বাজারে স্মার্টফোনের অব্যাহত চাহিদার কারণে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাজার দখলের প্রতিযোগিতা প্রবল। তার মধ্যে দেশীয় ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো গত কয়েক মাস ধরেই বাজার গরম করে রেখেছে। ওয়াল্টন যখন অনেকটা স্যামসাং-এর মতোই একের পর এক আকর্ষণীয় স্পেসিফিকেশনের ফোন বাজারে আনছে, তখন সিম্ফনি দেরিতে হলেও বাজারে আনে তাদের প্রথম কোয়াড-কোর প্রসেসর চালিত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস, সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ যেটি চলছে অ্যান্ড্রয়েড জেলি বিন অপারেটিং সিস্টেমে।
জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ ঘোষিত হবার পর থেকেই বাজারে এর চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। মূলত অসাধারণ বিল্ড কোয়ালিটির ডিভাইস বাজারজাত করার কারণে সিম্ফনি অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের মোবাইল বাজারে একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। অ্যান্ড্রয়েড কথনের প্রথম হ্যান্ডস-অন রিভিউও ছিল সিম্ফনির কমদামী অ্যান্ড্রয়েড ডব্লিউ ৫ নিয়ে যেই ইউনিটটি রাফ ব্যবহারের পরও আজও খুব ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে যাচ্ছে। যারা সিম্ফনির এই বিল্ড কোয়ালিটি ও স্থায়িত্বের সঙ্গে পরিচিত, মূলত তারাই সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ নিয়ে বিস্তারিত রিভিউয়ের জন্য অ্যান্ড্রয়েড কথনে যোগাযোগ করতে থাকেন।
সিম্ফনির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ইমেইলের জবাব না দেয়ায় প্রতিবারের মতো এবারও নিজেদের উদ্যোগেই ডিভাইস সংগ্রহ করে প্রকাশিত হচ্ছে সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫-এর হ্যান্ডস-অন রিভিউ। বিস্তারিত জেনে নিন আসলেই কেমন সিম্ফনির প্রথম এই কোয়াড-কোর ফোনের পারফরম্যান্স।
এক নজরে Symphony W125
- প্রসেসরঃ মিডিয়াটেক MTK6589, কোয়াড কোর কর্টেক্স এ৭ বেজড প্রসেসর।
- র্যামঃ ১ গিগাবাইট , ৯৭৬ মেগাবাইট ইউজার এভেলেবেল।
- জিপিইউঃ PowerVR SGX 544MP
- ডিসপ্লেঃ ৪.৫ ইঞ্চি qHD, IPS ডিসপ্লে ( ৫৪০X৯৬০ রেজুলেসন), মাল্টি টাচ সাপোর্ট।
- ক্যামেরাঃ ৮ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস ব্যাক ক্যামেরা উইথ BSI সেন্সর, ১ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা, এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং অ্যান্ড প্লেব্যাক (1080P)।
- স্টোরেজ ক্যাপাসিটিঃঅ্যাপ্লিকেশন ইন্সটলের জন্য ১ গিগাবাইট এবং অন্যান্য ডেটা স্টোরেজের জন্য ১.৭০ গিগাবাইট। সঙ্গে মাইক্রো-এসডি কার্ডের মাধ্যমে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ বাড়ানোর সুবিধা রয়েছে।
আনবক্সিং
ডব্লিউ ১২৫ বাজারে এসেছে সুদৃশ্য একটি বক্স এ। যে ব্যাপারটি ভাল লেগেছে তা হল এর কম্প্যাক্টনেস। অযথাই এর বক্সটি বড় করা হয়নি। বক্সটি খুললে আপনি পাবেনঃ
- একটি সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস।
- ২১০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি।
- চার্জার এবং ডাটা কেবল।
- ইয়ার পিস।
