মোবাইল ফোন এক সময়ে ছিল প্রয়োজনের বস্তু। যোগাযোগের সবচেয়ে দ্রুততম মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তা ক্রমেই তুঙ্গে উঠতে থাকে। কিন্তু কিছু মানুষ মোবাইল ফোনকে কেবল কথা বলার জন্য ব্যবহার করতে রাজি থাকেননি। তারা এ নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন এবং ছোট্ট এই ডিভাইসে ভরতে শুরু করেন ক্যালকুলেটর, গেমস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধা। কালের বিবর্তনে আজ মোবাইল ফোনকে কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। আর এসব ফোন কেবল জরুরিই নয়, বরং অনেকেরই সাধের বস্তু হয়েও দাঁড়িয়েছে।
স্মার্টফোনের জগতে অ্যান্ড্রয়েড এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। যদিও বাজারটা শুরু করে অ্যাপল এবং সম্প্রতি মাইক্রোসফটও উইন্ডোজ ফোন দিয়ে স্মার্টফোন দিচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তাই বেশি। এর মূল কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ও সুবিধার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সহজলভ্যতা। যদিও আজ তুলনামূলক কম দামে অ্যান্ড্রয়েড ফোন পাওয়া যাচ্ছে, তবুও অনেকেরই হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে কমদামী ও স্বল্প মান সম্পন্ন এসব অ্যান্ড্রয়েড সেট। এমন অবস্থায় আগ্রহীরা ঝুঁকছেন চাইনিজ পণ্যের দিকে। তবে নামটা যখন সিমফোনি, তখন বাংলাদেশিরা গতানুগতিক চাইনিজ পণ্যের চেয়ে একটু বেশিই আশা করেন।
গত সপ্তাহে আমাদের হাতে আসে সিমফোনির অ্যান্ড্রয়েড-চালিত ফোন ডব্লিউ ৫। আজকের এই রিভিউ তাই সেই কমদামী সেটকে ঘিরেই। অনেক পাঠক এই রিভিউয়ের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করেছেন। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে শোনা যাক সাধ্যের মধ্যে সাধের গল্প।
সিমফোনি ডব্লিউ ৫
সিমফোনি ডব্লিউ ৫ হচ্ছে অত্যন্ত কমদামের একটি অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন। কমদামের স্মার্টফোন বলতে এতোদিন স্যামসাং গ্যালাক্সি পকেট, গ্যালাক্সি ওয়াই বা সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনিকে বোঝানো হলেও বাংলাদেশে যেহেতু সিমফোনি বেশ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তাই এদেশের জন্য এই সেটটিকেই এন্ট্রি-লেভেল স্মার্টফোন বলা চলে। যদিও গ্যালাক্সি ওয়াই বা পকেটের চেয়ে কোনো কোনো অংশে এর পারফরম্যান্স বেশি ভালো, তবুও প্রথম দেখায় অনেকেই সেটটিকে পছন্দ নাও করতে পারেন।
প্রথমেই জেনে আসা যাক সেটটির বেসিক কনফিগারেশন।
সিমফোনি এক্সপ্লোরার ডব্লিউ ৫ সেটটি অ্যান্ড্রয়েড ২.৩ জিঞ্জারব্রেডে চলে। এর স্ক্রিনের আকার ৩.২ ইঞ্চি যাতে ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে যা মাল্টিটাচ সাপোর্ট করে। এর ডিসপ্লে রেজুলেশন কিউভিজিএ ২৪০*৩২০ ও ক্যামেরা ২ মেগাপিক্সেল। সামনের দিকে এর কোনো ক্যামেরা নেই। স্বভাবতঃই সেটটি গ্যালাক্সি ওয়াই বা পকেটের তুলনায় দেখতে বেশ বড় কেননা এর স্ক্রিনের চারপাশে বাড়তি বেশ কিছু জায়গা আছে। সেটটি হাতে নিতে বেশ আরামদায়ক। এর পেছনের অনেকটা রাবারাইজড ফিনিশিং আপনার হাতকে সহজে ঘামতে দেবে না অথবা ঘামলেও পেছনটা পিচ্ছিল হয়ে যাবে না।
