গেম রিভিউঃ অ্যান্ড্রয়েডে নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড

নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড

আপনি রেসিং গেম ফ্যান হোন আর না হোন, নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড আপনি একবার হলেও কম্পিউটারে খেলেছেন এই সম্ভাবনাই বেশি। ইলেকট্রনিক আর্টসের নিড ফর স্পিড বাজারে আসার পরপরই তা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যায়। আর এই প্রতিক্রিয়াকে ধরে রাখতেই ইএ প্রতি বছরই নিড ফর স্পিডের নতুন নতুন সব ফ্লেভার বের করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত নিড ফর স্পিড শিফট ২ আনলিশড কিংবা নিড ফর স্পিড দা রান গেমারদের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গেছে।

সাধারণত কোনো গেমের নতুন সংস্করণ বের হলে পুরনোগুলোর চাহিদা কমে যায়। গ্রাফিক্সের দিক দিয়েও নতুনগুলো এগিয়ে থাকে বলে পুরনো সংস্করণগুলো খেলার আর তেমন আগ্রহ থাকে না। কিন্তু নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেডের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। কার্বন বা প্রোস্ট্রিটের মতো চমৎকার গ্রাফিক্সের গেম আসার পরও মোস্ট ওয়ান্টেডের প্রতি গেমারদের অন্যরকম একটা টান লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বব্যাপী গেমিং প্রতিযোগিতায় আজও চলছে নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড। গেমটি এতোটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যে, নিড ফর স্পিড টিম ঠিক করেছে, দি রানের পর ২০১২ সালের নিড ফর স্পিড সংস্করণটির নাম হবে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। হ্যাঁ, মোস্ট ওয়ান্টেড ২ বলা যেতে পারে একে। কিন্তু ইএ যেন মোস্ট ওয়ান্টেড ২ নাম দিতে চায়নি। তাই কেবল মোস্ট ওয়ান্টেড নামেই কিছুদিন আগে মুক্তি পেলো নিড ফর স্পিডের ২০১২ সংস্করণ যেটি ডেভেলপ করেছে ক্রাইটেরিয়ন।

এবারে আসল কথায় আসা যাক। নিড ফর স্পিড কিন্তু কেবল কম্পিউটারেই নয়, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটেও সমানভাবে জনপ্রিয়। নিড ফর স্পিড শিফট আর হট পারসুট অ্যান্ড্রয়েড গেমারদের অন্যতম জনপ্রিয় গেম। আর তাই নিড ফর স্পিডের নতুন গেম মোস্ট ওয়ান্টেড যখন অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এলো, তখন যেন খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে হলেও নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড ইন্সটল করা বাধ্যতামূলক হয়ে গেল।

কিন্তু নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড অনেক বড় আকারের গেম। এতো বড় গেম ডাউনলোড করার আগে স্বভাবতঃই আপনি ভাববেন, আসলেই গেমটি ভালো কি না। আপনার সেই প্রশ্নের জবাব দিতেই আজকের এই গেম রিভিউ যেখানে আমরা বলবো নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেডের কথা।

গ্রাফিক্স

সাধারণত গেম খেলতে গেলে গ্রাফিক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। গেমের স্টোরিলাইন বা গেমপ্লে যতো ভালোই হোক না কেন, গ্রাফিক্স খারাপ হলে দ্রুতই গেমার গেম খেলতে আগ্রহ হারাবেন। অবশ্য ভালো স্টোরি বা গেমপ্লে ছাড়া কেবল ভালো গ্রাফিক্স দিয়েও গেম জনপ্রিয় করে তোলা যায় না। চাই ভালো গেমপ্লে ও দারুণ গ্রাফিক্স। মোবাইল বা ট্যাবলেট ডিভাইসে আশানুরূপ গ্রাফিক্স দেয়া খানিকটা কঠিন বটে। বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে। কেননা, অ্যান্ড্রয়েডের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট। এগুলোর একেকটির ক্ষমতা একেক রকম। তাই একটি ডিভাইসে ভালো পারফরম্যান্স দিয়েছে বলে অন্যগুলোতেও দিবে এটা নিশ্চিত করা যায় না।

গেমের গ্রাফিক্স বা স্থায়ীত্ব (স্ট্যাবিলিটি) পরীক্ষা করতে বর্তমানে একটি আদর্শ ডিভাইস হচ্ছে গুগলের নেক্সাস ৭। এই নেক্সাস ৭-এই নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আর মোটেই হতাশ করেনি ইএ। এক কথায়, আউটস্ট্যান্ডিং পারফরম্যান্স দিয়েছে গ্রাফিক্স। যদিও তা ডেস্কটপ কম্পিউটারের পারফরম্যান্সের সঙ্গে তুলনা করার মতো নয়, তবুও ছোট আকারের ডিভাইসে যতটুকু গ্রাফিক্স আপনি আশা করতে পারেন, গেম ডেভেলপার হিসেবে ইএ নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেডে ততোটা দিতে মোটেই কার্পণ্য করেনি।