- ম্যানুয়াল এবং ওয়ারেন্টি কার্ড।
বিল্ড কোয়ালিটি এবং ডিজাইন
ডিজাইনের দিক দিয়ে ডব্লিউ ১২৫ ফোনটি একটি বার ফোন। এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দৈর্ঘ্য ১৩৬.৫ মিলিমিটার, প্রস্থ ৬৭ মিলিমিটার এবং এর পুরুত্ব ৯.৯ মিলিমিটার। পুরো সেটটির তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিক। কেবল এর চারপাশে ঠিক মধ্যে স্লিম একটি মেটালিক বেজেল ব্যবহার করা হয়েছে। প্লাস্টিকের বডি হলেও এর বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে এবং বেশি ভাল লেগেছে পেছনের ব্যাক কাভারটিতে ম্যাটেড ম্যাটেরিয়ালের ব্যবহার যার জন্য এর পেছনের দিকে স্ক্র্যাচ পড়বে না বা পড়লেও বোঝা যাবে না। স্লিম ডিজাইনের জন্য সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।
অপারেট করার জন্য ফোনটিতে কোন ‘ফিজিকাল বাটন’ দেয়া হয়নি। ডিসপ্লে প্যানেলের নিচের দিকে মেনু, হোম এবং ব্যাক এ তিনটি সফট বাটন দেয়া হয়েছে। ফিজিকাল বাটন ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাবো। কেননা অনেক সময় ধুলোবালি ফিজিক্যাল বাটনের ফাঁকে আটকে যেতে পারে কিংবা দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে অনেক সময় ফিজিকাল বাটন জ্যাম হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফোনটির ডানদিকে রয়েছে ভলিউম বাটন এবং এর ঠিক নিচ দিকেই রয়েছে পাওয়ার বাটন। উপরের দিকে রয়েছে চার্জার এবং 3.5 mm অডিও ইনপুট স্লট। পেছনের দিকে উপরে ঠিক মাঝে রয়েছে ক্যামেরা এবং এর ঠিক পাশেই ফ্ল্যাশ লাইট। পেছনে নিচের দিকে বাম দিকে রয়েছে স্পিকার।
ডিজাইনের দিক থেকে আমি একে পারফেক্ট-ই বলব শুধু একটা ব্যাপার বাদে। এর ক্যামেরার জন্য কোন লেন্স কাভার দেয়া হয়নি। তাছাড়া লেন্সটি কিছুটা ভেতরে বসানো যেতো যাতে করে ফ্লাট রাফ সার্ফেসে রাখার জন্য লেন্সটিতে কোন স্ক্র্যাচ না পড়ে।
ডিসপ্লে এবং টাচ রেসপন্স
ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪.৫ ইঞ্চি মাপের IPS ক্যাপাসিটিটিভ টাচ স্ক্রিন ডিসপ্লে যার রেজুলেশন ৫৪০X৯৬০(qHD) এবং পিপিআই ২৪০। এতে আরও রয়েছে মাল্টি টাচ সাপোর্ট (Upto 5 fingers)। ডিসপ্লেটি IPS কিনা এটা নিয়ে নানাজনের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেননা সিম্ফনির অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে ফোনটির বিস্তারিত তথ্যের মধ্যে দেয়া আছে TFT ডিসপ্লে। অন্যদিকে ফেসবুকে সিম্ফনির পেইজ থেকে সম্প্রতি নিশ্চিত করা হয়েছে যে এর ডিসপ্লে IPS প্রযুক্তির।
সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫-এর ১৬ মিলিয়ন কালার, ব্রাইটনেস, ডিসপ্লে শার্পনেস, ভিউইং অ্যাঙ্গল ইত্যাদি বিবেচনায় আনলে বলা যায় এই দামে এরকম একটি ডিসপ্লে সমৃদ্ধ ডিভাইস আসলেই বিরল। আর আমরা সবচেয়ে অবাক হয়েছি এর টাচ রেসপন্স দেখে। সাধারণত স্বল্প মুল্যের ডিভাইসগুলোর টাচ রেসপন্স কিছুটা ধীর গতির হয়ে থাকে যা অনেক সময় ব্যবহারকারীর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই ফোনটির টাচ রেসপন্স যথেষ্টই ভালো। স্যামসাং, সনি, এইচটিসি প্রভৃতি কোম্পানিগুলোর স্মার্টফোনের টাচ রেসপন্স থেকে এটি কোন অংশেই কম নয়। এক কথায় এর টাচ রেসপন্স আমার দেখা অন্যতম সেরা।
