কমদামী অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোনের ঘোষণা আসছে ১৫ই সেপ্টেম্বর

অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান

এ মাসের মাঝামাঝি ভারতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে গুগল। এই অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পমূল্যের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ঘোষণা দিবে গুগল, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যান্ড্রয়েডপ্রেমীরা অবশ্যই জানেন যে এবারের গুগল আই/ও কনফারেন্সে গুগলের অন্যতম আলোচিত একটি বিষয় ছিল অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান। “অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান” ব্যানারের আওতায় ভারতীয় কিছু স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি সরাসরি গুগলের তত্ত্বাবধানে কমমূল্যের অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাজারে ছাড়বে। জুনের আই/ও কনফারেন্সের সময় ভারতের মাইক্রোম্যাক্স, স্পাইস এবং কার্বনের নাম ঘোষণা করা হয় যারা অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান-এর আওতায় স্মার্টফোন তৈরি করবে। তবে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এতোদিনে আরও বেশ কিছু কোম্পানি যুক্ত হয়েছে এই তালিকায়।

This article also appears on Android Kothon English

কেন অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান গুরুত্বপূর্ণ

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর তুলনামূলক কম সময়ে সারাবিশ্বের স্মার্টফোন মার্কেটের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এর একটি বড় কারণ হলো এই যে, অ্যান্ড্রয়েড-চালিত ফোন বিভিন্ন আকার, স্পেসিফিকেশন ও দামে পাওয়া যায়। হাই-এন্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পাশাপাশি একেবারেই কমদামেও অ্যান্ড্রয়েডের অভাব নেই বিশ্বজুড়ে। বলা যায়, অ্যান্ড্রয়েড মার্কেটের একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে মধ্যম দাম থেকে কমদামের ফোন ও ট্যাবলেট।

কিন্তু কমদামের অ্যান্ড্রয়েড মানেই খারাপ পারফরম্যান্স। এ যেন অনেকটা চিরন্তন সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাতেগোণা কিছু ডিভাইস ব্যতীত কম দামের অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা ট্যাবলেটে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায় না বললেই চলে। যেগুলোতে পাওয়া যায় তাও কাস্টম রম ব্যবহার করে। আর একটি বড় সংখ্যক ব্যবহারকারীই এসব কাস্টম রম সম্পর্কে জানেন না বা ওয়ারেন্টি হারানোর ভয়ে সেদিকে পা বাড়াতে চান না।

অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান

১০০ ডলারের নিচে ভালো পারফরম্যান্সের অ্যান্ড্রয়েড ফোন আনাই গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান-এর লক্ষ্য।

সমস্যাটা হচ্ছে, এসব কমদামী ও কম ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইসের জন্য ডেভেলপাররা বসে থাকেন না। একদিনে কম ক্ষমতার ডুয়েল কোর প্রসেসর, অন্যদিকে তুমুল শক্তিশালী কোয়াড-কোর প্রসেসর, ২/৩ গিগাবাইট র‌্যাম আর ব্যাপক রেজুলেশন সম্পন্ন ডিসপ্লের হাই-এন্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোন। ফলে দেখা যাচ্ছে, অ্যাপ্লিকেশন ও গেমস ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইসের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হলে তা লো-এন্ড ডিভাইসে ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারছে না। এ নিয়ে কেবল ডেভেলপারই নয়, মাথাব্যথা রয়েছে গুগলেরও।

কমদামী অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জগতে প্রথম সাড়া ফেলতে সক্ষম হয় মটোরোলার মটো জি এবং পরবর্তীতে মটো ই। এ দু’টি ফোন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও, গুগলের মতে, এরচেয়েও কমদামে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন পাওয়া যাওয়া উচিৎ। আর কেবল পাওয়া গেলেই হবে না, সেই ডিভাইসের পারফরম্যান্সও হতে হবে সন্তোষজনক। এই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই গুগল নিজেদের হাতে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে আর তারই ফলাফল এই অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান।

অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান

কমদামে, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ১০০ ডলারেরও কম মূল্যে (বাংলাদেশি টাকায় ৭-৮ হাজার টাকা) অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এখনই বাজার সয়লাব। কিন্তু এই দামের ফোনের পারফরম্যান্স নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্ট নন। গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান-এর আওতায় মাইক্রোম্যাক্স, কার্বনসহ ভারতীয় কোম্পানিগুলো ১০০ ডলারের কমমূল্যে তৈরি করবে কোয়ালিটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন। এগুলো তৈরি হবে গুগলের তত্ত্বাবধানে, তাই আশা করা যায় এগুলোর পারফরম্যান্স ও ভবিষ্যত আপডেটও পাওয়া যাবে।

ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানের ফোন আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছে গুগল। তবে বাংলাদেশে বসে আমাদের ভারতীয় ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোনগুলো পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর সে কারণেই সেপ্টেম্বর ১৫ তারিখের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান বিষয়ক গুগলের অনুষ্ঠানটি ভারতে বসবাসকারীদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গুগল কমদামী অ্যান্ড্রয়েডের দিকে নজর দিতে শুরু করে তাদের বর্তমান অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ কিটক্যাট-এর মাধ্যমে, যেটি ৫১২ মেগাবাইট র‌্যামেও ভালো চলবে বলে দাবি করা হয়। যদিও অনেক ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বলে কম হার্ডওয়্যারের ডিভাইসে কিটক্যাটের চেয়ে জেলি বিনের পারফরম্যান্স বেশি ভালো পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান-এর মধ্য দিয়ে সফটওয়্যারের পাশাপাশি এবার হার্ডওয়্যারের দিকেও নজর দিতে যাচ্ছে গুগল।

আগামীতে কমদামী অ্যান্ড্রয়েড মানেই মেজাজ খারাপ করা স্লো পারফরম্যান্স আর বিরতিহীন ল্যাগ এমন পরিস্থিতি আর থাকবে না, এমনটা আশা করাই যায়। আর তাই বাজেটে যারা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনতে চান, তাদের জন্য সেপ্টেম্বর ১৫ তারিখের ইভেন্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কী মত? অ্যান্ড্রয়েডের কমদামী স্মার্টফোনগুলোর বর্তমান পারফরম্যান্স কি সন্তোষজনক? গুগলের তত্ত্বাবধানে কমদামী অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাজারে এলে সেগুলো কেমন হবে বলে আপনার ধারণা?