[এক্সক্লুসিভ] হ্যান্ডস-অন রিভিউঃ Symphony Xplorer ZII

পবিত্র রমজানে দেশের সবরকম বাজার এমনিতেই বেশ রমরমা। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে প্রযুক্তির বাজারে বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বিক্রির হারই সবচেয়ে বেশি। আর সেই বাজারকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে দেশীয় দুই শীর্ষ ব্র্যান্ড ওয়াল্টন ও সিম্ফনি। ঈদ সামনে রেখে দুটি ব্র্যান্ডই অনেকটা একসাথেই বাজারে নিয়ে এলো তাদের নতুন দুটি ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস।

কিছুদিন আগেই ওয়াল্টন তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস Walton Primo NX নিয়ে আসে, পাশাপাশি তারা Walton Primo R2 ও বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়। অপরদিকে সিম্ফনিও পাল্টা জবাবে নিয়ে আসে তাদেরও নতুন ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস Symphony Xplorer ZII, সাথে আনছে Symphony Xplorer ZI যেগুলো নিয়ে অ্যান্ড্রয়েড কথনে আগেই একটি নিউজ পাবলিশ করা হয়।

সপ্তাহখানেক আগেই আমরা Walton Primo R2 এর এক্সক্লুসিভ হ্যান্ডস-অন রিভিউ করেছিলাম। আমাদের ধারাবাহিক রিভিউয়ে আজ থাকছে Symphony Xplorer ZII এর এক্সক্লুসিভ হ্যান্ডস-অন রিভিউ।

Symphony Xplorer ZII

এক নজরে Symphony Xplorer ZII

  • প্রসেসরঃ মিডিয়াটেক MTK6589 কর্টেক্স এ৭ ভিত্তিক কোয়াড কোর প্রসেসর।
  • র‌্যামঃ ১ গিগাবাইট, ৯৭২ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য।
  • জিপিইউঃ পাওয়ারভিআর এসজিএক্স৫৪৪এমপি (PowerVR SGX 544MP)।
  • ডিসপ্লেঃ ৪.৮ ইঞ্চি HD, গোরিলা গ্লাস সমৃদ্ধ Super AMOLED ডিসপ্লে (১২৮০x৭২০ রেজলুশন), মাল্টি টাচ সাপোর্ট।
  • ক্যামেরাঃ ১৩ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস রিয়ার ক্যামেরা, ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা, এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং ও প্লেব্যাক।
  • স্টোরেজ ক্যাপাসিটিঃ অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটলের জন্য ২ গিগাবাইট এবং অন্যান্য ডাটা স্টোরেজের জন্য ১৪ গিগাবাইট। সঙ্গে মাইক্রো-এসডি কার্ডের মাধ্যমে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ বাড়ানোর সুবিধা।
  • অন্যান্যঃ থ্রিজি, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস, ২২০০ mAh ব্যাটারি, ৩.৫ মিমি অডিও জ্যাক পোর্ট, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ইত্যাদি।

Android Hardware Info এর চোখে Symphony Xplorer ZII

আনবক্সিং

Symphony Xplorer ZII এর সাথে সুদৃশ্য একটি বাক্স দেয়া হয়েছে। তাদের অন্যান্য ডিভাইসের বাক্সের মত এই ডিভাইসটির ক্ষেত্রেও তারা অযথা বড় না করে বাক্সের আকার ছোট রেখেছে। ফলে প্রয়োজনে বহন করতে কিংবা যত্ন সহকারে যেকোন জায়গায় রেখে দিতে খুব বেশি সমস্যা হয়না। এবার দেখে নেয়া যাক কী কী আছে এই বাক্সে:

  • একটি Symphone Xplorer ZII ডিভাইস
  • একটি 2200 mAh ব্যাটারি
  • ইয়ার পিস
  • চার্জার
  • ডাটা ক্যাবল
  • ম্যানুয়াল
  • ওয়ারেন্টি কার্ড
  • গ্রামীনফোনের অফার সম্পর্কিত তথ্য

বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন

ডিজাইনের দিক দিয়ে Symphony Xplorer ZII ডিভাইসটি এক কথায় অসাধারণ। এর পিওর ব্ল্যাক লেভেল গোরিলা গ্লাস ডিভাইসটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। উপর থেকে দেখতে ডিভাইসটি অনেকটাই নেক্সাস ডিভাইসগুলোর মত, ফলে এটি যে কারও নজর কাড়তে সক্ষম।

তাছাড়া গোরিলা গ্লাস হবায় এর সামনের দিকে স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভাবনাও কম। এছাড়া সচরাচর ডিভাইসগুলোর মত এর পেছন দিকটায় এবার রাবার-ম্যাট ইফেক্ট না দিয়ে তারা গ্লোসি করেছে। ফলে ডিভাইসটি দেখতে অন্য ডিভাইসগুলোর চেয়ে উজ্জ্বল মনে হয়। তবে গ্লোসি করায় এর পেছনের দিকে স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভাবনা আছে যা এর বিল্ড কোয়ালিটির একটি নেতিবাচক দিক।

Symphony Xplorer ZII ডিভাইসটির দৈর্ঘ ১৩৭.৮ মিলিমিটার, প্রস্থ ৬৯.৯ মিলিমিটার এবং পুরুত্ব মাত্র ১০ মিলিমিটার। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন ডিভাইসটি বেশ পাতলা।

ডিভাইসটির বাম দিকে রয়েছে পাওয়ার বাটন যা সহজেই হাতের নাগালে চলে আসে। আর ডান দিকে রয়েছে ভলিউম কমানো ও বাড়ানোর বাটন। এছাড়া এর মাইক্রো ইউএসবি পোর্টটিও ডিভাইসটির নিচে দেয়া হয়েছে।

সিপিইউ ও জিপিইউ

কম বাজেটের সাম্প্রতিক ডিভাইসগুলোর মত Symphony Xplorer ZII তেও দেয়া হয়েছে করটেক্স এ৭ ভিত্তিক ১.২ গিগাহার্জের এমটিকে৬৫৮৯ (MTK6589) কোয়াড কোর প্রসেসর। প্রসেসরটির পারফরম্যান্স বেশ ভাল হলেও বলে রাখা ভাল যে মিডিয়াটেক এর কোয়াড কোর প্রসেসরগুলো প্রকৃতপক্ষে ডুয়াল কোর হিসেবেই কাজ করে। খুব বেশি চাপ না পড়লে ৩য় ও ৪র্থ কোর দুটি কখনোই কাজ করেনা। আর কাজ করলেও ডিভাইসটি বেশ গরম হয়ে যায় আর কোর দুটি চালু হবার সময় কিছুটা ল্যাগ দেখা দেয় যা এই প্রসেসরটির একটি দুর্বলতা।

Antutu Benchmark এর পতায় Symphony Xplorer ZII

এছাড়া ডিভাইসটিতে দেয়া হয়েছে পাওয়ারভিআর এসজিএক্স৫৪৪এমপি (PowerVR SGX544MP) জিপিইউ যা গেমিং ও উচ্চ গ্রাফিক্সের কাজ করার জন্য বেশ উপযুক্ত। কম বাজেটের ডিভাইসগুলোর মাঝে এখন এই জিপিইউটিই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

র‍্যাম ও রম

Symphony Xplorer ZII তে রয়েছে ১ গিগাবাইট র‍্যাম। তবে ১ গিগাবাইট পুরোপুরি ব্যবহার করা যায়না, এর মাঝে ৯৭২ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য।

তবে ডিভাইসটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এতে ১৬ গিগাবাইট রম দেয়া হয়েছে। তার মাঝে ১.৯৭ গিগাবাইট বা প্রায় ২ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ হিসেবে থাকে। অর্থাৎ অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার জন্য আপনি ২ গিগাবাইট জায়গা পাবেন। এছাড়া ১৬ গিগাবাইট রম এর ১১.০৮ গিগাবাইট থাকে মূল এসডি কার্ড রূপে।

