আন্ড্রয়েড এর বাজারে বাংলাদেশে সিম্ফনি বেশ জনপ্রিয়। মূলত দেশের সব ধরনের মানুষের হাতে আন্ড্রয়েড তুলে দিয়েছে সিম্ফনি। এক মাস আগে তারা বাজারে ছেড়েছে তাদের আরেকটি ফোন, Symphony W60. এই ফোন নিয়ে অবশ্য বেশ সমালোচনাও হয়েছে এর ৩জি না থাকার কারণে। বর্তমান বাজারে ফোনটিতে ৩জি ইন্টারনেট সুবিধা না দিয়ে খানিকটা বোকামি করলো সিম্ফনি। তবে ৩জি আর জিপিএস ছাড়া এ ফোনটি দামের তুলনায় বেশ ভাল। আসুন দেখি ফোনটির হ্যান্ডস অন রিভিউ।
Symphony W60
Symphony W60 এর ডিসপ্লে সাইজ হচ্ছে ৪.০” এবং ডিসপ্লে রেজুলেশন ৪৮০*৮৫৪ পিক্সেল। এতে ব্যবহার করা হয়েছে আইপিএস প্রযুক্তির স্ক্রিন। এই দামে আইপিএস ডিসপ্লে আসলেই চমকপ্রদ। এতে ১গিগাহার্টজ সিঙ্গেল কোর প্রসেসর এবং PowerVR SGX 531 জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। আর এর রয়েছে ৫১২ মেগাবাইট র্যাম। ফোন মেমোরি ২ গিগাবাইট আর ইন্টারনাল স্টোরেজ ৫০০ মেগাবাইট। মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে আর সেটি এক্সটারনাল এসডি হিসেবে ব্যবহার হবে, যদিও সেটিংস এর স্টোরেজ থেকে ডিফল্ট সেইভ মেমোরি সিলেক্ট করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ, সনি এবং স্যামসাং এর কিছু ফোন এর মতো শুধু ইন্টারনাল স্টোরেজেই অ্যাপ বা অ্যাপ এর ডাটা রাখতে পারতেন তেমনটি নয়। আর ব্যাটারির ক্যাপাসিটি রয়েছে ১৬০০ এমএএইচ।
ডিসপ্লে
এই দামে এরকম ডিসপ্লে সত্যিই অবিশ্বাস্য। এর ডিসপ্লে সাইজ হচ্ছে ৪.০” এবং ডিসপ্লে রেজুলেশন ৪৮০*৮৫৪ পিক্সেল। এইচডি ভিডিও দেখে অবাক হয়ে যাবেন। আর যেহেতু এর ডিসপ্লে সাইজ বেশ ভাল, তাই মুভি দেখেও মজা পাবেন। ফোন এর ডিফল্ট ভিডিও প্লেয়ারেই ৭২০পি ভিডিও কোনরকম ল্যাগ ছাড়াই চলে। তবে আমি এমএক্স প্লেয়ার ব্যবহারের পরামর্শ দিব। এটি সিম্ফনি ফোন এর সাথেই দিয়ে দিয়েছে।
অপারেটিং সিস্টেম, ইন্টারফেস ও হোম
ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আইসক্রিম স্যান্ডউইচ এর রম, যেটি সিম্ফনি খানিকটা এডিট করেছে। এর ইন্টারফেস আইসক্রিম স্যান্ডউইচ স্টক রমের মতোই। এতে অ্যান্ড্রয়েডের স্টক উইজেট গুলোই পাবেন।

হোমস্ক্রিন ও নোটিফিকেশন বার।

ডিভাইস ইনফরমেশন।

ডিভাইস ইনফরমেশন।
মেসেজিং
ডিসপ্লে সাইজ বেশি হওয়ায় জন্য মেসেজিং করে মজা পাবেন। এর ইন্টারফেসটাও অনেক সুন্দর। তবে একটি কথা, এতে সিম্ফনি Smart Keyboard Pro নাম এ একটি কিবোর্ড দিয়েছে, যেটা ব্যবহার করে আমি খুব একটা আরাম পাইনি। :/ অবশ্য আইসক্রিম স্যান্ডউইচ স্টক কিবোর্ডও আছে এতে। তবে আমি অন্য কোন কিবোর্ড ব্যবহারের পরামর্শ দেব। এছাড়া বলা যায় মেসেজিং এর জন্য ডিভাইসটি বেশ আরামদায়ক।