সিমফোনি এক্সপ্লোরার ডব্লিউ ৫-এ রয়েছে ১ গিগাহার্জ প্রসেসর, যা সত্যিই চমকে দেয়ার মতো। দোকানে গিয়ে এর চেয়ে বেশি দামের ডব্লিউ ৫০ ঘেঁটে দেখা গেলো সেটার চেয়ে ডব্লিউ ৫-এর পারফরম্যান্স তুলনামূলক ভালো। অ্যাপ্লিকেশন ড্রয়ারে সোয়াইপ করতে গেলে তা আটকে আটকে যায় অন্য সেটগুলোয়। কিন্তু ১ গিগাহার্জ প্রসেসর ও গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট থাকায় ডব্লিউ ৫ বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
ডব্লিউ ৫-এ ইন্টারনাল মেমোরি রয়েছে ৫১২ মেগাবাইট যার মধ্যে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন ১৮০ মেগাবাইট। এর র্যাম একটু কম, মাত্র ২৫৬ মেগাবাইট, যার মধ্যে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন ১৮০ মেগাবাইট মাত্র। প্রথমে এটা নিয়ে একটু চিন্তায় পড়লেও কয়েকদিন ব্যবহারের পর র্যামের কারণে সেট ধীরগতির হয়ে যাওয়া বা এ জাতীয় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।
আর হ্যাঁ, সেটটির অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এটি দু’টি সিম একসঙ্গে স্ট্যান্ডবাই মোডে রাখতে পারে। সবচেয়ে কম দামে অ্যান্ড্রয়েড ডুয়েল সিম ফোন রয়েছে গ্যালাক্সি ওয়াই ডুয়োস যার দাম প্রায় ১৬ হাজার টাকা। তার প্রায় অর্ধেক দামে এই ডব্লিউ ৫ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
এবারে চলুন বিস্তারিত রিভিউ-এ যাওয়া যাক।
ডিসপ্লে
এক্সপ্লোরার ডব্লিউ ৫০ কিনতে গিয়ে এক্সপ্লোরার ৫ কিনে আনার নিশ্চয়ই যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমি নিজে সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো ব্যবহার করি যার পারফরম্যান্স নিয়ে আমি বেশ সন্তুষ্ট। তো এই সেটটি কিনতে গিয়ে স্বভাবতঃই অন্যগুলো পছন্দ হচ্ছিল না। এর প্রধান কারণ সেটের স্ক্রিন রেজুলেশন।
যদিও সিমফোনি ডব্লিউ ৫ সেটটি হাতে নিয়েই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু অন করার পর রেজুলেশন দেখে মোটেই পছন্দ হয়নি। বলা যায়, সেটটির দু’টি প্রধান সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে স্ক্রিন রেজুলেশন না থাকা। ৩ ইঞ্চি আকারের স্ক্রিনে ন্যূনতম ৩২০*৪৮০ রেজুলেশন থাকা উচিৎ। সেখানে এই সেটের ৩.২ ইঞ্চি আকারের স্ক্রিনে রেজুলেশন দেয়া হয়েছে মাত্র ২৪০*৩২০। শুধু এই কারণে অনেকেই সেটটি কেনা থেকে পিছিয়ে যেতে পারেন।
উল্লেখ্য, এই রিভিউতে ব্যবহৃত সব স্ক্রিনশট ডিফল্ট আকারেই দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আপলোডের আগে সাইজ কমানো হয়নি। এগুলো দেখেই আন্দাজ করতে পারবেন রেজুলেশন কতোটা খারাপ।
