক অর্থে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের হাইজ্যাক করে নেয়ার পরিকল্পনা করলেও এ যাত্রা তা সফল হচ্ছে না বলেই মনে হয়। উল্টো প্লে স্টোরে অ্যাপ্লিকেশন রিলিজ করে সেই প্লে স্টোর তো বটেই, পুরো অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্ম থেকে ব্যবহারকারী সরিয়ে নেয়ার এই চেষ্টায় অনেকের কাছেই হাসির পাত্র হয়েছে মাইক্রোসফট।

আর হ্যাঁ, এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্লে স্টোরে অ্যাপ্লিকেশনটির রেটিং ছিল ১.৬/৫।