Smart Keyboard Pro ব্যবহার করে পোর্ট্রেট মোডে নিউ মেসেজ।

Smart Keyboard Pro
মিউজিক
ফোন এর লাউড স্পিকারটি বেশ পরিস্কার ও জোরাল হলেও ফোন এর সাথে যে মিউজিক প্লেয়ার দিয়েছে সেটি মোটেও পছন্দসই নয়। প্লেয়ারটি ভালো, কিন্তু হেডফোনে গান শুনতে গেলেই আপনি পার্থক্যটা ধরতে পারবেন। ফোন এর সাথে যে হেডফোনটি দিয়েছে, সেটি খুব একটা ভাল তা বলা যায় না। আমি Monster এর Beats হেডফোন ও JVC এর H1X1 হেডফোন দিয়ে ফোন/প্লেয়ার এর সাউন্ড কোয়ালিটি টেস্ট করি। ফোন এর ডিফল্ট মিউজিক প্লেয়ার এর চাইতে PowerAMP আর Apollo Player এ কোয়ালিটি অনেক ভাল। তাই আলাদা হেডফোন কিনে নিলে সেটায় ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে আর আমি থার্ড-পার্টি মিউজিক প্লেয়ার ব্যবহারের পরামর্শ দেব। পোর্ট ৩.৫ এমএম হওয়াতে বেশিরভাগ হেডফোনই সাপোর্ট করবে। তবুও কেনার সময় পরীক্ষা করে নেয়া ভালো।>

স্টক মিউজিক প্লেয়ার।
ক্যামেরা
এর মূল ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেল হওয়া সত্ত্বেও কোয়ালিটি খুব একটা সন্তোষজনক না। অবশ্য সিম্ফনির সব ফোনের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। এর সাথে এলইডি ফ্ল্যাশ যুক্ত করা আছে তাই এটি টর্চ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। এতে ফোকাসও করা যায় না, ফলে মাইক্রো ফোকাস ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে, প্রাইমারী ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
মোবাইল ফটোগ্রাফিতে যাদের আগ্রহ আছে বা যাদের মোবাইলে ক্যামেরা একটি বাঞ্ছনীয় বিষয় তাদের জন্য এ ফোন নয়। ৩৬০পি ভিডিও করা যায় ক্যামেরাটা দিয়ে যার কোয়ালিটি মোটামুটি ভাল। আর একটি ফিচার দেখলাম যেটি হচ্ছে HDR. তবে বলা যায় এই ফোন এর HDR খুব একটা সুবিধার না। তাই HDR মোড এ ছবি তোলার কোন প্রয়োজন নেই। (এক কথাতে HDR: অনেকসময় ছবি আমরা চোখে যেমন দেখি তেমন হয় না, আলো কম হয়, বা বেশিও হয়ে যায়, এই মুড এ ছবি তুলতে পর পর ৩টি ছবি উঠে, একটি বেশি এক্সপোজার এ, একটি নরমাল এক্সপোজার আর আরেকটি কম এক্সপোজার এ। এরপর ঐ তিনটি ছবি মিলিয়ে একটি দুর্দান্ত ছবি হয়। একে হাই ডাইনামিক রেঞ্জ বলা হয়।)

ক্যামেরা ও এইচডিআর মোড।

মাইক্রো-ফোকাস করা যায় না। CameraFX ব্যবহার করা হচ্ছে।
ক্যামেরা স্যাম্পল

সিম্ফনি ডব্লিউ ৬০ ক্যামেরায় ইনডোরে তোলা ছবি।
ইন্টারনেট
ইন্টারনেট এর জন্য আমি নিঃসঙ্কোচে এই ফোনটি সাজেস্ট করব। ফোনটির ইন্টারনেট অনেক ভাল। ফোন এর সাথে যে স্টক ব্রাউজার আছে সেটি দিয়েই সব কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। এই ব্রাউজারটি অনেক দ্রুতগতির। তবে হ্যাঁ, আমি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে টেস্ট করেছি এবং বাসার ওয়াই-ফাই অনেক দ্রুতগতির হওয়ার কারণে এমন হতে পারে ভেবে জিপিতে একটা মিনিপ্যাক নিয়েও টেস্ট করেছি। মোটামুটি ফলাফল পেয়েছি। তাই আমি বলব অপেরা মিনি বা ডলফিন ব্রাউজার ইউজ করতে। তবে হ্যাঁ, স্টক ব্রাওজার এর বাংলা রেন্ডারিং অনেক ভাল। তাই যেকোন একটি বাংলা কিবোর্ড ব্যবহার করে আপনি বাংলা লিখতেও পারবেন কোনরকম বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই।

স্টক ব্রাউজারে অ্যান্ড্রয়েড কথন।
বেঞ্চমার্ক
এটি নিয়ে কিছু বলার নাই। নিজেই দেখে নিন।

