অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের যে উন্মাদনা বর্তমানে বয়ে চলেছে সারা দুনিয়া জুড়ে তার রেশ এখন অনেকটাই প্রসারিত হচ্ছে বড় ডিসপ্লে সমৃদ্ধ ট্যাব এর দিকে। প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও নতুন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস উন্মুক্ত হচ্ছে আমাদের দেশের বাজারেই।
একটা সময় ছিল যখন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছিল সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নের মত। কিন্তু সেইদিন এখন অতীত। অনেক নতুন কোম্পানিই এখন তুলনামূলক কম দামে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস নিয়ে আসছে স্বল্প দামে যেটা অনেক মানুষকে সুযোগ করে দিচ্ছে তাদের সাধ এবং সাধ্যের মাঝে সমন্বয় ঘটাবার।
সম্প্রতি অক্সেল বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে এসেছে বিভিন্ন দামের কিছু অ্যান্ড্রয়েড-চালিত ট্যাবলেট পিসি। স্বল্পমূল্যের অ্যান্ড্রয়েড ট্যাভলেটের চাহিদা থাকায় আজ আরা প্রকাশ করছি Oxcel OX 7.1 review.
রিভিউ শুরুর আগে চলুন দেখে নেয়া যাক এই ট্যাবে কি কি থাকছে আপনাকে দেয়ার মতো।
Oxcel OS 7.1
অক্সসেল ওএক্স ৭.১ ফিচারসমূহঃ
- ৭ ইঞ্চি ৪৮০*৮০০ রেজুলেশনের এলসিডি ডিসপ্লে
- ১.২ গিগাহার্টজ প্রসেসর ও ৫১২ এমবি র্যাম
- ৪ জিবি ইন্টারনাল মেমোরি
- ৩২ জিবি পর্যন্ত মেমোরি কার্ড সাপোর্ট
- মালি ৪০০ জিপিইউ
- ১.৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা
- আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ৪.০.৪
- ওটিজি ক্যাবল সাপোর্ট
- এক্সটারনাল থ্রিজি সাপোর্ট
যা যা থাকছে রিটেইল বক্সেঃ
- ট্যাব
- ইউএসবি ডাটা ক্যাবল
- চার্জার
- ওটিজি ক্যাবল
- একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর পেপার
ডিজাইন ও হার্ডওয়্যার
ডিজাইন এর দিক থেকে অক্সেল ট্যাবটি হাতে নিয়ে কাজ করার জন্য বেশ আরামদায়ক। এর ডিজাইন বেশ সুন্দর এবং ওজনে হালকা বলে এটি বহনের ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক। এটির ওজন ৩০০ গ্রামের কিছু বেশি যা বাজারের অন্যান্য ট্যাব থেকে বেশ হালকা। ট্যাবটির ওপরের দিকে রয়েছে চার্জ দেওয়ার পোর্ট, ইউএসবি পোর্ট এবং পাওয়ার বাটন।
ট্যাবের ডান দিকটায় দেয়া হয়েছে ভলিউম বাটন এবং হেডসেটের জন্য ৩.৫ এমএম পোর্ট। এর ঠিক নিচেই রয়েছে মেমোরি কার্ড স্লট। আপনি এই ট্যাবের ইন্টারনাল ৪ গিগাবাইট মেমোরি ছাড়াও এতে অতিরিক্ত ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রোএসডি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। ট্যাবটিতে পাওয়ার বাটন, অডিও আউটপুট জ্যাক এবং ভলিউম বাটনগুলো খুব কাছাকাছি ও সুবিন্যস্তভাবে দেয়া হয়েছে যা যেকোনও ব্যবহারকারীর পক্ষে সুবিধাজনক হবে বলে আমার ধারণা। আগেই বলা হয়েছে এটি একটি স্বল্পদামের ট্যাব যে কারণে এতে বাদ দেয়া হয়েছে অনেক কিছুই।