আর আপনি যদি কোন এক্সটার্নাল এসডি কার্ড ব্যবহার করেন তাহলে আপনার এক্সটার্নাল এসডি কার্ডটিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল এসডিতে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর ডিভাইসটিতে আপনি ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটার্নাল এসডি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

ডিসপ্লে ও টাচ রেসপন্স

Symphony Xplorer ZII ফোনটির অন্যতম আকর্ষণ হলো এর ডিসপ্লে। কারণ এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪.৮ ইঞ্চি প্রশস্ত ২য় জেনারেশন গোরিলা গ্লাস সমৃদ্ধ সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে যার রেজলুশন ১২৮০x৭২০।

Symphony Xplorer ZII এর Super AMOLED ডিসপ্লে

কম বাজেটের ফোনগুলোর মাঝে আমাদের কাছে এই ডিভাইসটির ডিসপ্লেই সবচেয়ে উন্নতমানের মনে হয়েছে। কারণ এর ডিসপ্লে একবার দেখার পর আপনার আর আইপিএস -এ ফিরে যেতে মন চাইবেনা। ডিসপ্লেটির কালার, উজ্জ্বলতা বা ব্রাইটনেস, শার্পনেস, কনট্রাস্ট, ভিউইং অ্যাংগেল ইত্যাদি বিবেচনা করলে বর্তমানে এই বাজেটের ভেতর এমন ডিসপ্লে আর একটিরও নেই। তাছাড়া পিওর ব্ল্যাক লেভেল ডিসপ্লে দেয়ায় ডিসপ্লেটি বন্ধ থাকা অবস্থাতেও ফোনটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়।

এছাড়া এর টাচ রেসপন্সও অসাধারণ। ইউজার ইন্টারফেস থেকে শুরু করে অ্যাপ্লিকেশন ও গেমিং এও এর টাচ রেসপন্সে আমরা কোনরকম ল্যাগ পাইনি। স্যামসাং গ্যালাক্সি, সনি এক্সপেরিয়া কিংবা এইচটিসি এর ডিভাইসগুলোর থেকে এর টাচ রেসপন্স কোন অংশে কম মনে হয়নি। তবে এই বাজেটের ফোনগুলোর মাঝে রেটিং করা হলে এর ডিসপ্লে ও টাচ রেসপন্সকে নিঃসন্দেহে ৫ এ ৫ ই দেয়া যায়।

ইউজার ইন্টারফেস

Symphony Xplorer ZII এর MUSE ইউজার ইন্টারফেস

Symphony Xplorer ZII ডিভাইসটিকে অন্য সব ডিভাইস থেকে একে আলাদা করেছে এর সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের ইউজার ইন্টারফেস। স্টক অ্যান্ড্রয়েড কিংবা কাস্টমাইজ্ড স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার না করে এতে ব্যবহার করা হয়েছে পুরোপুরি আলাদা একটি ইউজার ইন্টারফেস যা MUSE UI নামে পরিচিত।

হোমস্ক্রিনেই থাকবে সকল অ্যাপ্লিকেশন

এই ইউজার ইন্টারফেসটা অনেকটাই আইওএস ঘরানার। অর্থাৎ এতে কোন মেনু নেই, হোমস্ক্রিনেই আপনার ইন্সটল করা সব অ্যাপ্লিকেশন চলে আসবে। তবে হোমস্ক্রিনে বেশি আইকন দেখতে ভালো না লাগলে আপনি একটি আইকন বা ফোল্টারের ভিতরেই একাধিক অ্যাপ্লিকেশন রেখে দিতে পারেন।