AnTuTu বেঞ্চমার্ক।
ব্যাটারী
হেভি ইউসেজে একদিনও পুরোপুরি ব্যাকআপ দেবে না ফোনটি। সেটটির আকার তুলনামূলক বড় ও ডিসপ্লে রেজুলেশন বেশ উন্নত হওয়ায় এতটুকু ছাড় আপনাকে দিতেই হবে। আমি নিজে নরমাল ওয়েব ব্রাওজিং, অল্প কিছু গান শুনে আর ঘন্টা দুয়েক গেম খেলে সকাল থেকে রাত ৮ তা পর্যন্ত ব্যাকআপ পেয়েছি।
অ্যাপ্লিকেশন
অনেকগুলো ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশন দেয়া আছে ফোনটিতে। এর মধ্যে MX Player, Facebook, Twitter আর Android Assistant ছাড়া বেশিরভাগই কাজের নয়। আর ডাউনলোড এর জন্য তো প্লে স্টোর আছেই। সব অ্যাপ্লিকেশনই ভালমতো চলবে র্যাম আর ভাল রেজুলেশন এর কারণে।৩জি না থাকলেও স্কাইপ ব্যবহার করে কোন ঝামেলা ছাড়াই ভিডিও কল করা গেছে ফোনটিতে।

স্কাইপের ভিডিও কল থেকে স্ক্রিনশটটি নেয়া হয়েছে।
গেমস
ফোনটিতে ডিফল্ট ভাবে Fruit Ninja Free, Angry Birds দেয়া আছে। প্লেস্টোর এর বেশিরভাগ সাধারণ গেমগুলি চলবে। Temple Run 2, Subway Surfer, Jetpack Joyride, Agent Dash আর Riptide GP এই গেমগুলি টেস্ট করে দেখা হয়েছে। সবগুলোই কোনরকম ল্যাগছাড়াই চলেছে।

টেম্পল রান।
অন্যান্য
ফোনটিতে প্রক্সিমিটি সেন্সর, অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর ইত্যাদি বেশ ভালোমতোই কাজ করে। এগুলোর মধ্যে প্রক্সিমিটির মাধ্যমে আপনি যখনই ফোন রিসিভ করবেন, তখন ফোনটি কানের কাছে নিলেই লাইটটি নিভিয়ে দেবে, অ্যাক্সেলেরোমিটার বিভিন্ন ড্রাইভিং গেম খেলতে সাহায্য করবে। এছাড়া রেজুলেশন ভাল হওয়ার কারণে ইবুক পড়তেও সমস্যা হবে না কোন। PDF আর EPUB, দুই ফরম্যাট এর বই-ই সহজে পড়তে পারবেন।

PDF পড়ার জন্য ডব্লিউ ৬০ যথেষ্টই ভালো একটি ডিভাইস।
সমস্যা
ফোনটির মূল দুটি সমস্যা হচ্ছে এতে ৩জি আর জিপিএস নেই। বর্তমান-এ ৩জি না দিয়ে বোকামির পরিচয় দিয়েছে সিম্ফনি। আর যেহেতু তারা তাদের এর থেকে কমদামী ফোন (Symphony W10) এও জিপিএস দিয়েছে সেহেতু এটিতে জিপিএস দেয়া উচিত ছিল। এছাড়া পিসিতে কানেক্ট করার পর USB Storage চালু করে সেটি অফ না করেই ক্যাবল খুলে ফেললে ফোন হ্যাং করে। এজন্য আমাকে অনেকবার ব্যাটারি খোলার প্রয়োজন হয়েছে। র্যাম অনেক ফ্রি থাকলেও মাঝে মাঝে অ্যাপ ড্রয়ার স্লো হয়ে যায়। এছাড়া মোটামুটি সবদিক থেকেই ফোন ঠিক আছে।
সিদ্ধান্ত
সবশেষে বলা যায় আপনি যদি ৩জি আর জিপিএস ছাড়া চলতে পারেন, আর খুব বেশি ভালোমানের মোবাইল ক্যামেরার দরকার না হয়, তাহলে এই ফোন আপনার জন্য। তবে, সম্প্রতি ওয়াল্টন তাদের নতুন একটি ফোন ছেড়েছে, Walton F1। একই দামে জিপিএস আর ৩জি আছে ফোনটিতে। এছাড়া স্পেসিফেকশন প্রায় একই দুটি ফোন এর। তাই আমার মতে এটি না কিনে এই বাজেট থাকলে ওয়াল্টন এর ফোনটিও কিনতে পারেন। কিন্তু ৩জি আর জিপিএস ছাড়া চলতে পারলে এই ফোন কিনেও পস্তাবেন না।
সবশেষে আপনার সিদ্ধান্তের কথা আমাদের অবশ্যই জানিয়ে যাবেন!