অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার পরপরই অনেকে ডিভাইস রুট করার উপায় খুঁজতে শুরু করেন। ডিভাইস রুট করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর পারফরম্যান্স বাড়ানো। সিপিইউ ওভারক্লকিং, সব অ্যাপ্লিকেশন ও ক্যাশ ফাইল মেমোরি কার্ডে ট্রান্সফার ইত্যাদি সুবিধা পেতে ডিভাইস রুট করার কোনো বিকল্প নেই। যদিও রুট করলে ওয়ারেন্টি চলে যায়, তবুও অনেকেই তাদের ডিভাইস থেকে ভালো পারফরম্যান্সের আশায় এতটুকু ছাড় দিতে রাজি থাকেন।
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস রুট করার হাজারটা পদ্ধতি আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একেক ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু কিছু কিছু ডেভেলপার ইউনিভার্সাল পদ্ধতি তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে একাধিক ডিভাইস রুট করা যায়। অ্যান্ড্রয়েড জগতে ডুমলর্ড হচ্ছে তেমনই একজন ডেভেলপারের নাম যিনি তৈরি করেছেন অন্যতম জনপ্রিয় রুটিং প্রসেস। এ পর্যন্ত সনি এক্সপেরিয়া, স্যামসাং, মটোরোলা ও এইচটিসির প্রচুর ডিভাইস এই পদ্ধতিতে রুট করা গেছে। তাই অ্যান্ড্রয়েড কথনের প্রথম রুট টিউটোরিয়ালে আমি দেখাবো এক্সডিএ অবলম্বনে ডুমলর্ডের সেই রুট পদ্ধতি।
রুট করার আগে যেসব বিষয় অবশ্যই জানা দরকার
- এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এখানে রুটের সম্ভাবনা ও ঝুঁকির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। রুট কী তা না জানলেও পোস্টটিতে জানতে পারবেন।
- রুট করলে ডিভাইসের ওয়ারেন্টি চলে যাবে।
- রুট করার পরপর ডিভাইসে কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না। বরং, এরপর আপনি ডিভাইসকে নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। (এ নিয়ে পরবর্তীতে অ্যান্ড্রয়েড কথনে পোস্ট আসবে।)
- এই পদ্ধতিতে রুট করতে ব্যর্থ হলে ডিভাইসের কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা না। আমি আমার এক্সপেরিয়া মিনি প্রো এই পদ্ধতিতে রুট করতে গিয়ে ৩ বার ব্যর্থ হয়েছি ছোট একটি ভুল থাকার কারণে। কোনো সমস্যা হয়নি। পরেরবার স্বাভাবিকভাবেই রুট করেছি।
- এই পদ্ধতিতে ডিভাইস রুট করা হলে পরবর্তীতে আনরুট করা সম্ভব। আনরুট করার পদ্ধতি নিয়ে আলাদা একটি পোস্ট প্রকাশিত হবে।
- রুট করতে চেষ্টা করার আগে অবশ্যই পোস্টের নিচের অংশ থেকে দেখে নিন আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা ট্যাবলেটটি এবং তার ফার্মওয়্যার (যেখানে প্রযোজ্য) এই পদ্ধতিতে রুট করা যাবে কি না।
- ডেভেলপাররা বলছেন, আইসক্রিম স্যান্ডউইচ-এ এই পদ্ধতি কাজ করবে না। এছাড়াও নভেম্বর ২০১১-এর পর জিঞ্জারব্রেড অফিসিয়াল আপডেট করা হলেও এই পদ্ধতিতে রুট কাজ না করতে পারে। তবে রুট না হলে সমস্যা হবে না তাই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বিশেষ করে গত বছর থেকে গত কয়েক মাস পর্যন্ত কেনা স্যামসাং, সনি ও এইচটিসি ডিভাইসগুলো আপডেট না করা হলে এই পদ্ধতিতে রুট করা যেতে পারে।
