অ্যাপ রিভিউ ও টিউটোরিয়ালঃ Pimp My Rom

আপনারা যারা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে প্রায় সবাই রুট সম্পর্কে কম বেশি জানেন। অনেকে হয়তো ইতোমধ্যেই রুট করেও ফেলেছেন আপনার ডিভাইস। রুট করলে আপনি ফোন এর অ্যাডমিন প্রিভিলেজ পেয়ে যাবেন, অর্থাৎ ফোন এর সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে আপনার হাতে। রুট সম্পর্কে আরও জানতে এই পোস্টটি দেখুন।

রুট করার পরই আমরা বিভিন্ন অ্যাপ ইন্সটল করি যেগুলা রুট ছাড়া চলে না। এছাড়াও অ্যাডভান্সড ব্যবহারকারীর রম ইন্সটল করি, আরও নানা ধরনের কাস্টোমাইজেশন করে থাকি। আজ এখানে আমি একটা অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করব, যেটার নাম হচ্ছে Pimp my Rom. এই অ্যাপটি অনেক জনপ্রিয়, কারণ? কারণ এতে অনেক ধরনের কাস্টোমাইজেশন এর ফিচার আছে আপনার ফোন এর জন্য। অল ইন ওয়ান টাইপের টুল বলতে পারেন।

অ্যাপটি ইন্সটল এর পরই অনেকে হিমশিম খেয়ে যায় কোনটা দিয়ে কী করা যায়, কী করলে কী হবে। তাই আজ আমি এই অ্যাপ এর বিভিন্ন অপশন নিয়ে আলোচনা করব।

অ্যাপটি মুলত আইসক্রিম স্যান্ডউইচ আর জেলি বিন ইউজারদের জন্য। তবুও জিঞ্জারব্রেড ইউজাররাও ট্রাই করতে পারেন, কিছু কিছু ফিচার কাজ নাও করতে পারে।

ডাউনলোড পিম্প মাই রম

আপনার রুট করা ফোন থেকে ডাউনলোড করুন পিম্প মাই রম নিচের লিংক থেকে।

গুগল প্লে স্টোর লিংকঃ পিম্প মাই রম 

ইন্সটল এর পর এটি একটি রেসকিউ প্যাকেজ ডাউনলোড করতে বলবে, করুন। কেননা ভুল করে কোন সমস্যা হলে বা বুটলুপ হলে ঐ প্যাকেজ CWM দিয়ে ফ্ল্যাশ দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এখন আপনার ফোন টুইক করার পালাঃ

প্রথমে পাবেন Tools সেকশন। এর প্রথমে আছে Rescue Package যেটি আগেই ডাউনলোড করা হয়েছে। এরপর আছেঃ

Universal Init.d Support

এখানে আপনার ফোন Universal Init.d Support করে কিনা সেটা চেক করে অ্যাক্টিভ করতে পারবেন। এটি অ্যাক্টিভ করলে যতগুলো টুইক করবেন তার প্রতিটির স্ক্রিপ্ট প্রতি বুট-এ অটোমেটিক চালু হবে।

Pimp my CPU

এটি থেকে আপনি সিপিইউ স্পিড ঠিক করতে পারবেন। Current Max এ সর্বোচ্চ কত Mhz স্পীড ইউজ করবে আর Current Min এ সর্বনিন্ম কত Mhz স্পিড ইউজ করবে সেটা ঠিক করে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন।

মনে রাখবেন, সিপিইউ স্পিড যত বেশি দিবেন, ফোন তত স্মুথলি কাজ করবে আর ব্যাটারি বেশি ইউজ করবে। আর সিপিইউ স্পীড যত কম হবে ফোন তত ল্যাগ করবে আর ব্যাটারি ব্যাকআপ তত বেশি পাবেন। তাই মাঝামাঝি একটা স্পিড সিলেক্ট করতে পারেন।