একই ফোল্ডারে নিয়ে আসতে পারেন একাধিক অ্যাপ্লিকেশন

এছাড়া এই ইউজার ইন্টারফেসটির আরো কিছু চমৎকার দিক রয়েছে। যেমন আপনি যদি ১ আঙ্গুল দিয়ে নটিফিকেশন বারটি পুল ডাউন করেন তাহলে শুধুমাত্র আপনার ফোনে আসা নটিফিকেশনগুলো যেমন: মিস্ড কল, মেসেজ, মেসেঞ্জার, অ্যাপ্লিকেশন, আপডেট ইত্যাদির নটিফিকেশন দেখাবে। আবার ২ আঙ্গুল দিয়ে পুল ডাউন করলে আপনার ফোনের সিস্টেম কনট্রোলার অর্থাৎ ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস, মোবাইল ডাটা, ব্রাইটনেস, অটো-রোটেশন ইত্যাদি কনট্রোল করার অপশনগুলো আসবে। আর যদি ৩ আঙ্গুল দিয়ে পুল ডাউন করেন তাহলে ডিভাইসটি লক হয়ে যাবে। অর্থাৎ লক করা জন্য আপনাকে আর পাওয়ার বাটন প্রেস করতে হবেনা।

MUSE ইউজার ইন্টারফেসের নটিফিকেশন বার

তবে MUSE ইউজার ইন্টারফেস এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর এয়ার জেসচার ফিচার। হ্যা, আপনি ডিভাইসটিতে টাচ না করে কেবল হাতের ইশারাতেই ডিভাইস আনলক করাসহ পেজ স্ক্রল বা স্লাইড এর মত কিছু কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া এতে আই ট্র্যাকার ও রয়েছে। আপনি যতক্ষণ ডিভাইসটির দিকে তাকিয়ে থাকবেন ততক্ষণ ডিভাইসটির ডিসপ্লে বন্ধ হবেনা। এই ফিচারগুলো মূলত স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩ বা এস৪ এর মত হাই এন্ড ডিভাইসগুলোতে থাকলেও কম বাজেটের ফোনে নিয়ে আসায় তা আমাদের আসলেই অনেকটা অবাক করেছে। এজন্য যে সিম্ফনি আসলেই প্রশংসার দাবিদার তা অস্বীকার করা যায়না।

ক্যামেরা

Symphony Xplorer ZII ফোনটিতে দেয়া হয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেলের অটো ফোকাস রিয়ার ক্যামেরা। তাছাড়া সিম্ফনি তাদের ডিভাইসটির ফ্রন্ট ক্যামেরা সম্পর্কে সরাসরি কিছু না বললেও এতে আমরা ৫ মেগাপিক্সেল মানের ছবি পেয়েছি। অর্থাৎ Symphony Xplorer ZII ডিভাইসটিতে ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা রয়েছে।

এছাড়া সিম্ফনি ৭২০ পিক্সেল এর ভিডিও রেকর্ডিং এর কথা বলরেও এর ক্যামেরার সাহায্যে ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও রেকর্ড করাই সম্ভব। আর এর ডিফল্ট ক্যামেরা ইন্টারফেসেই প্যানারমাসহ বেশ কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। আলোকিত পরিবেশে ডিভাইসটি দিয়ে বেশ ভাল মানেরই ছবি তোলা সম্ভব।

কিন্তু এর ক্যামেরার একটি নেতিবাচক দিক হলো এটি সামান্য কম আলোতে বা রাতেরবেলা লাইটের আলোতে ফোকাস করতে পারেনা। আমরা একটি  Walton Primo N1 নিয়ে Symphony Xplorer ZII এর ক্যামেরার সাথে তুলনা করে দেখেছি। Walton Primo N1 ডিভাইসটি দিয়ে যেকোন আলোতেই ফোকাস করা সম্ভব, অপরদিকে Symphony Xplorer ZII এর ক্যামেরা দিয়ে অনেক বেশি আলো ছাড়া ফোকাস করা সম্ভব হয়নি। নিচে Walton Primo N1 এর ক্যামেরার ফ্ল্যাশ দিয়ে আলো বাড়িয়ে Symphony Xplorer ZII দিয়ে তোলা ফোকাস সহ একটি ইনডোর ছবির নমুণা দেয়া হলো।