এ তো গেলো ডিজাইন নিয়ে কথা। এবার আসি হার্ডওয়্যার এর ব্যাপার নিয়ে। আপনি যদি ট্যাবটি হাতে নিয়ে দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন এই ট্যাবটি এতো স্বল্প দামে কিভাবে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এই ট্যাবটির বিল্ড কোয়ালিটি খুবই সাধারণ মানের। দামকে নাগালের মধ্যে রাখার জন্য ট্যাবটির বাইরের হার্ডওয়্যারে অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে। ট্যাবটির পুরো বডি প্লাস্টিকের তৈরি যা হয়তো অনেকের কাছেই খুব মজবুত কিছু বলে মনে হবেনা।
অ্যাপ্লিকেশন
অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ফোন অথবা ট্যাবের মতো এতে অপ্রয়োজনীয় কোন অ্যাপ্লিকেশন দেয়া হয়নি। প্রায় সব ফোনেই অতিরিক্ত কিছু অ্যাপ্লিকেশন দেয়া থাকে যেগুলো সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে থাকায় রুট না করে মুছে ফেলা যায় না। কিন্তু অক্সেল ওএক্স ৭.১-এ কেবল কাজের অ্যাপ্লিকেশনগুলোই এর সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে।
গুগল ম্যাপস, ফেসবুক এর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলোও এর সাথে প্রিলোডেড দেয়া হয়নি। এটা আমার মতে একদিক থেকে ভালো। সমস্যা কি? প্লে স্টোর তো থাকছেই। যার যেমন ইচ্ছা সেখান থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে নিলেই হয়ে গেলো। এছাড়াও অনেকেই অতিরিক্ত ডেটা টানার কারণে ফেসবুকের ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে চান না।
ডিসপ্লে এবং ইন্টারফেস
আপনি নিশ্চয়ই এই দামের কোন ট্যাব থেকে সুপার এমোলেড ধরণের কোন ডিসপ্লে আশা করবেন না। নাহ, এই ট্যাবটিতে সেটা দেয়াও হয়নি। এতে দেয়া হয়েছে টিএফটি এলসিডি ডিসপ্লে যার রেজুলেশন হচ্ছে ৪৮০*৮০০ পিক্সেল।
ডিসপ্লে শার্পনেস খুব একটা ভালো না হলেও ডিসপ্লেটি মুভি দেখা ও অন্যান্য সাধারণ কাজ চালিয়ে নেবার জন্য যথেষ্ট। ডিসপ্লে কিছুটা ওয়ার্ম কালার তৈরি করলেও তা একেবারে খারাপ নয়। ফুল ব্রাইটনেস দিলেও ট্যাবটি ঘরের বাইরে সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে কাজ করার জন্য খুব একটা সহায়ক নয়। তবে ঘরের ভেতরে বা ইনডোরে কৃত্রিম আলোতে এর ডিসপ্লে কাজ করার জন্য বেশ ভালো।
অক্সেল ট্যাবটির ইন্টারফেস খুব সাধারণ। এটিতে কোনোরকম কোন মডিফাইড কাস্টম রম ব্যবহার না করে অ্যান্ড্রয়েডের স্টক আইসিএস রম দেয়া হয়েছে। ট্যাবটির টাচ রেসপন্স ভালো। অন্ততঃ আমার সিম্ফনি ডব্লিউ ১০ থেকে অনেক স্মুথলি কাজ করে। এটিতে সর্বাধিক ৫ আঙুলের মাল্টিটাচ সাপোর্ট আছে।
অডিও ও ভিডিও
অডিও এর সম্বন্ধে বলতে গেলে কিছু কথা আগেই বলে রাখা জরুরী। সেটি হচ্ছে অক্সেল ওএক্স ৭.১ মডেলের স্পিকার সাউন্ড কোয়ালিটি আমার শোনা যেকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর মধ্যে সবথেকে বাজে! কিছুক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে এই ট্যাবে কোন স্পিকার না দিলেই মনে হয় ভালো হতো! তবে ইয়ারফোন সাউন্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।
তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অক্সেল ট্যাবটির রিটেইল বক্স এ কোনও ইয়ারফোন আসেনা। সুতরাং আপনাকে আলাদাভাবে কোনও ইয়ারফোন কিনে ব্যবহার করতে হবে। আমি লজিটেকের আলটিমেট ইয়ারস ২০০ ব্যবহার করে কোন ডিভাইসের সাউন্ড কোয়ালিটি যাচাই করি এবং সেই অনুযায়ী ট্যাবটির সাউন্ড কোয়ালিটি আশানুরূপ মনে হয়েছে আমার কাছে।
এই ট্যাবে দেয়া ডিফল্ট মিউজিক প্লেয়ারটির ইন্টারফেস খুব একটা সুন্দর না হলেও কাজের ক্ষেত্রে এটি বেশ পটু। মিউজিক প্লেয়ারে আপনি পাবেন বেশ কয়েকটি ইকুইলাইজার অপশন যেটি আপনার গান শোনার আনন্দকে বাড়িয়ে তুলবে অনেকাংশেই।
ভিডিও প্লেয়ারকে যদি একশব্দে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় আমাকে তাহলে আমি যেটা বলব সেটা হচ্ছে “অসাধারণ”।
সত্যিই তাই। প্রিলোডেড যে ভিডিও প্লেয়ারটি এর সাথে থাকে সেটি বলতে গেলে সকল ভালো ভিডিও ফরম্যাটই চালাতে সমর্থ। কোনরকম কনভার্ট ছাড়াই এই ট্যাব চালাতে সমর্থ হয়েছে আমার পিসির ৭২০পি এইচডি ও ১০৮০পি ফুল এইচডি মুভিগুলো! আমার ধারণা যারা মুভি দেখতে পছন্দ করেন তাদের কাছে খুবই ভালো লাগবে এই ফিচারটি। আমারও তাই লেগেছে।
কানেক্টিভিটি
ট্যাব কিনেছেন অথচ ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন না তাই কি হয়? কারণ ট্যাবে ইন্টারনেট চালানোর থেকে মজার কাজ খুব কমই আছে। ডিসপ্লে ৭ ইঞ্চি বলে কোন ব্লগ কিংবা আর্টিকেল পড়তেও অনেক সুবিধা পাবেন ট্যাবটিতে। ইন্টারনেট সংযোগের স্থাপনের জন্য এতে দেয়া আছে ওয়াইফাই। আমি নিজে প্রতিদিন আমার ফোনকে ওয়াইফাই হটস্পট হিসেবে ব্যবহার করে ট্যাবটিতে ইন্টারনেট চালাই। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে এর ওয়াইফাই অনেক ভালো কাজ করে। তবে খরচ কমাবার জন্য বাদ দেয়া হয়েছে ব্লুটুথের মতো অপশন। অর্থাৎ ডাটা আদান প্রদান করতে আপনাকে নির্ভর করতে হবে ডাটা ক্যাবল কিংবা ইউএসবি ওটিজির ওপর।
ব্যাটারি ব্যাকআপ
অক্সেল ট্যাবটির যে কয়টি উল্লেখ করবার মতো নেতিবাচক দিক আমি পেয়েছি তার মধ্যে একটি হচ্ছে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ। মুভি দেখলে এবং ইন্টারনেট ব্রাউজ করলে এটি আপনাকে ৩ ঘণ্টার মতো ব্যাকআপ দিবে যা আসলেই অনেক কম। ৩০০০ এমএএইচ লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি দেয়ার পরও এই ট্যাবটি ব্যাটা ব্যাকআপ খুবই কম সময় দিয়ে থাকে। তাই স্বভাবতঃই বলা যায়, এই ট্যাবের ব্যাটারি ব্যাকআপ নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারবেন না যেমনটা আমি হইনি।
পারফরম্যান্স