ইউজার ইন্টারফেস
সিমফোনি ডব্লিউ ৫ এর ইউজার ইন্টারফেস যথেষ্টই সুন্দর। যদি নিম্নমানের রেজুলেশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, তাহলেই আপনি এর ইউজার ইন্টারফেসের সহজ দিকগুলো টের পাবেন। হোমস্ক্রিনে অনেকগুলো স্ক্রিন যোগ করা যায়। ডিফল্ট একটি ঘড়ি ও আবহাওয়ার উইজেট যোগ করা থাকলেও এগুলো ইচ্ছেমতো মুভ করা যায়। আর এক হোমস্ক্রিন থেকে সোয়াইপ করে আরেক হোমস্ক্রিনে যাওয়ার সময়ও সুন্দর একটি থ্রিডি ইফেক্ট রয়েছে। এটা অবশ্যই দারুণ কিছু নয়, কিন্তু ১ গিগাহার্জ প্রসেসর থাকার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে ও ব্যাপারটা দেখতে ভালো লাগছে।
হোমস্ক্রিনে উইজেট যোগ করার সময় প্রতিবার আপনি বলে দিতে পারবেন উইজেটটির আকার কী রকম হবে। এটা বেশ ভালো একটি সুবিধা। কেননা, আপনি হয়তো কোনো কোনো উইজেটকে তুলনামূলক বড় আকারের রাখতে চান, আবার কোনো কোনো উইজেটকে ছোট করে দেখাতে চান। নতুন কোনো উইজেট যোগ করার সময়ই আপনি বলে দিতে পারবেন উইজেটটি কতটি রো ও কলাম নেবে। ব্যাপারটা বেশ পছন্দ হয়েছে।
নোটিফিকেশন বারটি আমাদের সবারই কাজে লাগে। ব্যাকগ্রাউন্ড ডাউনলোড, অ্যাপ্লিকেশন আপডেট, নতুন মেসেজ, মিসড কল, নতুন ইমেইল, ফেসবুক মেসেজ ইত্যাদি সবই উপরের নোটিফিকেশন বারে দেখানো হয়। এটি অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড সেটের মতোই নিচের দিকে টানলে পুরোটা চলে আসে। কিন্তু এখানে বাড়তি একটি জিনিস পাবেন যা অধিকাংশ জিঞ্জারব্রেডেই নেই, আর তা হলো টুলকিট।
টুলকিট থেকে আপনি সেটের বিভিন্ন অপারেশন চালাতে পারবেন। যেমন ব্লুটুথ অন করা, ওয়াই-ফাই রিসিভার অন করা, অ্যারোপ্লেন মোড অন করা, জিপিএস অন করা, সাউন্ড অফ করা ইত্যাদি। এসব কাজ করার জন্য সাধারণত হোমস্ক্রিনে শর্টকাট রাখতে হয় অথবা বারবার ভেতরে যেতে হয়। সিমফোনি ডব্লিউ ৫ সেটটিতে এসব সুবিধা দেয়া হয়েছে নোটিফিকেশন বারের সঙ্গে থাকা টুলকিটে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, যখন-তখন যে কোনো স্থান থেকে আপনি এসব অন/অফ করতে পারবেন। ব্যাপারটা সাধারণ মনে হচ্ছে, কিন্তু একবার ব্যবহার করা শুরু করলেই টের পাবেন এই টুলকিটটি কতটা কাজের।
নোটিফিকেশন বারে টুলকিটটি যোগ করে দেয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সিমফোনি ডব্লিউ ৫ পাচ্ছে অনেক বড় একটি প্লাস! 😉
ফোন কল ও কন্টাক্টস
সিমফোনি ডব্লিউ ৫ থেকে ফোন করা বেশ সহজ। বড় ডায়াল আইকনটি টাচ করলেই নাম্বার প্যাড চলে আসে। বাটনগুলোর সাইজ বেশ বড় বড় হওয়ায় নম্বর টাইপ করতে কোনো সমস্যাই হয় না। আর ফোন করার সময় যখনই আপনি ডায়াল আইকনে চাপ দেবেন তখনই একটি পপ-আপ আপনাকে জিজ্ঞেস করবে আপনি কোন সিম দিয়ে ফোনটি করতে চান। পপ-আপটি বেশ দ্রুত আসে ও দ্রুত কাজ করে তাই প্রতিবার ফোন করার সময় পপ-আপটিকে বিরক্তিকর কিছু মনে হয়নি।