ইউজার ইন্টারফেস
ফোনটিতে ইউজার ইন্টারফেস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কাস্টোমাইজড অ্যান্ড্রয়েড ৪.১.২ ইন্টারফেস। অর্থাৎ স্টক ৪.১.২ থেকে কিছুটা পরিবর্তন করে সিম্ফনি আমাদের সামনে প্রদর্শন করেছে। এছাড়াও থিম পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে। এটির জন্য সিম্ফনি ‘থিম স্কিন’ নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রি-ইন্সটল করে দিয়েছে যেটায় ৫ টি ভিন্ন থিম রয়েছে। ব্যবহারকারী অ্যাপ্লিকেশনটি থেকে নিজেদের পছন্দ মতো থিম সেট করে নিতে পারবেন। তবে ডিফল্ট লঞ্চারটি আমার কাছে কিছুটা ল্যাগি মনে হয়েছে। আপনি সহজেই অ্যাপেক্স বা নোভা লঞ্চার এর মত থার্ড পার্টি কোনো লঞ্চার ব্যবহার করে ল্যাগ দূর করতে পারেন। ডিফল্ট লঞ্চার এবং ‘Android’ থিমটি ব্যবহার করে নিচের স্ক্রিন শটগুলো নেয়া হয়েছে।
ক্যামেরা
ফোনটিতে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেল রিয়ার ফেসিং ক্যামেরা এবং ১ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা। সাথে রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট। রিয়ার ক্যামেরাটি ৮ মেগা পিক্সেলের ছবি তোলার পাশাপাশি ১০৮০পি মানের এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং করতে সক্ষম। যদিও সিম্ফনির অফিসিয়াল সাইটে বলা হয়েছে এটি ৭২০পি মানের ভিডিও রেকর্ডিং করে কিন্তু ফোনটি ব্যবহার করে রেকর্ড করা ভিডিওর প্রপারটিজ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এটি আসলে ১০৮০পি ভিডিও রেকর্ডিং করে থাকে। এছাড়া চমক হিসেবে ক্যামেরাটিতে দেয়া আছে BSI সেন্সর যার মাধ্যমে এটি অল্প আলোতেও বেশ ভালো মানের ছবি তুলতে সক্ষম। এই সেন্সরটির জন্য ফোনটি ক্যামেরার দিক দিয়ে সমমানের অন্যান্য ফোন থেকে এগিয়ে থাকবে।
ছবির মান বেশ ভালো হলেও এর ডিফল্ট ক্যামেরার ফিচার ততটা সমৃদ্ধ নয়। প্যানারমা ফিচার সহ বেশ কিছু ফিচার এতে নেই। তবে এইচডিআর ফিচারটি আমাদের একটু অবাক করছে। অনেক খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ফোনেও এ ফিচারটি অনেক সময় দেখা যায় না। নিচে ফোনটির ক্যামেরা ইন্টারফেস এবং ক্যামেরা দিয়ে তোলা কিছু ছবির স্যাম্পল দেয়া হয়েছে। দামের বিবেচনায় ফোনটির ক্যামেরা কোয়ালিটি সত্যিই অসাধারণ।
অডিও এবং ভিডিও
ফোনটির অডিও পারফরম্যান্স আমাকে কিছুটা হতাশ করেছে। আপনি যদি ডাই-হার্ড মিউজিক লাভার হন এবং ইতোপূর্বে ভালো মানের মিউজিক ফোন ব্যবহার করে থাকেন তবে এর অডিও আউটপুট আপনার খুব একটা ভালো লাগবে না। লাউড স্পিকার সাউন্ড মোটামুটি চলে, কিন্তু এর সাথে দেয়া হেডসেটটির কোয়ালিটি তেমন ভালো না হওয়ায় হেডসেট দিয়ে গান শুনতে আপনাকে কিছুটা বেগ পেতে হবে। ফোনটির ডিফল্ট মিউজিক প্লেয়ারটি দেখতে সুন্দর হলেও অডিও টিউনিং এর জন্য পর্যাপ্ত অপশন এতে নেই।