গেমে কিছু পার্টিকলের দেখাও পাবেন। অন্য গাড়ির সঙ্গে ঘষা খেলে আগুনের ফুলকি, ড্রিফট করার সময় কিছুটা ডাস্ট উড়তে দেখাসহ প্রায় ছোটখাটো পার্টিকল দেখতে পাবেন যা গেমের এক্সপেরিয়েন্সকে আরেকটু বাস্তবিক করে তুলতে সাহায্য করবে। আর সেইসঙ্গে দারুণ সাউন্ড কোয়ালিটি ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আপনাকে রাখবে পুরো রেসিং-এর মুডে।

এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করবেন, গেমের গ্রাফিক্সের সঙ্গে অরিজিনাল মোস্ট ওয়ান্টেডের কোনো মিল পাবেন না। কেননা, অ্যান্ড্রয়েডের জন্য মোস্ট ওয়ান্টেডের গ্রাফিক্স তৈরি করা হয়েছে ২০১২ সালে বের হওয়া ক্রাইটেরিয়নের তৈরি মোস্ট ওয়ান্টেডের উপর ভিত্তি করে। তাই পুরনো মোস্ট ওয়ান্টেডের সেই হলদেটে ভাব আর পাবেন না। দেখতে এটি অনেকটা নিড ফর স্পিড হট পারসুট ২০১০-এর মতো। তাই হট পারসুট ২০১০ খেলে থাকলে এর গ্রাফিক্সে অনেকটাই মিল পাবেন।

গেমপ্লে

গেমপ্লেকে সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তুলতে ইএ’র কোনো জুড়ি নেই। তবে অ্যান্ড্রয়েডে কতটুকুই বা আর গেমপ্লে ভালো করা যায়? বিশেষ করে রেসিং গেমের ক্ষেত্রে গেমপ্লে ভালো করার জায়গাও খুব কম। যে সাধারণ জিনিসটি আপনি আশা করতে পারেন, তা হলো স্মুথ ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্স।

নিড ফর স্পিড আপনার ডিভাইসের অ্যাক্সেলেরোমিটারকে কাজে লাগায়। ফলে, আপনার ডিভাইসকে আপনি আপনার গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল হিসেবে কাজে লাগিয়ে ড্রাইভ করতে পারবেন। যেমনটা উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন,  আপনি ডিভাইস ডানে-বামে কাৎ করে অ্যাক্সেলেরোমিটারের সাহায্যে গাড়ির নাক ডানে-বামে ঘুরাতে পারবেন, আবার আপনি চাইলে টেম্পল রানের মতো স্ক্রিনে টান ও সোয়াইপ করার মাধ্যমে ডানে-বামে যেতে পারবেন। কাজেই আপনাকে জোর করে স্টিয়ারিং করাবে না মোস্ট ওয়ান্টেড। যদি আপনি টাচ করে খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে আপনি টাচ করেই খেলতে পারবেন।

তবে নেক্সাস ৭-এ টাচ কন্ট্রোলে মাঝে মাঝে একটু ল্যাগ করতে দেখা গেছে। মূলত গেমটি অনেক হাই-রেজুলেশনের হওয়ায় কিছুটা স্লো পারফরম্যান্স দিতে পারে। এইচটিসি ওয়ান এক্স, গ্যালাক্সি এস ৩, গ্যালাক্সি নোট ২ ইত্যাদি হাই-এন্ড টেগরা ৩ ডিভাইসের জন্য বিশেষভাবে নিড ফর স্পিড প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এইচডি গেম চলে এমন বেশিরভাগ ডিভাইসেই খেলা যাবে মোস্ট ওয়ান্টেড। তবে সময়ে-অসময়ে কিছুটা ল্যাগ আশা করতে পারেন।

গেম খেলার সময় আপনি টাচ ও সোয়াইপ আপ করে বা উপরের দিকে সোয়াইপ করার মাধ্যমে নাইট্রো বুস্ট করতে পারবেন। এছাড়া ডানদিকে ট্যাপ করলে রাস্তায় ড্রিফট করতে ও বামদিকে ট্যাপ করলে ব্রেক করতে পারবেন।

