মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের আইডিয়া নিয়ে ২ লাখ টাকার কন্টেস্ট বাংলালিংকের

বলতে পারবেন বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ কী? জ্ঞানের কথা বলছেন? তা তো সবাই জানে। কিন্তু আরেকটি জিনিস রয়েছে যার কদর কর্পোরেট লেভেলে সবচেয়ে বেশি করা হয়। আর সেই অমূল্য সম্পদের নাম হচ্ছে আইডিয়া। এই আইডিয়ার খোঁজেই দ্বিতীয়বারের মতো সম্প্রতি দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক শুরু করেছে তাদের “গ্র্যান্ডমাস্টার আইডিয়া কন্টেস্ট”। এবারের এই কন্টেস্টে চ্যাম্পিয়ন পাবেন ২ লাখ টাকা। এতোদিনে নিশ্চয়ই টিভি-পত্রিকার বিজ্ঞাপনে এটি সম্পর্কে আপনারা জেনে গেছেন। আসুন জেনে নিই ব্যতিক্রমী এই আইডিয়া কন্টেস্ট সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত।

বাংলালিংক গ্র্যান্ডমাস্টার আইডিয়া কন্টেস্টে আপনাকে জমা দিতে হবে মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কিত কোনো সেবা নিয়ে আপনার যুগান্তকারী আইডিয়া। আপনার মাথায় যদি এমন কোনো অ্যাপ্লিকেশন বা প্রজেক্টের আইডিয়া ঘুরঘুর করতে থাকে যা বদলে দিতে পারে অনেক কিছু এবং যেটি মোবাইল ইন্টারনেটের সঙ্গে কোনোভাবে সংযুক্ত, তাহলেই আপনি বিনামূল্যে আপনার আইডিয়াটি পাঠাতে পারবেন গ্র্যান্ডমাস্টার কন্টেস্টে। অনেক সময়ই দেখা যায় যুগান্তকারী আইডিয়াগুলো ক্লাসরুমের টেবিলে বা ঘরের কোণেই পড়ে থাকে। যথেষ্ট রিসোর্স না থাকার কারণে আইডিয়াগুলোর অপার সম্ভাবনা থাকলেও তা আর আলোর মুখ দেখে না। গ্র্যান্ডমাস্টার কন্টেস্টে আপনি পাবেন সেই সুযোগ। যদি আপনার আইডিয়া সত্যিই অসাধারণ হয়, তাহলেই আপনি তা বাস্তবায়নের জন্য পেতে পারেন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা।

আইডিয়া জমা দেয়ার নিয়ম

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের এই যুগে সবকিছুই ফেসবুকে হয়ে যাচ্ছে। বাংলালিংকও পিছিয়ে নেই। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেই কেবল এই কন্টেস্টের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে প্রথমে অফিসিয়াল পেজ লাইক করতে হবে। তার পরপরই আপনি আইডিয়া জমা দেয়ার নিয়মাবলী পাবেন।

আইডিয়া জমা দেয়ার আগে জেনে রাখা ভালো যে, আপনার অবশ্যই একটি গ্রুপ থাকতে হবে। আপনি ছাড়া ন্যূনতম ১ থেকে সর্বোচ্চ ৩ জন বন্ধুকে ঐ গ্রুপে থাকতে হবে। গ্রুপ বলতে কোনো ফেসবুক গ্রুপ বোঝানো হচ্ছে না। একটি টিম, যেখানে আপনারা সবাই আইডিয়া বা প্রজেক্টটি নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। টিমলিডার হিসেবে আইডিয়া জমা দেয়ার প্রথম ধাপেই আপনাকে গ্রুপের জন্য একটি নাম দিতে হবে। সেইসঙ্গে আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছেন তার নাম, আপনার আইডি নম্বর ও ফোন বা ইমেইল ঠিকানা দিতে হবে। শেষ ধাপে আপনার গ্রুপের সেই বন্ধুদের গ্রুপে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাঠাতে হবে।

বন্ধুরা গ্রুপে যোগ দিলেই গ্রুপটি অ্যাক্টিভ হয়ে যাবে। এ পর্যায়ে আপনি আপনার প্রজেক্ট বা আইডিয়াটি জমা দিতে পারবেন। এখানে আপনাকে একটি স্যাম্পল প্রজেক্ট দেয়া হবে যা দেখে আপনি ধারণা নিতে পারবেন কীভাবে আপনার প্রজেক্টটি জমা দিতে হবে বা প্রজেক্ট সম্পর্কে লিখতে হবে।