তবে থার্ড পার্টি মিউজিক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে আপনি কিছুটা হলেও এ সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। আমি গুগল প্লে মিউজিক, পাওয়ার অ্যাম্প, উইন্যাম্প এই তিনটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে অডিও আউটপুট এর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখেছি। অর্থাৎ এই ফোনটি থেকে মোটামুটি ভালো মানের মিউজিক এক্সপেরিয়েন্স করতে চাইলে আপনাকে একটি ভালো থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন এবং হেডসেট ব্যবহার করতে হবে। নতুন হেডসেট কেনার আগে অবশ্যই তা ফোনের সঙ্গে কানেক্ট করে পরীক্ষা করে নিবেন।
ভিডিও নিয়ে আলাদাভাবে বলার তেমন কিছু নেই। ফোনটি খুব সহজেই ১০৮০পি ভিডিও প্লে করতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে আমি ভিডিও চালিয়ে দেখেছি। কোন প্রকার ল্যাগ ছাড়াই ভিডিওগুলো এতে চলেছে। ডিসপ্লে আকার মোটামুটি বড় হবার কারণে এবং যেহেতু IPS প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সেহেতু এতে ভিডিও দেখার এক্সপেরিয়েন্স যথেষ্টই ভালো হবে। ফোনটিতে স্টক কোন ভিডিও প্লেয়ার দেয়া হয়নি। একেবারে MX Video Player প্রি-ইন্সটল করে দিয়েছে সিম্ফনি। আর আমরা সবাই জানি MX Player সব ধরনের ভিডিও প্লে করতে সক্ষম। কাজেই ভিডিও প্লে করা নিয়ে আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই।
কানেক্টিভিটি, ইন্টারনেট, সেন্সর ও অন্যান্য
ডুয়াল সিম সুবিধা সমৃদ্ধ সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫-এ প্রায় সকল কানেকটিভিটি সুবিধাই দেয়া হয়েছে। এতে আছে ব্লুটুথ ভার্সন ৪, ওয়াইফাই, জিপিএস ও ইউএসবি ভার্সন ২ সুবিধা। ওয়াইফাই ডিরেক্ট সুবিধাও এতে রয়েছে। অর্থাৎ আপনি সহজেই ওয়াইফাই ডিরেক্ট সুবিধা সম্পন্ন অন্যান্য ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ডাটা আদান প্রদান করতে পারবেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য এতে ওয়াই ফাই, জিপিআরএস/এজ এর পাশাপাশি WCDMA ভিত্তিক ৩জি প্রযুক্তি দেয়া আছে। আছে ৩জি ব্যবহার করে ন্যাটিভ ভিডিও কলিং এর সুবিধা। অর্থাৎ, ভিডিও কলিং এর জন্য আপনাকে আলাদা কোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে হবে না, ৩জি ব্যবহার করে আপনি সরাসরি ভিডিও কল করতে পারবেন।
এছাড়াও Symphony W125 ফ্ল্যাশ প্লেয়ার সাপোর্ট করে। এতে করে ফ্ল্যাশ-ভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলো দেখতে আপনার কোন অসুবিধা হবে না। সেন্সর নিয়ে কয়েকটি কথা না বললেই নয়। অনেকেই ফোনটিতে বিভিন্ন সেন্সর এর উপস্থিতি নিয়ে সন্দিহান। তবে সন্দেহের কিছু নেই, 3D অ্যাক্সেলেরোমিটার থেকে শুরু করে প্রক্সিমিটি, লাইট সেন্সর, জাইরোস্কোপ সহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেন্সরই এতে রয়েছে।
গেমিং
স্মার্টফোন ইউজারদের একটা বড় অংশ মূলত গেম খেলার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন। ফোনটি গেম খেলার জন্য একটি আদর্শ ডিভাইস হতে পারে। এর হার্ডওয়্যার এর দিকে খেয়াল করলে আমরা পাই কোয়াড কোর সিপিইউ, ১ গিগাবাইট র্যাম এবং Power VR SGX 544MP জিপিইউ। এর জিপিইউ বর্তমানে অন্যতম সেরা। শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এর কারনে যেকোনো ধরনের হাই ডেফিনিশন গেম এতে অনায়াসে খেলা যাবে। আমি নিজে কয়েকটি গেম চালিয়ে দেখেছি, ফুল গ্রাফিক্স ডিটেইলস এ গেমগুলো কোন প্রকার ল্যাগ ছাড়াই চলেছে।
