হ্যান্ডস-অন রিভিউঃ Archos Gamepad – সাশ্রয়ী গেমিং ট্যাব

দেশের বাজারে ট্যাবের চাহিদার কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। একটা সময় ছিল যখন অ্যান্ড্রয়েড ফোনের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে এইচডি গেমিং এর জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত না হওয়ায় এবং দাম প্রায় একই হওয়ায় অনেকেই এখন বড় স্ক্রিনের ট্যাবের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। এ কারনেই ফোনের চেয়ে এখন অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবের চাহিদাই তুলনামূলক বেশি। আর সেই ট্যাব যদি হয় গেমিং এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি তাহলে তো কথাই নেই!

আজ এমনই একটি গেমিং ট্যাবের রিভিউ করছি যার নাম Archos Gamepad। গেমপ্যাড নিয়ে কিছু বলার আগে প্রথমেই Archos সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।

Archos ট্যাবগুলো চায়নাতে তৈরি হলেও Archos মূলত একটি ফ্রেঞ্চ ব্র্যান্ড। ফ্রান্সের হেডকোয়ার্টার থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে সচরাচর চাইনিজ ডিভাইসগুলোর চেয়ে Archos এর অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর বিল্ড কোয়ালিটি তুলনামূলক বেশ ভালো হয়। তাছাড়া ট্যাবগুলোর ডিজাইনও সকলের নজর কাড়তে সক্ষম। বর্তমানে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল Riverside Trade Link-ই Archos এর ট্যাব আনছে।

এবার মূল বিষয়ে আসা যাক। Archos Gamepad টি মূলত গেমিং জন্য তৈরি করা হলেও এতে একটি সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবের সবকিছুই করা যায়। গেমিং এর জন্য এতে রয়েছে আলাদা জয়স্টিক/অ্যানালগ স্টিক এবং এক্সট্রা বাটন যা দ্বারা ট্যাবের সাধারণ কাজ করাও সম্ভব। ফলে টাচস্ক্রিনের প্রতি চাপ অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া এতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের রকচিপ-বেসড চিপসেট যা গেমার ছাড়াও সাধারন ব্যবহারকারীদের মাঝেও ট্যাবটিকে আকর্ষনীয় করে তুলেছে।

এক নজরে Archos Gamepad

  • প্রসেসরঃ Rockchip 3066 এআরএম কর্টেক্স এ৯ বেসড ১.৬ গিগাহার্জ ডুয়াল কোর
  • জিপিইউঃ Mali 400 MP4 কোয়াড কোর যা 3D OpenGL (ES 2.0) সমর্থিত
  • র‍্যামঃ ১ গিগাবাইট
  • ডিসপ্লেঃ ৭” ক্যাপাসিটিভ IPS ডিসপ্লে (১০২৪x৬০০ রেজুলেশন)
  • ওএসঃ অ্যান্ড্রয়েড ৪.১ জেলি বিন
  • ক্যামেরাঃ ০.৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা
  • স্টোরেজঃ ইন্টারনাল ৮ গিগাবাইট যার ৪ গিগাবাইটই অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটলের জন্য ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া মাইক্রো এসডি স্লটও রয়েছে যার সাহায্যে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত আপগ্রেডে করা সম্ভব।
  • পোর্টঃ মাইক্রো ইউএসবি, মিনি এইচডিএমআই, ৩.৫ এমএম অডিও জ্যাক পোর্ট
  • বিশেষ আকর্ষনঃ বিল্ট ইন গেমিং কনট্রোলার, ডুয়াল স্পিকার, ওটিজি সাপোর্ট

আনবক্সিং

কেনার পর প্রথমেই ট্যাবটির যে বিষয়টি নজর কাড়বে তা হলো এর বড় আকারের বক্স ও প্যাকিং পদ্ধতি। প্রটেক্টিভ ফোমের প্যাক ছাড়াও এর ভেতর আরও একটি বক্সের মাধ্যমে ট্যাবটিকে ঢেকে রাখা হয় ফলে ট্যাবটি বেশ নিরাপদ থাকে। তাছাড়া বক্সের ভেতর থাকা অ্যাক্সেসরিজও কম নয়। বক্সটি খুললে আপনি পাচ্ছেনঃ

  • একটি আর্কোস গেমপ্যাড
  • একটি সুদৃশ্য মাইক্রো ইউএসবি চার্জার
  • চার্জারের জন্য ৩টি ভিন্ন ধরনের পিন
  • একটি মাইক্রো ইউএসবি ডাটা ক্যাবল
  • একটি ইয়ারফোন
  • ইংলিশ ম্যানুয়াল
  • ছবিসহ গেমিং কী ম্যাপিং ম্যানুয়াল