বেঞ্চমার্ক

একটি ডিভাইসের ক্ষমতা ঠিক কতটুকু সেটি পরিমাপ করতেই মূলত বেঞ্চমার্ক করা হয়ে থাকে। আর বেঞ্চমার্ক অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাঝে বর্তমানে Antutu Benchmark অ্যাপ্লিকেশনটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাই প্রথমে Antutu Benchmark দিয়েই শুরু করা যাক।

Symphony Xplorer ZII এর Antutu Benchmark স্কোর

স্ক্রিনশটেই দেখতে পারছেন এর স্কোর এসেছে ‌১২৮৪৭ বা প্রায় ১৩০০০ এর কাছাকাছি। মূলত মিডিয়াটেক এর এই চিপসেট এর Antutu Benchmark স্কোর ১২-১৩ হাজারের ভেতরেই থাকে। তাই এখানে নতুনত্বের কিছু নেই। তবে এর Nenamark স্কোরটি আমাদের বলতে গেলে হতাশই করেছে।

ছবিতেই দেখতে পারছেন এর Nenamark2 স্কোর এসেছে মাত্র ৪৫.৮ যা কোয়াড কোর ডিভাইসের তুলনায় কিছুটা কমই বলা যায়। মূলত ডুয়াল কোর ডিভাইসগুলোতেই ৪০-৪৯ এর মাঝে স্কোর থাকে। কোয়াড কোর ডিভাইসগুলোতে সাধারণত ৫০ এর উপরই এফপিএস দেখা যায়।

গেমিং

এখনকার প্রজন্ম অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে যেসব কাজ করে থাকে তার মাঝে গেমিং অন্যতম। আর একটি ডিভাইস ঠিক কতটা শক্তিশালী তা উপলব্ধি করার জন্য গেমিং এর মাধ্যমে টেস্ট করাটা বেশ কার্যকরী। কারণ উচ্চক্ষমতার গেমগুলো চালানোর জন্য যেকোন ডিভাইসের সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রয়োগ দেখা যায়। আর ১ গিগাবাইট র‍্যাম, কোয়াড কোর সিপিইউ এর সাথে পাওয়ারভিআর এসজিএক্স৫৪৪ জিপিইউ থাকার কারনে এটিকে গেমারদের জন্য মোটামুটি উপযোগী একটি ফোনই বলা যায়।

তবে একই চিপসেট এর অন্যান্য ডিভাইস যেমন Walton Primo N1, Walton Primo NX, Walton Primo R2, Symphony Xplorer W125, Symphony Xplorer W150 ডিভাইসগুলোর থেকে এর এফপিএস (Nenamark2) কিছুটা কম আসায় গেমিং পারফরম্যান্সেও এর সামান্য প্রভাব দেখা যাবে। অন্যান্য ডিভাইসের মত এই ডিভাইসটিতেও কোনরকম ল্যাগ ছাড়াই গেম চললেও এফপিএস সামান্য কম থাকায় কিছুটা ফ্রেম স্কিপ করবে। এছাড়া গেমিং এর দিক দিয়ে ফোনটিতে আর কোন সীমাবদ্ধতা নেই।

Symphony Xplorer ZII তে খেলা হচ্ছে Into The Dead

গেমিং টেস্টের জন্য বরাবরের মত এবারও আমরা ডিভাইসটিতে গ্যাংস্টার ভেগাস, ইনটু দ্য ডেড, অ্যাসফাল্ট ৭, নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড, গ্র্যান্ড থেফট অটো: ভাইস সিটি, ডেড ট্রিগার এবং মর্ডান কমব্যাটে ৪ এর মত হাই গ্রাফিক্সের গেমগুলো ফুল গ্রাফিক্সে টেস্ট করে দেখেছি। কারন এসব গেম খেলার জন্য যেকোন ডিভাইসের র‍্যাম, সিপিইউ ও জিপিইউকে প্রচুর পরিমাণ কাজ করতে হয় যা ডিভাইসের মূল পারফরম্যান্সকে বের করে আনে।