প্রজেক্ট সম্পর্কে যেসব বিষয় থাকতে হবে

প্রজেক্ট বা আইডিয়া সম্পর্কে প্রথমেই সংক্ষেপে ধারণা দিতে হবে। এরপর গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের নাম ও তারা বর্তমানে কে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ছেন তা উল্লেখ করতে হবে। এরপর আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে। এখানেই আপনাকে মূল আইডিয়াটি যতোটা সম্ভব স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। এখানে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। সেগুলো হচ্ছেঃ

  • প্রজেক্টটি সেবা হিসেবে চালু হলে কী পরিমান মানুষ সেই সেবা পেতে পারেন।
  • প্রস্তাবিত প্রজেক্টটির ব্যবহার-বান্ধবতা বা ইউজার-ফ্রেন্ডলিনেস কতটুকু।
  • প্রযুক্তিগত বা টেকনিক্যাল দিক দিয়ে প্রজেক্টটির বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব।
  • বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) বিচারে প্রজেক্টটির সম্ভাব্যতা।

উপরের বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে প্রজেক্ট আইডিয়া জমা দেয়ার সময় অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। গ্রুপ তৈরি হয়ে যাবার পর প্রজেক্ট জমা দেয়ার সময় একটি স্যাম্পল প্রজেক্ট পাবেন যেখান থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।

আইডিয়া জমা দেয়ার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি

প্রথমেই আপনাকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট বা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট অধ্যয়নরত হতে হবে। একই সদস্য একাধিক গ্রুপে থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ, ২ থেকে ৪ সদস্যের একটি গ্রুপে যারা আছেন, তারা অন্য কোনো গ্রুপে ঢুকতে পারবেন না। পরবর্তীতে প্রয়োজনে অংশগ্রহণকারীকে অবশ্যই নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি ও জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা জন্মসনদ দেখাতে হবে।

আইডিয়া বা প্রজেক্ট জমা দেয়ার সময় মনে রাখতে হবে যে, প্রথম তিনটি আইডিয়া ছাড়া সবগুলো বাংলালিংক (ওরাসম টেলিকম) নিজেরা ব্যবহারের অধিকার রাখে। অর্থাৎ, চ্যাম্পিয়ন পাবেন ২ লাখ টাকা, ১ম রানার আপ পাবেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২য় রানার আপ পাবেন ১ লাখ টাকা। এই তিনটি প্রজেক্ট যারা পাঠাবেন তারা নিজেরাই বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে পারবেন। কিন্তু এগুলো ছাড়া অন্য যেসব প্রজেক্ট বা আইডিয়া জমা দেয়া হবে, এগুলোর যে কোনোটি কর্তৃপক্ষ ১০ হাজার টাকা ইন্টেলেকচুয়াল ফি-এর বিনিময়ে নিজেরা ব্যবহার করতে পারবে। আর এ জন্যই যেসব আইডিয়া জমা দেয়া হবে, সেগুলো আগে কোথাও জমা দেয়া হলে তা ডিসকোয়ালিফায়েড হবে।

আর হ্যাঁ, বিজয়ী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিচারকদের রায় ৮০% ও ভোট/ফেসবুক লাইক ২০% হিসেবে ধরা হবে।

শেষ তারিখঃ ১৮ই অক্টোবর

১৮ই অক্টোবরের মধ্যেই গ্রুপ তৈরি, বন্ধুদের যোগদান ও প্রজেক্ট জমা দেয়ার কাজ শেষ করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েড কথনে এই নিয়ে কাভারেজ দেয়া হচ্ছে কারণ, আমরা অনেককেই দেখেছি যাদের মাথায় আইডিয়ার অভাব নেই কিন্তু প্রয়োজনীয় রিসোর্সের অভাবে সেগুলো আইডিয়া আকারেই ঝুলে থাকে। তাই আপনার মাথায় যদি দারুণ কোনো আইডিয়া থাকে, আর তা যদি একা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না বলে মনে হয়, তাহলে বাংলালিংকের গ্র্যান্ডমাস্টার আইডিয়া কন্টেস্টের দ্বিতীয় সিজনে একবার চেষ্টা করে দেখতে দোষ কী?

তাই এখনই বন্ধুদের সঙ্গে আইডিয়াটি নিয়ে আলোচনা করুন। একটি টিম তৈরি করে জমা দিন আপনার আইডিয়া। কে জানে, হয়তো আগামী যুগান্তকারী সেবাটির আইডিয়া আপনার মাথায়ই ঘুরঘুর করছে! (তখন কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড কথনকে ভুলে গেলে চলবে না! 😉 )

তো, আছে নাকি মাথায় কোনো আইডিয়া?