আর Governor হচ্ছে সিপিইউ কেমন আচরণ করবে, স্টক রম এ ondemand, performance আর powersave এর তিনটি Governor থাকে। আমি ondemand ব্যবহারের পরামর্শ দিবো। আর I/O Scheduler cfg দিবেন।

এর আরেক ট্যাবে ভোল্টেজ কন্ট্রোল অপশন আছে যেটি দিয়ে ভোল্টেজ কন্ট্রোল করতে পারবেন। অবশ্য বেশিরভাগ স্টক রমে এটি কাজ করে না।

Density Changer

এটি দিয়ে ফোন এর ডেনসিটি পরিবর্তন করতে পারবেন ৪ টি সোজা ধাপে। ডেনসিটি অর্থ ফোন এর ডিপিআই। চেঞ্জ করে টেস্ট করে দেখতে পারেন, তবে কখনও ডেনসিটি খুব কম বা খুব বেশি সেট করবেন না, এতে ফোন এর সবকিছু অনেক ছোট বা অনেক বড় হয়ে যাবে এতে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না আর।

Entropy Generator

অ্যান্ড্রয়েড আপনার ফোন এর UUID Genarator, SSID জেনারেট করতে এনট্রপি জেনারেট করে থাকে। এনট্রপি বেশি হলে ফোন বেশি ল্যাগ করে। এটি চেঞ্জ করার কোন দরকার নেই আমার মতে।

Dual Boot Animation

এটি দেখেই বুঝতে পেরেছেন কি জিনিস, ফোন এর বুট এনিমেশন পরিবর্তন করতে পারবেন। এই অপশন থেকেই কয়েকটি বুট এনিমেশন ডাউনলোড করে ইউজ করতে পারবেন। আবার দুটি বুট এনিমেশনও চালু রাখতে পারবেন এখান থেকে।

Lock Apps in Ram

ইউটরেন্ট

ডাউনলোডের সময় যেন অটো কিল না হয় সে জন্য এই টরেন্ট ডাউনলোডারটি লক করে রাখা হচ্ছে।

আপনার ফোন এর র‍্যাম কম? নাকি কোন কিছু ডাউনলোড এ দিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলে সকালে উঠে দেখছেন সেই অ্যাপ অনেক আগেই ক্লোজ হয়ে গেছে? এর কারণ, অ্যান্ড্রয়েড একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর র‌্যাম ফাঁকা করার জন্য কিছু অ্যাপ্লিকেশন কিল করে ফেলে। এই ফিচার ব্যবহার করে আপনি এটি ঠেকাতে পারবেন। যে অ্যাপটি লক করবেন সেটি সিলেক্ট করলে সেটি র‍্যামে লক হয়ে যাবে, ফলে অ্যান্ড্রয়েড চেষ্টা করলেও কিল করতে পারবে না।

GPS Config

যাদের ফোনে জিপিএস-এ লোকেশন লক করতে বেশি সময় নেয় তাদের জন্য এটি অনেক কার্যকরী। এটি দিয়ে মহাদেশ আর দেশ সিলেক্ট করে সেই দেশের কনফিগ ডাউনলোড করে অ্যাপ্লাই হয়ে যাবে যাতে জিপিএস লক এর সময় শুধু ঐ দেশ থেকে লক করে, এতে অনেক তাড়াতাড়ি লক হয় লোকেশন।

লক করতে ঐ মেনুতে গিয়ে প্রথমে Continents থেকে Asia সিলেক্ট করবেন আর Countries থেকে Bangladesh সিলেক্ট করে একদম নিচে গিয়ে অ্যাপ্লাই করবেন।

Device Hidden Menu

এই অপশনটির ব্যবহার সহজ। এটি দিয়ে ফোন এর হিডেন মেনু ব্রাউজ করতে পারবেন।

Tools ট্যাব টুইকিং শেষ। এবার শুরু করা যাক Tweaks ট্যাব। এর প্রথমে পাবেনঃ

Network and Internet

এই অপশন থেকে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট এর বিভিন্ন টুইক করতে পারবেন।এখান থেকে যে যে অপশন টিক দিবেনঃ