- রুট করার পর অফিসিয়াল আপডেট দেয়া হলে ডিভাইস অটোমেটিক আনরুট হয়ে যাবে।
- সর্বোপরি আপনার ডিভাইসের কোনো ক্ষতি হলে, ব্রিক বা নষ্ট হয়ে গেলে কিংবা অন্য যে কোনো দুর্ঘটনার জন্য অ্যান্ড্রয়েড কথন বা সংশ্লিষ্ট কেউ দায়ী থাকবে না। এই পদ্ধতিটি কার্যকর এবং এ জন্যই পাঠকদের স্বার্থে বাংলায় লিখে দেয়া হচ্ছে।
ডাউনলোড
রুট, কাস্টম রম ইন্সটল, স্টক রম ফ্ল্যাশ ইত্যাদি কাজে সবসময়ই প্রচুর ডাউনলোড করতে হয়। তাই এসব কাজ করতে গেলে খেয়াল রাখবেন আপনার কম্পিউটারে যেন ইন্টারনেট সংযোগ থাকে এবং তা দিয়ে যেন ডাউনলোড করা যায়। তবে রুট করার জন্য খুব বড় ফাইল ডাউনলোড করতে হবে না।
- এখান থেকে adb drivers ডাউনলোড করে নিন। সনি এক্সপেরিয়া ডিভাইসগুলোয় এই ড্রাইভারগুলো কাজ করবে। অন্যগুলোয় করবে কি না বলতে পারছি না। কেউ পরীক্ষা করে জানাবেন।
- উপরের এডিবি ড্রাইভারগুলো কাজ না করলে এখান থেকে অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন।
- এখান থেকে ডুমলর্ডের zergRush স্ক্রিপ্ট ডাউনলোড করে নিন।
- আপনার ডিভাইসের পিসি স্যুটটি ইন্সটল করে নিন (সনির জন্য পিসি কম্প্যানিয়ন ও স্যামসাং-এর জন্য kies)।
প্রক্রিয়া
- প্রথমেই ডিভাইসের চার্জ ৫০%-এর বেশি আছে কি না তা দেখে নিন।
- পিসি কম্প্যানিয়ন চালু করুন।
- ডিভাইসের ইউএসবি ডিবাগিং অ্যাকটিভ করুন। এ জন্য সেটিংস থেকে Applications -> Development -> USB Debugging-এ টিক চিহ্ন দিন।
- আননোন সোর্স থেকে অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল চালু করুন। এ জন্য সেটিংস থেকে Applications -> Unknown source-এ টিক চিহ্ন দিন।
- এবার উপরের তিন নম্বর ধাপে ডাউনলোড করা জার্গরাশ ফাইলটি আনজিপ করুন। এতে runme.bat নামে একটি ফাইল পাবেন। এতে রাইট ক্লিক করে Run As Administrator দিন (উইন্ডোজ ৭-এর জন্য)।
- নিচের মতো একটি কমান্ড উইন্ডো পাবেন।
এই পর্যায়ে আপনাকে প্রথমে ইউএসবি ক্যাবলটি ফোনে সংযুক্ত করতে হবে। ক্যাবলের এক মাথা আগে ফোনে লাগিয়ে তারপর অপরদিক কম্পিউটারে কানেক্ট করুন। পিসি কম্প্যানিয়ন ইন্সটল করার জন্য প্রম্পট/পপআপ আসতে পারে মোবাইলের স্ক্রিনে। Skip বাটনে ক্লিক করুন।
এবার উপরের কমান্ড উইন্ডোতে ক্লিক করুন ও এন্টার প্রেস করুন। সঙ্গে সঙ্গেই আপনার ডিভাইস রুট হওয়া শুরু হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুট প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। যদি রুট সফল হয়, তাহলে শেষে আপনার ডিভাইসটি রিস্টার্ট নেবে। ডিভাইস রিস্টার্ট হওয়ার পর অ্যাপ্লিকেশন তালিকায় (ড্রয়ার) গিয়ে দেখুন সুপারইউজার নামে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল হয়েছে কি না। সুপারইউজারের আইকনটি দেখতে নিচের মতো।
সুপারইউজারের অ্যাপ্লিকেশনটি ইন্সটল হওয়া মানেই আপনার ডিভাইসটি এখন সত্যি সত্যিই আপনার। এতোদিন আপনি কেবল কাগজে-কলমে ডিভাইসের মালিক ছিলেন। এবার আপনার ডিভাইসকে আপনার দাস বানিয়ে ছাড়লেন। অভিনন্দন!