কন্টাক্টস বা সিম কার্ডে থাকা ফোন নম্বরগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিটেক্ট করে নেয় সিমফোনি ডব্লিউ ৫ সেটটিতে। আমি এখনও আমার এক্সপেরিয়া মিনি প্রো সেটটিতে সরাসরি সিম কার্ড থেকে নম্বর আনতে পারিনি। এমনকি নম্বর সেভ করার সময়ও কোনোভাবেই সিম কার্ডে সেভ করতে পারিনি। হয়তো কোনো উপায় আছে, কিন্তু তা সরাসরি সম্ভব নয়। অন্যদিকে সিমফোনি ডব্লিউ ৫ সেটটিতে বেশ সুন্দরভাবে কন্টাক্টস ফোনে, জিমেইলে অথবা সিমে সেইভ করার উপায় রয়েছে। এদিক দিয়ে সিমফোনি ডব্লিউ ৫-কে আমার মিনি প্রো’র চেয়েও সহজ মনে হয়েছে।
মিউজিক
একটু আগেই বলেছিলাম, সেটটির দু’টো প্রধান সমস্যা রয়েছে। প্রথমটি স্ক্রিন রেজুলেশন, দ্বিতীয়টি হচ্ছে মিউজিক। আপনার যদি হেডফোন লাগিয়ে গান শোনার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনি এই দ্বিতীয় সমস্যাটি থেকে বেঁচে গেছেন। কিন্তু যদি লাউডস্পিকারে গান শোনার অভ্যাস বা ইচ্ছে দু’টোর একটাও থাকে, তাহলে সিমফোনি ডব্লিউ ৫ আপনাকে চরমভাবে হতাশ করবে। আমি জানি না এটা আমার ইউনিটের হার্ডওয়্যার সমস্যা নাকি বাই ডিফল্ট সব ডব্লিউ ৫-এই এমন, কিন্তু এর লাউডস্পিকারের আওয়াজ অত্যন্ত লো। এতো আস্তে আওয়াজ হয় যে রিংটোনই কোনো ব্যস্ত জায়গায় থাকলে ভালো করে শোনা যায় না।
কাজেই, মিউজিকের দিক থেকে সিমফোনি ডব্লিউ ৫ একেবারেই কোনো কাজের না বলে মতামত দিতে বাধ্য হচ্ছি।
ইন্টারনেট
সিমফোনি ডব্লিউ ৫ হ্যান্ডসেটটিতে ইন্টারনেট সংযোগ বেশ ভালোই কাজ করে। আমি টেস্ট করার সময় ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে বাংলালায়নের ইনডোর মডেমের সঙ্গে কানেক্ট করেছি। সেটে ব্রাউজিং স্পিড যথেষ্টই ভালো ছিল। স্টক ব্রাউজার অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড স্টক ব্রাউজারের চেয়ে আলাদা হলেও আমি আমার পছন্দের ডলফিন ব্রাউজার ডাউনলোড করে নিয়েছি। তবে স্টক ব্রাউজারের ছবি দেখতে পাবেন নিচে।
সিমফোনি সেটটির বাংলা ফন্ট রেন্ডারিং দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছি। যেখানে সনি এরিকসনের মতো উচ্চ মানের সেটগুলোয় বাংলার স্ট্যান্ডার্ড ফন্ট (সুটন্বি এমজে বা সোলাইমান লিপি) দেখা যায় না, সেখানে সিমফোনি ডব্লিউ ৫ সেটটিতে আমি পেয়েছি ঠিক সোলাইমান লিপির মতো ফন্ট।
যারা মোবাইলে বসে বাংলা সাইট ব্রাউজ করেন তাদের জন্য সিমফোনি ডব্লিউ ৫ একটি আদর্শ সেট হতে পারে। এছাড়াও ইন্টারনেটের অন্যান্য সুবিধা, জিপিএস চেক-ইন, গুগল ম্যাপস লোকেশন ইত্যাদি অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড সেটের মতোই ঠিকঠাকভাবে কাজ করে।
অ্যাপ্লিকেশন
