একটি সময় ছিল যখন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার জন্য টাকা জমাতে হতো। অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনা অনেকের কাছেই স্বপ্নের বিষয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েডের দাম প্রায় সবার হাতের নাগালে চলে এসেছে। মাত্র ৪ হাজার টাকা থেকে বিভিন্ন দামে বিভিন্ন স্পেসিফিকেশনের অ্যান্ড্রয়েড ফোন দেশের বাজারেই রয়েছে। যদিও কমদামে অ্যান্ড্রয়েডের আসল অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় না, তবুও বেসিক অ্যান্ড্রয়েড হিসেবে খুব একটা খারাপ নয় কমদামী এসব অ্যান্ড্রয়েড ফোন।
আজ কমদামী অ্যান্ড্রয়েড হিসেবে সিম্ফনির সবচেয়ে কমমূল্যের দু’টি ফোন সিম্ফনি ডব্লিউ ১২ ও সিম্ফনি ডব্লিউ ১৫-এর মধ্যে তুলনামূলক রিভিউ প্রকাশ করা হলো। টাইট বাজেটে থাকলে এ দু’টি ফোনের মধ্যে কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে তা নিজেই দেখে নিন।
এই লেখাটির ইংরেজি সংস্করণ রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড কথন ইংলিশ-এ।
হার্ডওয়্যার
সুতরাং, ১ গিগাহার্জ প্রসেসর এই দাম অনুযায়ী মোটামুটি কাজ চালানোর মতো হলেও র্যাম ও রমের সীমাবদ্ধতা আপনাকে বেশ ভোগাবে।
ডিসপ্লে
আপনার ফোনের ডিসপ্লে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি পার্ট কেননা আপনি যতক্ষণ ফোনটি ব্যবহার করবেন ততক্ষণই ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। ফোন অপারেট করতেও ডিসপ্লের সঙ্গে ইন্টার্যাকশন লাগবে। সিম্ফনির ডব্লিউ ১২ ও ডব্লিউ ১৫ দু’টোতেই ৩.৫-ইঞ্চি টিএফটি ডিসপ্লে দেয়া হয়েছে যেগুলোর রেজুলেশন ৩২০*৪৮০ পিক্সেল। এই রেজুলেশন সাধারণত ৩ ইঞ্চি আকারের ডিসপ্লের জন্য পারফেক্ট। ৩.৫” ডিসপ্লেতে একটু সাদাটে দেখা যেতে পারে। কিন্তু এর আগে এর চেয়ে খারাপ রেজুলেশনের ফোন বাজারে এসেছে। তাই দাম অনুপাতে দু’টি ফোনের ডিসপ্লে ও টাচ রেসপন্সকেই ভালো বলা চলে।
ক্যামেরা
সিম্ফনি ডব্লিউ ১২ কিংবা সিম্ফনি ডব্লিউ ১৫ দু’টির কোনোটাতেই ফ্রন্ট ক্যামেরা নেই। তাই স্কাইপে ভিডিও চ্যাট করার স্বপ্ন এখানেই মাটি চাপা দিয়ে দিতে পারেন। তবে পেছনে সিম্ফনি ডব্লিউ ১২ দিয়েছে ০.3 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও ডব্লিউ ১৫-এ ভিজিএ ক্যামেরা। বুঝতেই পারছেন এসব ক্যামেরা দিয়ে অসাধারণ কোনো ছবি তোলার আশা করাও অস্বাভাবিক। বলা যায় নামেমাত্র এসব ক্যামেরা দেয়া হয়েছে কমদামের দু’টি ডিভা্ইসেই।
ইন্টারনেট ও অন্যান্য
দেশে ৩জি উৎসবের শুরু হওয়ায় অনেকেই আশাহত হতে পারেন যে, সিম্ফনির সবচেয়ে কমদামী এ দু’টি ফোনের কোনোটিতেই ৩জি সুবিধা নেই। কেবল এজ ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। তবে দু’টিতেই ওয়াই-ফাই রয়েছে, ফলে ওয়াই-ফাই আছে এমন এলাকায় থাকলে খুব একটা দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
দু’টো ফোনেই কেবল ব্লুটুথ রয়েছে এবং সিম্ফনি ডব্লিউ ১২-এ বাড়তি জি-সেন্সর রয়েছে। দু’টোর কোনোটিতেই জিপিএস নেই যেটি অন্যতম নেতিবাচক দিক হতে পারে। তবে মাত্র ২৫৬ মেগাবাইট র্যামের ডিভাইস গুগল ম্যাপস থেকেও খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই জিপিএস হয়তো খুব একটা মিস করবেন না এসব ফোনের ব্যবহারকারীরা।
ব্যাটারি
অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার সময় প্রথমেই ব্যাটারি ক্যাপাসিটি দেখে নিতে কখনোই ভুলবেন না। আপনার ফোন যতোই উন্নত হোক না কেন, এক চার্জে বেশিক্ষণ না থাকলে উন্নত হয়ে কোনো লাভ নেই। সিম্ফনি ডব্লিউ ১২-এ রয়েছে মাত্র ১,১০০ এমএএইচ ব্যাটারি। অন্যদিকে সিম্ফনি ডব্লিউ ১৫-এ রয়েছে ১,৪০০ এমএএইচ ব্যাটারি। আপনি হয়তো ভাবছেন ৩০০ এমএএইচ বেশি ব্যাটারিতে এমন আর কি আসে যায়! ১,৪০০ এমএএইচ খুব একটা বেশি না হলেও ১,১০০-এর চেয়ে হাজারগুণে ভালো হবে বাড়তি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি। আর আপনার সবসময়ই উচিৎ ব্যাটারি ক্ষমতা বেশি এমন ডিভাইস কেনা।
সিম্ফনি ডব্লিউ ১২ বনাম ডব্লিউ ১৫ – সিদ্ধান্ত
সিম্ফনি ডব্লিউ ১২-এর বাড়তি সুবিধা হলো এতে জি-সেন্সর রয়েছে। অন্যদিকে ডব্লিউ ১৫-এর সুবিধা হলো এতে বেশি ব্যাটারি রয়েছে। ডব্লিউ ১২-এর দাম ৪,৩৫০ টাকা এবং ডব্লিউ ১৫-এর দাম ৩,৯৯০ টাকা। সাধারণত বেশি দামের ফোনটি ভালো হয় বলে ধারণা করা হলেও এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হবে উল্টোটা।
কমদামে হলেও কেবল বাড়তি ব্যাটারির সুবিধার জন্য আপনার ডব্লিউ ১৫ নেয়া উচিৎ হবে। যদিও এই দু’টির কোনোটিতেই আপনি সন্তোষজনক পারফরম্যান্স পাবেন না, বিশেষ করে প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হলে অ্যান্ড্রয়েডের উপর আপনার নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাজেট যদি কম থাকে আর বাজেট বাড়ানোর কোনো উপায় না থাকে, তাহলে দু’টির মধ্যে বেশি ব্যাটারির সিম্ফনি ডব্লিউ ১৫ নেয়ারই পরামর্শ থাকবে।
সবশেষে আপনার মতামত কী এবং কেন তা আমাদের মন্তব্যের ঘরে জানাতে ভুলবেন না!
এই লেখাটির ইংরেজি সংস্করণ রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড কথন ইংলিশ-এ।