Sudo হচ্ছে superuser do যার সঙ্গে লিনাক্স ব্যবহারকারীরা পরিচিত থাকবেন। রুট করার মাধ্যমে আপনার প্রতিটি কমান্ডের সঙ্গে এই সুডো কমান্ড যোগ হয়। তাই ডিভাইস আপনার কথা শুনতে বাধ্য থাকে। 🙂
যেসব ডিভাইসে এই পদ্ধতিটি কাজ করেছে
(লেখা স্ক্রিনের বাইরে চলে গেলে ক্লিক করে কিবোর্ড থেকে রাইট অ্যারো কি চাপুন।)
Sony Xperia X10 (GB firmware) Sony Xperia Arc Sony Xperia Arc S Sony Xperia Play [R800i/R800x] Sony Xperia Ray Sony Xperia Neo Sony Xperia Neo V Sony Xperia Mini Sony Xperia Mini S51SE Sony Xperia Mini Pro Sony Xperia Pro Sony Xperia Active Sony Xperia Live Walkman NTT Docomo Xperia ARCO SO-02C Samsung Galaxy S2 [GT-i9100/i9100P/i9100T] Samsung Galaxy S II for T-Mobile (SGH-T989) Samsung Galaxy S II for AT&T (SGH-I777), Skyrocket (SGH-i727) Samsung Galaxy S II LTE Rogers Canada (SGH-I727R), Android version 2.3.5, Baseband version I727RUXKJ7 Samsung Galaxy S II Epic 4g Touch Samsung Galaxy S2 HD LTE (SHV-E120S)(korea) Samsung Galaxy S2 LTE (SHV-E110S) Samsung Galaxy S2 LTE Japanese version (carrier DoCoMo) [SC-03D] (2.3.6) {OMKK3} Samsung Galaxy i9100G Samsung Galaxy S [i9000B] & [i9000 2.3.3 (PDA I9000BOJV8, Phone I9000XXJVO, CSC I9000GDTMJV7) and german T-Mobile branding], XWJVW (2.3.6) Samsung Galaxy S 4G (aka SGH-T959V) Samsung Galaxy S Plus (GT-I9001) OS 2.3.3 and 2.3.6 (I9001ZSKP6) & 2.3.4 firmware (i9001XXKP4) Samsung Galaxy Mini GT-S5570 (GB only) Samsung Galaxy Mini Pro i5510 Samsung Galaxy W [i8150] Samsung Galaxy Y Samsung Galaxy Y pro [B5510] (2.3.5) Samsung Galaxy Tab [P1000] (2.3.3 firmware), [P1000N] Samsung Galaxy Note [N7000] Samsung Galaxy Player YP-G70 2.3.5 (GINGERBREAD.XXKPF) Samsung Galaxy Ace (2.3.3, 2.3.4 firmware) Samsung S5670 FIT DDKQ5 2.3.5 Samsung Nexus S [i9023] (2.3.6) Samsung Nexus S 4G 2.3.7 Samsung Galaxy Nexus S [i9020] (2.3.6) & Nexus S i9020A (2.3.6) Samsung Exhibit (SGH-T759) Samsung Exhibit 4G (SGH-T759) (2.3.3) Build UVKE8 Samsung Epic 4G Samsung Captivate i897 UCKH3 Motorola ATRIX Motorola Milestone 3 [ME863 HK] Motorola Milestone 2 with Gingerbread Motorola XT860, Bell XT860 Motorola Defy+ Motorola Droid X sys ver 4.5.605 w/ gingerbread Motorola Droid X2 (2.3.4) Sys ver 1.3.380.MB870.Verizon.en.US Build 4.5.1A-DTN-150-30 Motorola XT883 (China Telecom) Motorola XT862 (Verizon Droid3) Motorola DROID RAZR Nexus One (2.3.6 stock) LG Revolution LG Nitro HD Vizio VTAB1008 Tablet Huawei Ideos U8150 (2.2) Huawei Ideos X5 [U8800] (2.3.5) HTC Sensation (S-OFF only) HTC Raider (Rogers) HTC Chacha Acer Liquid Mini (2.3.5) Acer Liquid Metal (2.3.6)
[রুট স্ক্রিপ্ট ও টিউটোরিয়াল সূত্রঃ এক্সডিএ]
শেষ কথা
আশা করছি এতক্ষণে আপনার ডিভাইস রুট করা হয়ে গেছে। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে খেয়াল করে দেখুন এডিবি ড্রাইভার, এসডিকে ফাইল, পিসি কমপ্যানিয়ন ইত্যাদি ইন্সটল আছে কি না। আমার ক্ষেত্রে সনি পিসি কম্প্যানিয়ন ইন্সটল ছিল না বলেই সমস্যা হচ্ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে (আর ডিভাইস আইসক্রিম স্যান্ডউইচ বা অ্যান্ড্রয়েড ৪.০ না হলে) এই পদ্ধতিতে রুট সফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
রুট করার পর কী করবেন তা জানতে চেয়ে অনেকেই মেইল পাঠিয়েছেন। শিগগিরই আমরা রুট পরবর্তী কিছু অ্যাপ্লিকেশন ও কাজ নিয়ে পোস্ট দিবো। সেই পর্যন্ত এই পোস্টটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, রুট করা নিয়ে আপনার মন্তব্য অবশ্যই অবশ্যই নিচে লিখুন এবং অ্যান্ড্রয়েড কথনের সঙ্গেই থাকুন।