সিমফোনি এক্সপ্লোরার ডব্লিউ ৫ সেটটিতে কিছু অ্যাপ্লিকেশন প্রি-ইন্সটল করাই ছিল। এর মধ্যে গুগলের সচরাচর যেসব অ্যাপ্লিকেশন থাকে (যেমন গুগল ম্যাপস, জিমেইল ইত্যাদি), সেগুলো ছাড়াও ছিল ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপ, অফিস সুট ৬ প্রো, ফ্রট নিনজা, ফ্রুট স্লাইস, অ্যাংরি বার্ডস, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাসিসট্যান্ট ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাসিসট্যান্ট সিস্টেমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী অ্যাপ্লিকেশন। নতুন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার পর তা মেমোরি কার্ডে ট্রান্সফার করার নোটিশসহ বিভিন্ন কাজে এটি খুবই দরকারী। যদিও এটির পূর্ণ সুবিধা উপভোগ করা যায় কেবল রুট করা সেটে, তবুও অ্যাপ্লিকেশনটি প্রি-ইন্সটল করে দেয়ায় অনেক ব্যবহারকারীই এর সুবিধা পাবেন।
গেমস
প্রিইন্সটল করা গেমগুলোর নাম তো আগেই বলেছি। এগুলোর পারফরম্যান্সও বেশ ভালোই ছিল। অ্যাংরি বার্ডস নয়, পারফরম্যান্স টেস্ট করেছি ফ্রুট নিনজা দিয়ে। গেমটি খেলার সময় আপুর উক্তি ছিল এরকম যে, আমার মিনি প্রো-তে ফলগুলো বাস্তব দেখাতো, কিন্তু সিমফোনিতে কার্টুন কার্টুন লাগছিল। অবশ্যই সেটা কম রেজুলেশনের জন্য। তবে সুখবর হচ্ছে এই যে, গেমগুলো আটকে যায়নি।
কমদামের এই অ্যান্ড্রয়েড সেটে মোটামুটি গেম খেলা গেলেও রেজুলেশনের জন্য গেমের মজাটা কাদামাটি হয়ে যাবে। তাই গেমের শখ থাকলে সিমফোনি ডব্লিউ ৫ না কেনাই ভালো হবে।
ক্যামেরা
অ্যান্ড্রয়েড সেট নেয়ার আগে আমি ব্যবহার করতাম স্যামসাং চ্যাম্প ডুয়োস। তার আগে ব্যবহার করতাম সিমফোনি এফটি৩০। সেটটি যথেষ্টই জনপ্রিয়তা কুড়াতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু সিমফোনির ক্যামেরা আমার কখনোই ভালো লাগেনি। এফটি৪০’র কথা বলতে পারবো না, তবে আমি কিনি সময় এফটি৩০-ই ছিল সিমফোনির সবচেয়ে দামি ফোন। আর এর ক্যামেরা ২ মেগাপিক্সেল বলা হলেও মূলত তা স্যামসাং চ্যাম্প ডুয়োসের ১.৩ মেগাপিক্সেলের চেয়েও খারাপ ছিল। আমার ধারণা ছিল অ্যান্ড্রয়েড সেটে ক্যামেরা কিছুটা ভালো হবে। কিন্তু না, ক্যামেরার দিক দিয়ে বরাবরের মতোই পিছিয়ে রয়েছে সিমফোনি।
দিনের আলোয় মোটামুটি মানের ছবি তুলতে পারবেন। কিন্তু শখের ফটোগ্রাফি বা ভালো মানের ভালো রেজুলেশনের ছবি তোলার জন্য সিমফোনি একেবারেই খারাপ। ইনডোর বা কম আলোয় ছবি দেখা যায় না বললেই চলে। পাঠকদের জন্য নিচে দেয়া হলো সিমফোনি ডব্লিউ ৫ দিয়ে তোলা সবচেয়ে ভালো ছবিটি।
বেঞ্চমার্ক
সিমফোনি ডব্লিউ ৫ বেঞ্চমার্কে অবিশ্বাস্য ৩,৬১৭ স্কোর পেয়েছে। এতো কম দামের সেটের জন্য এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য। কেবল দ্রুতগতির প্রসেসর ও গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটের কল্যাণে বেঞ্চমার্কে এতোটা ভালো স্কোর পেয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। আরও চমকে যাওয়ার বিষয় হচ্ছে, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস-এর চেয়েও বেশি স্কোর পেয়েছে সিমফোনি ডব্লিউ ৫।