বিল্ড কোয়ালিটি এবং ডিজাইন

আগেই বলেছি আর্কোসের ট্যাবগুলো সচরাচর চাইনিজ ট্যাবগুলোর চেয়ে আর্কোসের বিল্ড কোয়ালিটি একটু উন্নত। গেমিং এর জন্য দুপাশে আলাদা বাটন থাকলেও ট্যাবটি দেখতে বেশ স্মার্ট।

গেমিং কন্ট্রোলার থাকার পরও ট্যাবটিকে সাধারণ ট্যাবের মতই স্লিম করে বানানো হয়েছে যার জন্য এর ডিজাইনারের প্রশংসা করতেই হয়। প্লাস্টিক বডি হলেও এর স্লিম ও আকর্ষনীয় ডিজাইনের সাথে এর বিল্ড কোয়ালিটি যে কারও নজর কাড়তে সক্ষম।

ডিসপ্লে ও টাচ রেসপন্স

এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৭” প্রশস্ত ৫ পয়েন্ট মাল্টিটাচ ক্যাপাসিটিভ IPS ডিসপ্লে যার রেজুলেশন ১০২৪x৬০০ অর্থাৎ এতে রয়েছে গেমিং ও ভিডিও প্লেব্যাকের জন্য পারফেক্ট এইচডি ডিসপ্লে। ডিসপ্লে ব্রাইটনেসের পাশাপাশি টাচ রেসপন্সও অসাধারণ। সাধারণত চাইনিজ ডিভাইসগুলোর টাচ রেসপন্স তেমন সুবিধার হয় না বলে ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আর্কোস গেমপ্যাডটির টাচ রেসপন্স আমাদের কাছে কোন অংশেই স্যামসাং এর মত ব্র্যান্ডের ট্যাবগুলোর চেয়ে খারাপ মনে হয়নি।

ইউজার ইন্টারফেস

আর্কোস গেমপ্যাডটিতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৪.১ জেলি বিনেরই প্রায় ডিফল্ট ইউজার ইন্টারফেসটিই। খুব সামান্য কিছু পরিবর্তন করায় এটিকে গুগলের পিওর অ্যান্ড্রয়েডই বলা যায় কারণ সাধারণত চাইনিজ ট্যাবগুলোর মতো এতে অপ্রয়োজনীয় এক গাদা চাইনিজ অ্যাপ্লিকেশন দেয়া হয়নি; বরং দেয়া হয়েছে আর্কোস মিডিয়া প্লেয়ারের মত বেশ কিছু দরকারী অ্যাপ্লিকেশন যার সবই ইংলিশ। কারণ, আগেই বলেছি আর্কোস একটি ফরাসি ব্র্যান্ড। এছাড়া আর্কোস মিডিয়া প্লেয়ারটি নিয়ে একটু পরই আলোচনা করছি।

এই গেমপ্যাডে ডিফল্ট লঞ্চারটিই বেশ আকর্ষণীয় ও দ্রুত গতির হওয়ায় এতে নতুন করে কোনো লঞ্চার ইন্সটল করার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া এর ইউজার ইন্টারফেসে গেমিং কনট্রোলার ব্যবহার করতে কি-ম্যাপিং এর জন্য নেভিগেশন বারে একটি আলাদা কি যুক্ত করা হয়েছে যার সাহায্যে ট্যাবটি সাধারণ কাজে ব্যবহার করার জন্যও গেমিং কি-গুলো ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ দারুণ টাচ রেসপন্সের পাশাপাশি গেমিং ও সাধারণ কাজের জন্য পারফেক্ট ইউজার ইন্টারফেসও ট্যাবটিকে করে তুলেছে অনন্য।

ক্যামেরা

ক্যামেরার ক্ষেত্রে ট্যাবটিতে তেমন কোন চমক নেই। গেমিং ট্যাব হওয়ায় ট্যাবটিতে কেবল একটি ফ্রন্ট ক্যামেরাই দেয়া হয়েছে। ০.৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটি শুধুমাত্র ভিডিও চ্যাট ও কিউআর কোড স্ক্যান করার কাজেই ব্যবহার করতে পারবেন।

অডিও ও ভিডিও

ট্যাবটির মূল আকর্ষণ গেমিং এর জন্য হলেও এর আরও একটি দিক রয়েছে যা একে আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে আর তা হলো আর্কোস এর নিজস্ব মিডিয়া প্লেয়ার। দারুণ ইন্টারফেসের এই মিডিয়া প্লেয়ারটি কেবল আর্কোসের কিছু নির্দিষ্ট ট্যাবেই পাওয়া যায়।