  • Wifi Connect Speed Tweak
  • Avoid Time Wait
  • IPv4 Tweaks

এগুলো টিক দিয়ে Apply Selected tweaks করবেন।

Multitasking

এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। এর প্রথমে পাবেন OOM (Out of memory) groupings. অর্থ একটা নির্দিষ্ট পরিমান অ্যাপ ওপেন করার পর অ্যাপ অটো কিল করা শুরু করবে ফোন। কি পরিমান অ্যাপ ওপেন করতে পারবেন সেটি এখান থেকে সিলেক্ট করতে পারবেন। এটি করলে যা হবেঃ

Low: লো দিলে ফোন কম অ্যাপ একসাথে ওপেন করতে পারবে। র‍্যাম কম ইউজ করবে আর ব্যাটারি ব্যাকআপ ভাল পাবেন।

Medium: এটি দিলে ফোন মোটামুটি ভাল পরিমান অ্যাপ একসাথে ওপেন করতে পারবে। র‍্যাম আর ব্যাটারি মাঝারীভাবে ইউজ করবে।

High: এটি দিলে ফোন অনেক অ্যাপ একসাথে কোন ঝামেলা ছাড়াই ওপেন করতে পারবে। কিন্তু অনেক র‍্যাম ইউজ করবে আর ব্যাটারি ব্যাকআপ কমে যাবে।

এরপর পাবেন Minfree Values. অর্থাৎ, ফোন সবসময় একটা নির্দিষ্ট পরিমান র‍্যাম ফাঁকা রাখবে। র‍্যাম সেই নির্দিষ্ট কোঠা পার হলেই আস্তে আস্তে অ্যাপ ক্লোজ হওয়া শুরু হবে। এটা করলে যা হবেঃ

Low: কম অ্যাপ চালু থাকবে। র‍্যাম আর ব্যাটারি কম ইউজ হবে।

Medium: মোটামুটি পরিমান অ্যাপ ওপেন থাকবে, ব্যাটারি আর র‍্যাম মোটামুটি ইউজ করবে।

High: অনেক অ্যাপ ওপেন থাকবে কিন্তু অনেক ব্যাটারি আর র‍্যাম খাবে।

আমার মতে দুটি অপশন Medium করে রাখা ভাল। আপনি হেভি ইউজার হলে Minfree Values হাই করতে পারেন। তবে আপনার প্রয়োজন আর চাহিদা অনুসারে ঠিক করবেন এটি। এরপর আছে zRam Compression. এটি ফোন এ ভার্চুয়ালি র‍্যাম তৈরি করে।

64/128MB ভার্চুয়াল র‍্যাম যুক্ত করতে পারবেন। ১২৮মেগাবাইট সিলেক্ট করবেন।

এরপরে Adjust the kernel’s behaviour with the above settings আর Adjust the Dalvik VM’s behavior with the above settings এ দুটি টিক দিয়ে একদম নিচে থেকে টুইকগুলা অ্যাপ্লাই করে বেরিয়ে আসুন।

Dalvik VM

এখান থেকে ডালভিক ভার্চুয়াল মেশিন এর মেমরি সাইজ আর বিভিন্ন টুইক করতে পারবেন। VM Heap Size যেটা দেয়া আছে সেটি রাখবেন, ফোন এর ইন্টারনাল মেমরি বেশি হলে বাড়াতে পারেন। বাকি কোনকিছুতে হাত দেয়ার দরকার নেই। আর একদম নিচ থেকে Dalvik JNI Error Cheking আর Dalvik Bytecode Varification এই দুটি On করবেন।