উল্লেখযোগ্য গেম গুলো হল- Asphalt 7, NFS Most Wanted, Dead Trigger, Contract Killer, GTA Vice City, Prince of Persia Classic, Frontline Commando. এছাড়াও সাধারণ জনপ্রিয় গেমগুলো যেমন Temple Run OZ, Fruit ninza, Angry Birds, Beach Buggy Blitz ইত্যাদি ফোনটিতে অনায়াসে খেলা গেছে। তবে অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, কিছু কিছু গেম তারা খেলতে পারেন নি। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে জিপিইউ স্পেসিফিক ডাটা না হবার কারণে কোন সমস্যা হয়েছে।
ব্যাটারি
স্মার্টফোনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এর ব্যাটারি ধারণ ক্ষমতা। কেননা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী প্রায়ই ব্যাটারি ব্যাকআপ নিয়ে অভিযোগ করে থাকেন। এই ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ২১০০ এমএএইচ ব্যাটারি। ৪.৫ ইঞ্চি মানের ডিসপ্লে, কর্টেক্স এ৭ বেইজড এনার্জি এফিসিয়েন্ট প্রসেসর ব্যবহারের ফলে এর ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতা খুব একটা খারাপ বলা যাবে না। আমার নিজের অভিজ্ঞতাও তাই বলে। মডারেট ইউসেজ এর পর আমি ২ দিন পর্যন্ত ব্যাকআপ পেয়েছি। এর চার্জ ও বেশ দ্রুত হয়। এম্পটি ব্যাটারি থেকে একবার ফুল চার্জ হতে মোটামুটি ২-২.৫ ঘণ্টার মত সময় লাগে। এর ব্যাটারি ব্যাকআপ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
বেঞ্চমার্ক
বেঞ্চমার্ক মোটামুটিভাবে একটি ডিভাইসের সার্বিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিতে পারে। ফোনটির সার্বিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে ধারণা পেতে আমরাও বেঞ্চমার্ক করেছি সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ ডিভাইসটি। এক্ষেত্রে আমরা তিনটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেছি। প্রথমেই দেখে নিই Antutu Benchmark এর ফলাফল। Antutu Benchmark এ ফোনটি মোট ১৩১৬৩ স্কোর করেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে যা কিনা গুগল নেক্সাস ৭ এর বেঞ্চমার্ক থেকেও বেশি।
এবার আসি Quadrant Benchmark এ। Quadrant Benchmark এ ফোনটির মোট স্কোর ৩৮০৫ যেটি তালিকায় Asus Transformer Prime এর ঠিক পরেই এর স্থান।
সব শেষে দেখে নেই Nenamark 2 এর স্কোর। Nenamark মূলত একটি ডিভাইসের জিপিইউ এর পারফরম্যান্স যাচাই করে থাকে। ফোনটির Nenamark 2 স্কোর অবাক করার মত। ৫৪.৩ স্কোরে সবার প্রথমে রয়েছে ফোনটি।
দাম
সিম্ফনি এই ফোনটির দাম নির্ধারণ করেছে ১৪৯৯০ টাকা। হার্ডওয়্যার, বিল্ড কোয়ালিটি এবং ক্যামেরাসহ সার্বিক পারফরম্যান্সের বিচারে এর দাম সত্যিই আকর্ষণীয়।
সিদ্ধান্ত
কম দামে যারা হাই-এন্ড ডিভাইসের স্বাদ পেতে চান তাদের জন্য সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ নিঃসন্দেহে একটি ভাল অপশন। এই দামের মধ্যে এরকম কনফিগারেশনের একটি ফোন পাওয়া আসলে একটু বেশিই।
সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ সম্পর্কে আজ বিস্তারিত জানলেন। যারা নতুন ফোন কেনার পরিকল্পনা করছেন তারা হার্ডওয়্যার ও পারফরম্যান্সের বিবেচনায় এই দামে ফোনটি কিনবেন কি?