আর্কোস অডিও প্লেয়ারটি কেবলমাত্র দেখতেই সুন্দর নয়, এর সাউন্ড কোয়ালিটিও অসাধারণ। ডুয়াল স্পিকারের কারণে সচরাচর ট্যাবের চেয়ে এর স্পিকারের আওয়াজ বেশ জোরালো। ফলে হেডফোন ছাড়াই স্বাচ্ছন্দে যেকোন গান শুনতে পারবেন।

ভিডিও প্লেয়ারটির ইন্টারফেসও অডিও প্লেয়ারটির মতই। ভিডিও প্লেয়ারটির বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোন ল্যাগ ছাড়াই ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও দেখতে পারবেন। তাছাড়া ডুয়াল স্পিকারের কারণে হেডফোন ছাড়াই যেকোন মুভি উপভোগ করতে পারবেন।

বেঞ্চমার্ক

যেহেতু এটি একটি গেমিং ট্যাব তাই এর বেঞ্চমার্ক স্কোর কেমন হবে সেটা ধারণা করাই যায়। তাছাড়া রকচিপ বেসড চিপসেট ব্যবহার করার কারণেও ট্যাবটি সাধারণ ডুয়াল কোর ট্যাব অপেক্ষা তুলনামূলক অনেক বেশি শক্তিশালী।

উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে Antutu Benchmark -এর আর্কোস গেমপ্যাডের স্কোর প্রায় ১১৫০০ এর কাছাকাছি। সুতরাং স্কোর দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটি একটি গেমিং ট্যাব।

Quadrant এর ক্ষেত্রেও এটি পিছিয়ে নেই। দেখতেই পারছেন এর স্কোর এসেছে ৪২১৮ যা আসুস ট্রান্সফর্মার প্রাইমের চেয়েও বেশি। এতেই ধারণা পাওয়া যায় ট্যাবটি কতটুকু শক্তিশালী ও এর পারফরম্যান্স কেমন।

এছাড়া Nenamark 2-এও এর স্কোর অকল্পনীয়। সচরাচর ডুয়াল কোর ট্যাবগুলো যেখানে কোনমতে ৪০ এর কিছু বেশি হয় সেখানে আর্কোস গেমপ্যাডের Nenamark 2 স্কোর প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। সবগুলো বেঞ্চমার্কই একে গেমারদের জন্য উপযুক্ত ট্যাব হিসেবেই প্রমাণ করে।

এছাড়া আরও একবার Antutu Benchmark এর চোখে এর System Info দেখে নেয়া যাকঃ

গেমিং

এবার আসা যাক এর মূল আকর্ষণে। যেহেতু ট্যাবটি গেমিং এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি সেহেতু বুঝতেই পারছেন এর গেমিং পারফরম্যান্স কতটা ভালো। আমরা প্রায় সব জনপ্রিয় এইচডি গেমগুলোই ট্যাবটিতে ইন্সটল করে দেখেছি এবং কনট্রোলার দিয়েই খেলেছি। আমাদের একবারের জন্যও হতাশ হতে হয়নি।

ডিভাইস টেস্ট করার জন্য আমরা মূলত এইচডি গেমগুলো ইন্সটল করে থাকে, এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জিটিএ ৩, জিটিএ ভাইস সিটি, মডার্ন কমব্যাট ৪, এনএফএস মোস্ট ওয়ান্টেড, ম্যাক্স পেইন গেমগুলো আমারা ফুল গ্রাফিক্সে খেলেছি কোনরকম ল্যাগ ছাড়াই।

এবার কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর পালা। প্রথমদিকে ট্যাবটি যখন রিলিজ করা হয়েছিল তখন অনেকেরই একটি অভিযোগ ছিল ট্যাবটির এক্সট্রা গেমিং কনট্রোলার বাটনগুলো দিয়ে সব গেম খেলা যায় না। তাদের এই ধারনাটি ছিল সম্পূর্ণ ভুল কারণ কি ম্যাপিং এর সাহায্যে ট্যাবটির গেমিং কনট্রোলার দিয়ে যেকোন গেম, এমনকি সাধারন অ্যাপ্লিকেশনও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

ভাইস সিটির মত জনপ্রিয় এইচডি গেমগুলোর জন্য ট্যাবটিতে প্রি-ইন্সটল্ড সাপোর্ট দেয়া থাকায় এসব গেমে কি-ম্যাপিং এর দরকার হয়না। তবে অ্যাংরি বার্ডস এর মত সাধারণ গেমগুলো খেলার জন্য আপনাকে ম্যানুয়ালি কি-ম্যাপিং করে নিতে হবে।