Kernel

এখান থেকে আপনি আপনার ফোন এর কার্নেল টুইক করতে পারবেন।

প্রথমে দেখুন লিস্ট এ আপনার অ্যাক্টিভ করা Governor আছে কিনা, না থাকলে বেরিয়ে আসুন আর থাকলে সেটিতে টিক দিয়ে নিচে নামুন। নিচ থেকে IO Schedulers অপশন থেকে Disable I/O Stats আর Scheduler Sysctl Tweak টিক দিন।

এরকম নিচে Disable Sleepers অপশন থেকে Disable Normalized Sleepers, Disable Gentle Fair Sleepers আর Disable New Fair Sleepers তিনটিতেই টিক দিয়ে নিচ থেকে অ্যাপ্লাই টুইকস করুন।

Android Features

এখান থেকে বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ফিচার চালু করতে পারবেন। যে যে অপশনগুলা চালু করবেনঃ

  • Hardware acceleration
  • Force GPU rendering
  • 16-bit Transparency
  • Kernel JNI Error Checking.

Telephony

এখান থেকে কলিং এর বিভিন্ন টুইক করতে পারবেন। এখানে বেশি কিছু করার নেই। একদম শেষে AMR Wideband অন করবেন শুধু। এতে ভয়েস কল কোয়ালিটি বাড়বে। তবে যদি কারো ফোনে কথা বলার সময় প্রক্সিমিটি সেন্সর দেরিতে কাজ করে, অর্থাৎ কানের কাছে ফোন নেয়ার পরও স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যায় তারা Proximity Sensor Delay অপশন থেকে ওটার ভ্যালু একদম কম করে দিবেন।

Miscellaneous Tweaks

এখানে অন্যান্য টুইক রয়েছে। এখান থেকে যা যা টিক দিবেন তা হচ্ছেঃ
Init.d & Sysctl Tweaks অপশন থেকেঃ

  • External SD Card I/O Tweaks,
  • Zipalign all APK’s at each boot (এতে বুট টাইম বাড়বে কিন্তু বুট হওয়ার পর অ্যাপ অনেক দ্রুত চালু হবে, ইচ্ছে করলে টিক নাও দিতে পারেন)।

Build.prop Tweaks থেকেঃ

  • Camera Quality Tweaks,
  • JPG Images Quality Tweaks,
  • Flashed Tweaks,
  • Quick Power-On.

এরপর অ্যাপ্লাই করে বেরিয়ে আসুন। 🙂

Tweaks ট্যাব থেকে টুইকিং শেষ। 😀 আর কাজ বেশি বাকি নেই।

এরপর পাবেন Apps & Mods ট্যাব। এই ট্যাবে বিভিন্ন অ্যাপ এর মড পাবেন যেটি আপনার ফোন এ ইউজ করতে পারবেন।

  • Pimp My Beats©: Beats Installer এর চাইতে এটি ভাল। ফোন এর অডিও কোয়ালিটি বাড়াবে।
  • BRAVIA® Engine 2: এটি দিয়ে সনির বিখ্যাত ব্রাভিয়া ইঞ্জিন ২ ডাউনলোড করে আপনার ফোন এ ইন্সটল করতে পারবেন।
  • Sony xLoud® & Clearaudio+: এটি দিয়ে সনি এর xLoud® & Clearaudio+ ফিচার ডাউনলোড করতে পারবেন আপনার ফোন এ।
  • Sony® Album: এটি দিয়ে সনি এর ফটো অ্যালবাম অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন। (সনি এক্সপেরিয়া ব্যবহারকারীরা এটি ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকবেন।)
  • OpenVPN Support: ফোন এ OpenVPN কানেকশন সেটাপ করতে পারবেন।

(এইগুলো শুধুমাত্র আইসক্রিম স্যান্ডউই্চ আর জেলি বিন ব্যবহারকারীরা ইউজ করবেন)

কেমন লাগলো অ্যাপ্লিকেশনটি? আর আপনি নিজের জন্য কোন সেটিংসটি বেছে নিয়েছেন? মন্তব্যের ঘরে আমাদের জানান।