গেমিং মোড

গেমিং মোড হিসেবে মোস্ট ওয়ান্টেডে সাধারণ প্রায় সবগুলো রেসিংই আছে। ৬ অন ১, ওয়ান অন ওয়ান, টাইম ট্রায়াল, চেকপয়েন্ট রেস ইত্যাদি সব ধরনের মোডই আছে। অবশ্য আপনি যদি ড্র্যাগ রেসিং-এর ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো সেটা মিস করবেন।

গেম খেলতে খেলতে আপনি স্পিড পয়েন্ট পাবেন যেগুলো দিয়ে নতুন নতুন সব গাড়ি আনলক করতে পারবেন। এছাড়াও কিছু কিছু গাড়ি আপনি ইন-গেম ক্যাশের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। এই ক্যাশ আপনি বিভিন্ন রেস জিতে গোল্ড, সিলভার বা ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড জেতার মাধ্যমে অর্জন করতে পারবেন। আর যদি আপনার ক্রেডিট কার্ডে বেশি টাকা থাকে তাহলে আপনি মূহুর্তেই সব গাড়ি কিনে ফেলতে পারবেন। 😉

মোস্ট ওয়ান্টেড খেলার সময় ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থাকলে আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েও খেলতে পারবেন। যদিও এর মাল্টিপ্লেয়ার মোড খুব একটা সুবিধার না, কেননা আপনি কেবল স্কোর সাবমিট করতে পারবেন। আর যদি বন্ধুদের কেউ মোস্ট ওয়ান্টেড না খেলে, তাহলে এআই তার জায়গা দখল করে নেবে।

নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেডের পিসি সংস্করণে কি গাড়িকে ইচ্ছেমতো কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস ছিল? তাহলে অ্যান্ড্রয়েডে হয়তো গাড়ি কাস্টোমাইজ করে খুব একটা মজা পাবেন না। কেননা, ডেস্কটপের মতো অতো বেশি কাস্টোমাইজেশন সুবিধা রাখা হয়নি। তবে মোস্ট ওয়ান্টেডের গুগল প্লে পাতা বলছে, বিভিন্ন মডের মাধ্যমে গাড়িকে আরও ভিন্নভাবে কাস্টোমাইজ করার সুযোগ রয়েছে।

নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড সম্পূর্ণরূপে ইন্সটল হওয়ার পর ডিভাইসে প্রায় ২ গিগাবাইট জায়গা নিয়ে থাকে। প্লে স্টোরে এর দাম প্রায় ৭ ডলার। আপনি চাইলে এটি সরাসরি কিনতে পারেন অথবা গুগলে খোঁজ করে এপিকে ফাইল ও এসডি কার্ড ডেটা ডাউনলোড করে নিতে পারেন। নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড সম্পর্কে আরও জানতে এবং অন্যান্য গেমারদের মন্তব্য জানতে দেখুন এর অফিসিয়াল গুগল প্লে পাতা।

গুগল প্লে স্টোর লিংকঃ নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড

 

শেষ কথা হচ্ছে, নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড যদি আপনার ডিভাইস সাপোর্ট করে, তাহলে এটি না খেলার কোনো কারণ নেই। আপনার ডিভাইস এটি সাপোর্ট করবে কি না তা জানার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে লগইন করে উপরের লিংকে (প্লে স্টোরে) যান। গুগল প্লে স্টোরই আপনাকে বলে দিবে আপনার ডিভাইসে গেমটি চলবে কি না।

নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড ২০১২ বের হলো কিছুদিন হয়েছে। শক্তিশালী কনফিগারেশনের কম্পিউটার না থাকলে আপনি হয়তো বঞ্চিতই হবেন দারুণ এই গেম থেকে। কিন্তু আপনার সাপোর্টেড অ্যান্ড্রয়েড ফোনে মোস্ট ওয়ান্টেড খেললে পিসি গেমিংয়ের কিছুটা স্বাদ, অন্তত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবেন। আর স্ট্যান্ডঅ্যালোন অ্যান্ড্রয়েড গেম হিসেবে সত্যিই দারুণ একটি গেম নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড।

তাহলে আর দেরি কেন? ডাউনলোড করে ফেলুন নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড, হয়ে যান ভার্চুয়াল দুনিয়ার মোস্ট ওয়ান্টেড রেসার।

বিঃদ্রঃ মোস্ট ওয়ান্টেড গেমে মোস্ট ওয়ান্টেড হয়ে গেলেও ঢাকার ট্রাফিক পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করবে না। কাজেই, মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে ১ নম্বর হওয়ার পর ঘর থেকে বের হতে ভয় পাবেন না যেন! 😉