শুধুমাত্র গ্যাংস্টার ভেগাস ছাড়া আর সবগুলো গেমই এই চিপসেটের ডিভাইসে উচ্চ গ্রাফিক্সে খেলা সম্ভব হয়েছে। গ্যাংস্টার ভেগাসও এই চিপসেটে হাই গ্রাফিক্সে খেলা সম্ভব হলেও প্রচুর ল্যাগ দেখা দেয়। তবে গ্রাফিক্স কমিয়ে নরমাল করে দিলে কোনরকম ল্যাগ ছাড়াই গেমটি খেলা সম্ভব।

কানেক্টিভিটি, ইন্টারনেট, সেন্সর ও অন্যান্য

ডুয়াল সিম সুবিধা সমৃদ্ধ Symphony Xplorer ZII -তে প্রায় সকল কানেকটিভিটি সুবিধাই দেয়া হয়েছে। ব্লুটুথ ভার্সন ৪, ওয়াইফাই, জিপিএসসহ প্রায় সবই রয়েছে এই ডিভাইসে। তবে এতে ওয়াইফাই ডিরেক্ট এর কোন ডিফল্ট অপশন নেই। তাই সরাসরি ওয়াইফাই দিয়ে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন না। তবে থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সহজেই তা করতে পারবেন।

এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য এতে ওয়াইফাই, জিপিআরএস/এজ এর পাশাপাশি ৩জি প্রযুক্তি দেয়া আছে। আছে ৩জি ব্যবহার করে ন্যাটিভ ভিডিও কলিং এর সুবিধাও। অর্থাৎ ভিডিও কলিং এর জন্য আপনাকে আলাদা কোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে হবে না, ৩জি ব্যবহার করে আপনি সরাসরিই ভিডিও কল করতে পারবেন।

এবার আসা যাক সেন্সর এর দিকে। পূর্বে সেন্সর নিয়ে কেউ মাথা না ঘামালেও বর্তমানে অনেকেই সেন্সর এর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ডিভাইস কিনছেন। এদিক দিয়ে Symphony Xplorer ZII তে প্রায় সবরকম সেন্সরই রয়েছে। অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর, অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর, রোটেশন ভেক্টর সেন্সর, কম্পাস সেন্সর, ম্যাগনেটিক সেন্সর সহ প্রয়োজনীয় প্রায় সবরকম সেন্সরই ডিভাইসটিতে উপস্থিত। তবে সাম্প্রতিক ডিভাইসগুলোতে থাকা জায়রোস্কোপ সেন্সরটি এতে নেই। কিন্তু এই সেন্সরটি যে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণও নয় তার বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেন।

এছাড়া এর ব্রাউজিং পারফরম্যান্সও বেশ সন্তোষজনক। ক্রোম কিংবা ফায়ারফক্স ব্রাউজার তো বটেই, এর ডিফল্ট ব্রাউজারের মাধ্যমেই বেশ ভাল গতিতেই আপনি ব্রাউজ করতে পারবেন। তাছাড়া ইবুক পড়ার জন্যও ডিভাইসটি বেশ উপযুক্ত। ৪.৮ ইঞ্চি ডিসপ্লে থাকার ফলে এটিকে একবারে ছোট ডিসপ্লের ফোনও বলা যায়না, আবার ফ্যাবলেটও বলা যায়না। তবে বই পড়ার জন্য নিঃসন্দেহে একটি দারুন ডিভাইস।

ব্যাটারি ব্যাকআপ

Symphony Xplorer ZII তে দেয়া হয়েছে ২২০০ mAh এর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। ৪.৮ ইঞ্চি প্রসস্ত ডিসপ্লের জন্য একে বেশ ভালই বলা চলে। টানা ডিসপ্লে অন করে কাজ করলে এতে আপনি ৬-৭ ঘন্টার মত ব্যাকআপ পাবেন, আর হাই গ্রাফিক্সের গেম খেলার ক্ষেত্রে পাবেন প্রায় ৪-৫ ঘন্টা ব্যাকআপ।

তবে সাধারণভাবে ব্যবহার করলে দিনে ১ বার চার্জ করাই যথেষ্ট। অর্থাৎ একটু যত্ন সহকারে ব্যবহার করলে দিনে ১ বার চার্জ দিয়ে আপনি অনায়াসেই ২৪ ঘন্টা ব্যবহার করতে পারবেন।

সীমাবদ্ধতা

Symphony Xplorer ZII ডিভাইসটি সিম্ফনির ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস হলেও এতে বেশ ভাল সংখ্যার কিছু সীমাবদ্ধতা আমরা লক্ষ্য করেছি। প্রথমত এর বডি ও ডিজাইন দিয়েই শুরু করা যাক। আমরা আগেই বলেছি এর বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভাল মানের হলেও এর পেছনের দিকটার কোয়ালিটি খুব একটা ভালো নয়। সামনে গোরিলা গ্লাস থাকায় স্ক্র্যাচ না পড়লেও এর পেছনটা গ্লোসি করায় এতে সহজেই স্ক্র্যাচ পড়বে।

দ্বিতীয় সীমাবদ্ধতা হলো এর প্রসেসর। মিডিয়াটেক এর কর্টেক্স এ৭ ভিত্তিক প্রসেসরগুলোকে কোয়াড কোর বলা হলেও এগুলো মূলত ডুয়াল কোর হিসেবেই কাজ করে, যা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। মাত্রাতিরিক্ত চাপ না পড়লে ৩য় ও ৪র্থ কোর দুটি কখনোই কাজ করেনা। একারণেই মিডিয়াটেক এর ডিভাইসগুলোর বেঞ্চমার্ক স্কোর নামিদামি ব্র্যান্ডের ডুয়াল কোর ডিভাইসগুলোর সমান হয়ে থাকে। মূলত আর্কিটেকচারের কারণেই এটি হয়ে থাকে।

তৃতীয় সীমাবদ্ধতা হলো এর ক্যামেরায়। সাধারণ আলো কিংবা দিনের আলোতে এর ক্যামেরাটি দিয়ে বেশ ভাল মানের ছবি তোলা সম্ভব হলেও কম আলোতে এর ফোকাস করার ক্ষমতা একবারে নেই বললেই চলে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও রাতের বেলা সাধারণ আলোতে ইনডোরে কোন ছবি ফোকাস করে তুলতে পারিনি।

এর চতুর্থ সীমাবদ্ধতা হলো এর এফপিএস। বেঞ্চমার্ক এর ঘরেই এতক্ষণে দেখে ফেলার কথা এর Nenamark2 টেস্টে এর স্কোর এসেছে মাত্র ৪৫.৮ এফপিএস যা কোয়াড কোর ডিভাইসের তুলনায় অনেকটা কম এবং গেমিং বা গ্রাফিক্সের কাজ করার ক্ষেত্রে যা বাঁধা সৃষ্টি করবে। তবে একই চিপসেটের তৈরি Walton Primo N1, Symphony Xplorer W125 কিংবা Symphony Xplorer W150 এর মত ডিভাইসে যেখানে এফপিএস ৫০ এরও বেশ উপরে এসেছে সেখানে ৪০ এর ঘরে এফপিএস আমাদের আসলেই অবাক করেছে।

তবে একই চিপসেটের ডিভাইসগুলোর সাথে তুলনা করে এতটুকু মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে বলা যায় যে এফপিএস কম আসাটা ডিভাইসটির কোন হার্ডওয়্যার ফল্ট না। মূলত ডিভাইসটিতে দেয়া রমেই কোন সমস্যা আছে যার কারণে ৪৫ এর উপর এফপিএস উঠছেনা। ডিভাইসটির এই বাগগুলো ঠিক করে ফার্মওয়্যার আপডেট করলেই এর সমাধান হবার কথা। কিন্তু ওয়াল্টন এর মত সিম্ফনি তাদের গ্রাহকদের জন্য অফিসিয়ালি ফার্মওয়্যার উন্মুক্ত করে না দেয়ার কারণে বর্তমানে তা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে অ্যান্ড্রয়েড কথন এর পক্ষ থেকে সিম্ফনির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের কাছ থেকে সৌজন্যমূলক আচরণ পাওয়া যায়নি। ফার্মওয়্যার রিলিজ করা থেকে শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ডিভাইস রিভিউ করার জন্য তাদেরই অফিস কিংবা শো-রুমে সাময়িক সময়ের জন্য ডিভাইস চাওয়ার অনুরোধ করা হলেও তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই সিম্ফনির ডিভাইসগুলো অফিসিয়ালি রিভিউ করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়না।

সিম্ফনির পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি রিভিউ করার জন্য  আমাদের ডিভাইস না দেয়ার পরও আমরা Symphony Xplorer ZII ফোনটির রিভিউ করতে পেরেছি আমাদের অ্যান্ড্রয়েড কথন গ্রুপ এর অন্যতম সদস্য Biborno Bornil ভাই এর কারণে। তার কেনা ডিভাইসটি আমাদের রিভিউ করতে দেয়ার জন্য তাকে অ্যান্ড্রয়েড কথন টিম এর পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

এর বাইরে এই ডিভাইসটিতে OTG সাপোর্ট আছে বলে অনেকের ধারণা থাকলেও সেই ধারণাটি আসলে ভুল। Symphony Xplorer ZII ফোনটিতে কোন ওটিজি সাপোর্ট নেই। আর অনেক অ্যাডভান্সড ব্যবহারকারীরাই ডিভাইস রুট করা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এক্ষেত্রে অবশ্য কোন সীমাবদ্ধতা নেই। অ্যান্ড্রয়েড কথন এই প্রকাশিত হওয়া হুবুহু Symphony Xplorer W125 রুট করার প্রক্রিয়াতেই আপনি Symphony Xplorer ZII ডিভাইসটিও রুট করতে পারবেন। এসব ছাড়া ডিভাইসটিতে আর কোনরকম সীমাবদ্ধতা বা বাগ আমরা পাইনি।

দাম ও সিদ্ধান্ত

যেকোন ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই ক্রেতার কাছে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে তা হলো এর দাম। সিম্ফনি ও গ্রামীনফোন এর যৌথ উদ্যোগে বাজারে ছাড়া Symphony Xplorer ZII ডিভাইসটির দাম রাখা হয়েছে ১৯,৫০০ টাকা। গ্রামীনফোনের সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে রিলিজ করায় ১৯,৫০০ টাকায় ফোনটি কিনলে আপনি গ্রামীনফোনের বেশ কিছু অফার ও বোনাসও পাবেন। তবে গ্রামীনফোনের এই অফারের বাইরে আনঅফিসিয়ালি কিছু দোকানে এর থেকে কিছুটা কম দামেও ডিভাইসটি পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকে আমাদের জানিয়েছেন।

এবার মূল সিদ্ধান্তে আসা যাক। ১৯,৫০০ টাকা দামটি অনেকের কাছে একটু বেশি মনে হলেও ২য় জেনারেশনের গোরিলা গ্লাস সমৃদ্ধ সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে ও এয়ার জেসচারের মত সব ফিচার থাকায় তা আমাদের কাছে যথাযতই মনে হয়েছে। তবে শুধুমাত্র ফার্মওয়্যারের বাগগুলো ফিক্স করে সিম্ফনি একটি ফার্মওয়্যার রিলিজ করলেই তা এর দামের যথার্থতা পুরোপুরি প্রমাণ করতে সক্ষম হবে।

আপনার কী মনে হয় সিম্ফনির এই নতুন ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসটির মাধ্যমে বাজারে থাকা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে তারা এগিয়ে যেতে পারবে? এছাড়া রিভিউটি পড়ার পর ডিভাইসটি কিনবেন কি কিনবেন না সে ব্যাপারে আপনার যুক্তিগুলো আমাদের কাছে তুলে ধরুন। ডিভাইসটি সম্পর্কে আপনার যেকোন জিজ্ঞাসা বা মতামতও আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আর এমনই সব এক্সক্লুসিভ রিভিউ আপনার ফেসবুক হোমপেইজে পেতে যোগ দিন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড কথন এর অফিসিয়াল পাতায়