বিজ্ঞাপনে যদিও বা লিখা হয়েছে ট্যাবটির প্রসেসর ১.৫ গিগাহার্টজ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে ১.২ গিগাহার্টজ। র্যাম দেয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন অনুযায়ী ৫১২ মেগাবাইট। একটি ট্যাব এর ক্ষেত্রে যদিও বা ৫১২ মেগাবাইট কম র্যাম কিন্তু দাম বিবেচনায় এটিকে মেনে নিতেই হবে। তবে ইবুক পড়া, অফিস ফাইল এডিট করা, টুকিটাকি ইন্টারনেট ব্যবহার করা, গান শোনা কিংবা মুভি দেখার মতো কাজগুলো আপনি এর ৫১২ মেগাবাইট র্যাম দিয়ে মোটামুটি ভালই চালিয়ে নিতে পারবেন। আর ১.২ গিগাহার্টজ প্রসেসর থাকায় কাজগুলো করা আরও সহজ হয়ে উঠবে আপনার জন্য। আমার কাছে যেটি বেশ অবাক করা বিষয় মনে হয়েছে সেটি হচ্ছে এই ট্যাবের জিপিইউ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে মালি ৪০০। তার মানে হচ্ছে আপনি অ্যান্ড্রয়েডের ভালো এবং জনপ্রিয় গেমগুলো চালাতে পারবেন এই ট্যাবে।
বেঞ্চমার্ক
আমি ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে, মোটামুটি রকমের কাজ চালিয়ে যাবার জন্য ট্যাবটি বেশ ভালো এবং বোনাস হিসেবে রয়েছে এর ভালো গতির প্রসেসর। তবে Antutu benchmarking এ ট্যাবটির স্কোর অনেক কম। আমি নিজেই খুব একটা নিশ্চিত নই এতো কম স্কোরের কারণ সম্বন্ধে। কেননা আমার সিম্ফনি ডব্লিউ ১০ মডেলের স্মার্টফোন যার কনফিগারেশন এই ট্যাব থেকে অনেকাংশেই কম সেটারও স্কোর আমার ট্যাব থেকে বেশি আসে। আমি আশা করেছিলাম ট্যাবটির স্কোর অন্তত ৬০০০ এর ওপরে কিছু হবে। যাই হোক প্রদত্ত স্ক্রিনশট থেকে নিজেই দেখে নিন ট্যাবটির Antutu benchmarking স্কোর।
এবারে দেখুন নিনামার্ক স্কোরঃ
সবশেষে কোয়াডরেন্ট
কেন কিনবেন অক্সসেলের এই ট্যাবটি
- স্বল্প দাম
- সহজে বহনযোগ্য এবং হালকা ওজন
- ইউএসবি ওটিজি সাপোর্ট
- দাম অনুযায়ী মোটামুটি ভালো পারফরম্যান্স
- দারুণ সব ভিডিও/অডিও কোডেক সাপোর্ট
কেন কিনবেন না এই ট্যাব
- তুলনামুলক কম ব্যাটারি ব্যাকআপ
- কম র্যাম
- অনুন্নত বিল্ড কোয়ালিটি
- ব্যাক ক্যামেরা নেই
- জিএসএম বা সিম সুবিধা নেই
- ব্লুটুথ ও জিপিএস নেই
দাম ও আনুষঙ্গিক
এবার আসা যাক দামের কথায়। দাম হচ্ছে এটির মুল আকর্ষণ। ট্যাব জিনিসটা অনেকেরই হয়তো অনেক পছন্দের কিন্তু দামের কথা বিবেচনা করে কখনো হয়তো কেনার চিন্তা করা হয়না। তাদের জন্যই বলা, আপনার যদি জিএসএম বা সিম সুবিধা ছাড়া ট্যাব কিনতে কোন অসুবিধা না থাকে এবং অবশ্যই আপনার বাজেট যদি সীমিত হয় তাহলে অক্সসেলের এই ট্যাবটি আপনার জন্যই। ট্যাবটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২০০ টাকা। এর সাথে থাকছে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি।
তবে বলা বাহুল্য, আপনার বাজেট যদি সীমিত না হয় তাহলে আরও কিছু যোগ করে অন্য ভালোমানের কোনো ট্যাবলেট কেনার পরামর্শ থাকবে। ট্যাবটিকে আমরা “ভালো” বলছি তার অন্যতম কারণ এর তুলনামূলক কম দাম। এছাড়াও দাম কম হওয়ার পরও ট্যাবের অন্যতম মিসিং বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সিম সাপোর্ট। এটি ছাড়া ট্যাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে।
আরও দেখুনঃ অক্সেল ওএক্স ৭.১ অফিসিয়াল পেজ।
আপনার মন্তব্য
আপনি কি অক্সেলের এই ট্যাবটি কেনার কথা ভাবছেন? নাকি বাজেট বাড়িয়ে কিনে ফেলবেন অন্য কোন পছন্দের ট্যাব? আপনার মতামত অথবা প্রশ্ন জানাতে পারেন নিচের মন্তব্যের ঘরে।