কী ম্যাপিং করার জন্য আর্কোসের ট্যাবে আর্কোস কী ম্যাপিং টুল নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন দেয়া আছে যা প্লে স্টোরেও রয়েছে। তাই অ্যাপ্লিকেশনটি ভুলে রিমুভ করে ফেললেও আপনাকে সমস্যায় পড়তে হবে না। যেকোনো সময় প্লে স্টোর থেকে আবার ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার গেমপ্যাডে ইন্সটল করা থাকলে নেভিগেশন বারে একটি গেমপ্যাডের আইকন দেখতে পারবেন।

আগেই বলেছি জিটিএ এর মত গেমগুলোর জন্য ম্যানুয়ালি কি ম্যাপিং এর প্রয়োজন হয়না তবে যেসব গেমে প্রি-ইন্সটল্ড সাপোর্ট নেই সেগুলোতে কি ম্যাপিং করে নিতে হবে। এ জন্য নেভিগেশন বারে থাকা আর্কোস কী ম্যাপিং টুলের আইকনে টাচ করতে হবে। এবার উপরে কী ম্যাপিং এর অপশন আসবে। কোন বাটন ম্যাপ করতে চাইলে বাটনে টাচ করে টাচস্ক্রিনের যে বাটনের কাজ করতে চান সেটার উপর রাখতে হবে এবং গেমপ্যাডের ওই বাটনটি একবার প্রেস করতে হবে।

একইভাবে কোন জয়স্টিককে ব্যবহার করতে চাইলে নেভিগেশন বারের আইকনে ক্লিক করে উপর থেকে স্টিকে টাচ করে সেটাকে ড্র্যাগ করে টাচ বাটনের উপর রাখতে হবে এবাং গেমপ্যাড থেকে ওই জয়স্টিকটা একবার ব্যবহার করতে হবে।

ফার্স্ট পার্সন শুটিং গেমের ক্ষেত্রে টার্গেট/ক্যামেরা অ্যাংগেল বদলানোর জন্যও গেমপ্যাডের কী গুলো ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একইভাবে টার্গেটে টাচ করে ড্র্যাগ করে স্ক্রিনে আনতে হবে এবং গেমপ্যাড থেকে যে বাটন সিলেক্ট করতে চান সেই বাটনটি চাপতে হবে।

এরপরও বুঝতে না পারলে কোন সমস্যা নেই কারণ ডিভাইসের সাথেই ছবিসহ একটি কি ম্যাপিং ম্যানুয়াল দেয়া আছে যা দেখে আপনি সহজেই আপনার নিজের মত করে কি কাস্টোমাইজ করে নিতে পারবেন।

ইন্টারনেট, সেন্সর ও অন্যান্য

ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির জন্য আর্কোস গেমপ্যাডে রয়েছে ওয়াফাই। ওয়াই-ফাই এর সাহায্যে আপনি স্বাচ্ছন্দেই ট্যাবটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। ক্রোম কিংবা ফায়ারফক্স ব্রাউজার ইন্সটল করে নিলে এতে ল্যাপটপের মতই ব্রাউজিং পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।

এবার আসা যাক সেন্সরে। গেমিং এর জন্য এতে রয়েছে 3-axis Accelerometer সেন্সর, 3-axis Magnetic field সেন্সর এবং Orientation সেন্সর। ফলে যে কোন মোশন সেন্সর বেসড গেমই এতে খেলা সম্ভব।

যেহেতু ট্যাবটি রকচিপ বেসড চিপসেট দিয়ে বানানো তাই এতে OTG সাপোর্টও রয়েছে। ওটিজি ক্যাবলের মাধ্যমে আপনি সহজেই ট্যাবটিতে কী-বোর্ড, মাউস, পেনড্রাইভ/ফ্ল্যাশড্রাইভ, পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, মডেম ইত্যাদি কানেক্ট করতে পারবেন।

এছাড়া এর অন্যান্য আকর্ষনের মাঝে রয়েছে বিল্ট ইন গেমিং কনট্রোলার, ডুয়াল স্পিকার, মাইক্রো ইউএসবি, মিনি এইচডিএমআই, ৩.৫ এমএম অডিও জ্যাক পোর্ট ইত্যাদি।

ব্যাটারি ব্যাকআপ

আর্কোস গেমপ্যাডের প্রায় সবকিছুই অনন্য হলেও এর ব্যাটারি লাইফ সাধারন ট্যাবের মতই কারন এতে দেয়া হয়েছে মাত্র 4000mAh ব্যাটারি। তবে এই ব্যাটারি থাকা সত্বেও এতে সহজেই ৩-৪ ঘন্টা টানা গেম খেলা সম্ভব।

ওয়াইফাই অন রেখে কাজ করলেও ৪-৫ ঘন্টা ব্যাকআপ পাওয়া যায়। আর অফলাইনে এর ব্যাকআপ প্রায় ৭ ঘন্টা। অর্থাৎ ব্যাটারির ক্ষমতা কম হলেও এর ব্যাকআপ খুব একটা খারাপ নয়।

সীমাবদ্ধতা

আমরা সবসময়ই বলে আসছি কোন ট্যাবেই পুরোপুরি পারফেক্ট হতে পারে না। আর্কোস গেমপ্যাডও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে অনেকেই সিম সাপোর্টেড ট্যাব খুজে থাকেন, এক্ষেত্রে তাদের হতাশ হতে হবে কারণ এতে সিম স্লট নেই। তাই সিম ব্যবহার করে ট্যাবটিতে থ্রিজি নেট বা ফোন কল কিংবা ভিডিও কল করতে পারবেন না। তবে ট্যাবটির রুটেড ফার্মওয়্যার ফ্ল্যাশ করে পিপিপি উইজেট এর মাধ্যমে এতে থ্রিজি মডেম ব্যবহার করতে পারবেন।

তাছাড়া ট্যাবটিতে ব্লুটুথ ও জিপিএসও নেই। তবে ব্লুটুথ না থাকাটা আজকাল খুব একটা সমস্যা নয় কারণ ওয়াই-ফাই ডিরেক্ট দিয়েই বর্তমানে ওয়াফাই এর মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার করা সম্ভব। এছাড়া প্লে স্টোরে থাকা কিছু থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেও ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ফাইল ট্রান্সফার করা যায় যার মাঝে ES File Explorer অন্যতম। আর যদি আপনার জিপিএস সমর্থিত কোন অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকে তাহলে জিপিএসের সমস্যাও সমাধান করা সম্ভব। GPS Tethering কিছু অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে ফোনের জিপিএস কেই আপনি ট্যাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

এবার আসা যাক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আর তা হলো রুট। রুট কী এবং কেন সে ব্যাপারে অবহিত না থাকলে এই প্যারাটুকু আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে যেসব অ্যাডভান্সড ইউজাররা রুট করে ডিভাইস ব্যবহার করতে অভ্যস্ত তাদের জন্য এতে একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে আর তা হলো ডিভাইসটি কোন ফ্ল্যাশটুলের সাহায্যে রুট করা যায়না। রুট করতে চাইলে সম্পূর্ন ফার্মওয়্যার ফ্ল্যাশ করেই রুট করতে হয়। অর্থাৎ আর্কোস গেমপ্যাডের জন্য প্রি-রুটেড কাস্টম ফার্মওয়্যার রয়েছে। রুট করতে চাইলে আপনাকে নতুন করে রম ফ্ল্যাশ করতে হবে। এই সীমাবদ্ধতাগুলো ছাড়া ডিভাইসটিতে আমরা আর তেমন কোনো ত্রুটি খুজে পাইনি।

সিদ্ধান্ত

এবার সেই সিদ্ধান্ত নেবার পালা। আগেই বলেছি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কেবলমাত্র Riverside Trade Link-ই Archos এর ট্যাব আনছে। বসুন্ধরা সিটিতে তাদের নিজস্ব শো-রুম রয়েছে যেখানে বর্তমানে আর্কোস গেমপ্যাডটি তারা ১৬,০০০ টাকায় বিক্রি করছে। বিল্ড কোয়ালিটি ও পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে এর দামকে তুলনামূলক বেশ কমই বলা যায়।

কম বাজেটে অসাধারণ বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনের সাথে গেমিং কন্ট্রোলার ও পারফরম্যান্স দিয়ে ট্যাবটি যে কোন গেমারের মন জয় করতে সক্ষম। এ কারণেই ট্যাবটি অ্যান্ড্রয়েড গেমারদের জন্য একটি মাস্টারপিস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আপনি যদি হার্ডকোর গেমার হয়ে থাকেন তাহলে আর্কোসের এই গেমপ্যাডটি কিনবেন কিনা এবার সিদ্ধান্ত নিন!

আপানার সিদ্ধান্ত, মতামত বা যেকোন জিজ্ঞাসা থাকলে মন্তব্যের ঘরে আমাদের জানাতে ভুলবেন না। সামনে আরও কিছু দারুণ ট্যাবের রিভিউ ও আপডেট পেতে ফেসবুকে আমাদের সাথেই থাকুন অ্যান্ডয়েড কথন-এর পাতায়।