এতো ভালো স্কোর পাওয়ার পরও আমি চোখ বুজে সবাইকে সিমফোনি ডব্লিউ ৫ নেয়ার পরামর্শ দিতে পারছি না কেবল কম রেজুলেশন ও কম আওয়াজের জন্য। রেজুলেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এটি আপনার চোখে লাগবে বারবার। টাকা দিয়ে সেট কিনে এতো কম রেজুলেশন দেখে পরে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। তাই কেনার সময় অতি উত্তেজিত না হয়ে ভালো করে রেজুলেশনটা দেখে নিন।
W25 ও W50-এর সাথে তুলনা
উপরের দু’টি সেট কিছুক্ষণের জন্য ঘেঁটে দেখেছি কেবল। অতটুকু সময় ঘেঁটে একটি বিস্তারিত রিভিউ লেখা যায় না। তবে দশ মিনিট সময়ে যতটুকু বুঝেছি, তা হলো এই তিনটি সেটের মধ্যে ডব্লিউ ৫-ই সেরা। ডব্লিউ ২৫ ও ৫০ এর প্রসেসর ১ গিগাহার্জেরও কম। দোকানে সেট হাতে নিয়ে অ্যাপ্লিকেশন ড্রয়ারে স্ক্রল করার সময়েই বিষয়টা টের পেয়েছি। নতুন সেট, অথচ আটকে যাচ্ছিল। কম প্রসেসর, কম জিপিইউ, প্রায় একই রকম নিম্নমানের রেজুলেশন থাকায় এই তিনটি সেটের মধ্যে আমি চোখ বন্ধ করে ডব্লিউ ৫ নেয়ার পরামর্শ দেবো।
কেন কিনবেন সিমফোনি ডব্লিউ ৫
- তুলনামূলক কম দামে অ্যান্ড্রয়েড ২.৩ জিঞ্জারব্রেড।
- দাম হিসেবে অবিশ্বাস্য হার্ডওয়্যার পারফরম্যান্স।
- দেখতে সুন্দর ও হাতে নিতে আরামদায়ক।
- দুইটি সিম একই সঙ্গে স্ট্যান্ডবাই মোডে রাখার সুবিধা।
- ওয়ারেন্টি রয়েছে ১ বছরের।
- দাম মাত্র ৬,৯৯০ টাকা।
কেন কিনবেন না সিমফোনি ডব্লিউ ৫
- খুবই নিম্নমানের স্ক্রিন রেজুলেশন।
- মিউজিকের ক্ষেত্রে লাউডস্পিকারের আওয়াজ খুবই কম।
- সামনে প্রক্সিমিটি সেন্সর না থাকায় কথা বলার সময় স্পর্শ লেগে ফোন কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- ব্যাটারি ব্যাকআপ তুলনামূলকভাবে কম। ডেটা কানেকশন অন রাখলে ১-১.৫ দিন যায়।
- তুলনামূলক কম রেজুলেশন থাকার কারণে অনেক গেমস এবং অ্যাপ্লিকেশন কাজ না করতে পারে।
- জেলি বিন আপডেট নাও পাওয়া যেতে পারে।
- রুট করা যদি যায়ও, এতে পুরোপুরি চলবে এমন কাস্টম রম নাও পাওয়া যেতে পারে। (অনুমিত)
সবকথার শেষ কথা
সিমফোনি এক্সপ্লোরার ডব্লিউ ৫ সত্যিই কমদামে একটি দারুণ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। এর ডুয়েল সিম সুবিধা, এতো কম দামে ১ গিগাহার্জ প্রসেসর ও জিপিইউ থাকা সত্যিই এতো কম দামে আশা করা যায় না। গ্যালাক্সি ওয়াই সেটেও ১ গিগাহার্জ প্রসেসর নেই। তবে কম্পিউটারের মতোই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসও কেনা উচিৎ আপনার চাহিদার দিকে দেখে। যেহেতু আপনি কেবল সাধারণ একটি ফোন কিনছেন না, তার অর্থই হচ্ছে এই যে, আপনি সেট থেকে আরও বাড়তি কিছু সুবিধা আশা করেন। কী কী সুবিধা আশা করেন তার উপরে নির্ভর করে কোন সেটটি আপনার জন্য সঠিক।
আমি মনে করি রিভিউটি পড়ে আপনি সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন ঘরে বসেই। আর হ্যাঁ, সিদ্ধান্ত নেয়ার পর কেন ও কী সিদ্ধান্ত নিলেন তা মন্তব্যের ঘরে লিখুন। আর যারা ইতোমধ্যেই সিমফোনি ডব্লিউ ৫ ব্যবহার করছেন, তারাও জানান সেটটি নিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা।