ফার্স্ট লুকঃ Walton Primo NX

Walton Primo সিরিজের ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে দেশের বাজারে বর্তমানে বেশ ভাল প্রভাব বিস্তার করছে ওয়াল্টন। তাছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রথম ফ্যাবলেট এনেও এরই মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তারা। তাদের প্রথম ফ্যাবলেট Walton Primo N1 এর ব্যাপক সাফল্যের পর এবার দেশের বাজারে তারা আরও একটি ফ্যাবলেট নিয়ে আসছে। ওয়াল্টন তাদের এই নতুন ফ্যাবলেটটির নাম দিয়েছে Walton Primo NX। দেশের অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মতে ডিভাইসটি Walton Primo N1 এর জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

বর্তামানে বসুন্ধরা সিটির ওয়াল্টন প্লাজাতে Walton Primo NX এর জন্য প্রি-অর্ডার নেয়ার পাশাপাশি পরখ করে দেখারও সুযোগ দিচ্ছে ওয়াল্টন। তবে হ্যান্ডস-অন রিভিউ দেয়ার মত সময় ও সুযোগ না দেয়ায় বসুন্ধরা সিটি থেকে ঘুরে এসে এখন কেবল ফার্স্ট লুকটাই দেয়া সম্ভব হচ্ছে। চলুন এবার এক নজরে দেখে নেয়া যাক কী আছে এই ডিভাইসে।

Walton Primo NX

বসুন্ধরা সিটির ওয়াল্টন প্লাজা থেকে Walton Primo NX এর ছবি তুলে এবং ডিভাইসটি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছেন অ্যান্ড্রয়েড কথন গ্রুপ -এর নিয়মিত সদস্য জোনায়েদ আহমেদ জুনাইদ। এজন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সিপিইউ ও জিপিইউ

Walton Primo NX ডিভাইসটিতে এবার থাকছে থাকছে কর্টেক্স এ৭ ভিত্তিক মিডিয়াটেক এর ২৮ ন্যানোমিটার এমটিকে ৬৫৮৯ (MTK 6589) কোয়াড কোর প্রসেসর। আর বরাবরের মত থাকছে সেই পাওয়ারভিআর এসজিএক্স৫৪৪ (PowerVR SGX544) জিপিইউ । সিপিইউ ও জিপিইউ এর দিক দিয়ে তেমন পরিবর্তন না আনলেও কেন এটি N1 কে ছাড়িয়ে যাবে সে ব্যাপারে সামনেই বিস্তারিত থাকছে।

র‍্যাম ও স্টোরেজ

Walton Primo N1 এর মত Walton Primo NX এও ওয়াল্টন দিয়েছে ১ গিগাবাইট র‍্যাম যার মাঝে ৯৭০ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। আর সাথে থাকছে ৪ গিগাবাইটের ইন্টারনাল স্টোরেজ। এছাড়া এক্সটার্নাল এসডি কার্ড স্লটের মাধ্যমে আপনি ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত আপগ্রেড করতে পারবেন।

কিন্তু ৪ গিগাবাইট ইন্টার্নাল স্টোরেজের মাঝে কেবল ১ গিগাবাইটই আপনি অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। বাকি ৩ গিগাবাইট মূল এসডি কার্ড হিসেবে থাকবে। তবে আপনি যদি কোন এক্সটার্নাল এসডি কার্ড লাগিয়ে ব্যবহার করেন তবে আপনার এক্সটার্নাল এসডি কার্ডটিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল এসডি কার্ডে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

ডিসপ্লে

Walton Primo N1 এর মত Walton Primo NX এও থাকছে ৫.৩ ইঞ্চি প্রসস্ত গোরিলা গ্লাস সমৃদ্ধ আইপিএস ডিসপ্লে। তবে ডিসপ্লের দিক দিয়ে যা Walton Primo N1 -এর থেকে Walton Primo NX কে আলাদা করেছে তা হলো এর পিওর ব্ল্যাক লেভেল আইপিএস ডিসপ্লে যা ডিভাইসটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

এছাড়া ডিসপ্লের চারপাশে ৩.৯ মিলিমিটারের একটি ফ্রেমও রয়েছে। আর Walton Primo NX -এ এবার থাকছে ১২৮০x৭২০ রেজুলেশনের এইচডি ডিসপ্লে।

ক্যামেরা

ক্যামেরার দিক থেকেও Walton Primo NX -কে  N1 এর থেকে এগিয়ে রাখতে হবে কারণ এতে দেয়া হয়েছে CMOS সেন্সর বিশিষ্ট ফ্ল্যাশসহ ১৩ মেগাপিক্সেলের ব্লু গ্লাসের রিয়ার ক্যামেরা। ওয়াল্টন এর দাবি, ব্লু গ্লাসের এই ক্যামেরা সমান মেগাপিক্সেলের অন্যান্য ক্যামেরার চেয়ে স্পষ্ট ছবি ধারণ করতে সক্ষম। রিয়ার ক্যামেরা ছাড়াও এতে ৩ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরাও রয়েছে। এছাড়া উভয় ক্যামেরা দিয়ে ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও-ও ধারণ করা সম্ভব। তবে এর ক্যামেরার মূল আকর্ষণ হলো এতে জায়রোস্কোপ সেন্সর থাকায় আপনি চাইলে অ্যান্ড্রয়েড ৪.২ এর ফটোস্ফিয়ার ক্যামেরাও ব্যবহার করতে পারবেন।

ইউজার ইন্টারফেজ

অ্যান্ড্রয়েড ৪.২.১ জেলি বিন চালিত Walton Primo NX এর ইউজার ইন্টারফেসে আগের ডিভাইসগুলোর চেয়ে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি। বলতে গেলে ডিভাইসটিতে তারা সরাসরি জেলি বিন এর স্টক ইন্টারফেসই ব্যবহার করেছে। তবে ওয়াল্টন ডিভাইসটির সাথে যে লঞ্চারটি ইন্সটল করে দিয়েছে তা আমাদের কাছে কিছুটা ল্যাগি বলে মনে হয়েছে। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনি কেনার পরই ডিভাইসটিতে নতুন একটি লঞ্চার ইন্সটল করে নেবেন।

সেন্সর ও মূল আকর্ষণ

এবার ডিভাইসটির মূল আকর্ষণে আসা যাক। Walton Primo N1 সফল হলেও অনেকেই ডিভাইসটি ব্যবহার করে পুরোপুরি খুশি হতে পারেনি এর সেন্সরের অভাবে। মূলত জায়রোস্কোপ সেন্সর না থাকাই এর প্রধান ছিল কারণ যার ফলে ডিভাইসটিতে ফটোস্ফিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার করা যায়নি।

তবে সেই অভাবটি ওয়াল্টন এবার পূরণ করেছে তাদের নতুন ফ্যাবলেট Walton Primo NX -এর মাধ্যমে। কারণ এবার এই ডিভাইসটিতে তারা প্রায় সবরকম সেন্সরই যুক্ত করেছে। সেন্সরগুলোর মাঝে জায়রোস্কোপ সেন্সর, ৩ডি অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর, গ্রাভিটি সেন্সর, লিনিয়ার অ্যাক্সেলেরেশন সেন্সর, অরিয়েন্টেশন সেন্সর, কারেক্টেড জায়রোস্কোপ সেন্সর, রোটেশন ভেক্টর, ব্রাইটনেস সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর, ম্যাগনেটিক ফিল্ড সেন্সর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এতে জিপিএস সহায়তাকারী একটি বিশেষ সেন্সরও রয়েছে।

ডিভাইসটির আরেকটি আকর্ষণ হলো এতে OTG সাপোর্টও রয়েছে। দেশীয় ব্র্যান্ডের সম্ভবত এটাই প্রথম স্মার্টফোন বা ফ্যাবলেট যেটিতে OTG সাপোর্ট থাকবে। অর্থাৎ এই ফ্যাবলেটটিতে চাইলে আপনি পেনড্রাইভ, কীবোর্ড, মাউস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন। এর বাইরে এতে MHL (Mobile High-Definition Link) পোর্টও থাকছে যার সাহায্যে HDMI পোর্টে যুক্ত করে আপনি টিভি কিংবা মনিটরেও আপনার ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারবেন।

ব্যাকআপ

Walton Primo N1 এর মত Walton Primo NX এও দেয়া হয়েছে ৩০০০ mAh এর ব্যাটারি। তবে হ্যান্ডস-অন রিভিউ করার সুযোগ না থাকায় এতে ঠিক কতক্ষণ ব্যাকআপ পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে এখনি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছেনা।

অন্যান্য

এসবকিছুর বাইরে ডিভাইসটিতে ডুয়াল সিম সাপোর্ট, থ্রিজি, জিপিএস, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, রেকর্ডিং সুবিধাসহ এফএম রেডিও, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট, ৩.৫ মিলিমিটার অডিও জ্যাক ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়া OTG সাপোর্ট ও MHL পোর্ট তো আছেই।

শেষকথা

ডিভাইসটি কিনবেন কি কিনবেন না, কিংবা প্রি অর্ডার করবেন কিনা সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে যে ব্যাপারটি সবার আগে জানা প্রয়োজন তা হচ্ছে ডিভাইসটির দাম। ওয়াল্টনের পক্ষ থেকে এর দাম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও তারা আনুমানিকভাবে জানিয়েছেন এর দাম ১৮,০০০ টাকার কাছাকাছি হবে।

ওয়াল্টন আশা করছে ডিভাইসটি তারা জুলাই এর শেষেই দেশের বাজারে ছাড়তে পারবে। তবে এখন যারা প্রি-অর্ডার করবেন তাদের মাঝে স্ক্র্যাচ কার্ডের মাধ্যমে কিছু ভাগ্যবান বিজয়ীদের মোট দামের উপর ৬০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেবে ওয়াল্টন।

যদি আপনি ডিভাইসটি আসলেই কিনতে চান, তাহলে দেরি না করে এখনি ঘুরে আসুন বসুন্ধরা সিটির ওয়াল্টন প্লাজায়। এছাড়া ডিভাইসটি সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামতও আমাদের জানাতে পারেন। আর এমনই নতুন সব ডিভাইসের খবরাখবর পেতে চোখ রাখুন অ্যান্ড্রয়েড কথন এর ফেসবুক পাতায়