মজিলা বের করলো প্রথম ফায়ারফক্স-ভিত্তিক স্মার্টফোন

কথা চলছিল অনেকদিন ধরেই। মজিলা জানিয়েছিল, কেবল ওয়েব ব্রাউজারের গণ্ডি পেরিয়ে ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আর এটি সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে। এবার সত্যিই দু’টো নতুন স্মার্টফোন আনলো মজিলা যেগুলোয় চলছে মোবাইলের নতুন অপারেটিং সিস্টেম, ফায়ারফক্স ওএস।

ফায়ারফক্স ওএস

ফায়ারফক্স ওএস-চালিত প্রথম স্মার্টফোন।

মজিলা জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দু’টি ফায়ারফক্স ওএস চালিত স্মার্টফোন তৈরি করেছে তারা। এর হার্ডওয়্যার সংযোজন ও উৎপাদনের কাজ করবে স্প্যানিশ একটি ছোট কোম্পানি গিকসমোবাইল। মূলত সাধারণ ক্রেতাদের উদ্দেশ্য করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আনার আগে কেবল ডেভেলপারদের উদ্দেশ্য করেই এই দু’টি স্মার্টফোন তৈরি করা হচ্ছে। ফলে ডেভেলপাররা একইসঙ্গে এর জন্য বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারবেন ও ফায়ারফক্স ওএস-এর উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারবেন।

কী এই ফায়ারফক্স ওএস?

ফায়ারফক্স ওএস হচ্ছে স্মার্টফোনের জন্য তৈরি বিশেষ একটি অপারেটিং সিস্টেম। অ্যান্ড্রয়েডের মতোই ফায়ারফক্স ওএস বিভিন্ন স্মার্টফোনে চলবে ও এর জন্য থাকবে অ্যাপ্লিকেশন। ফায়ারফক্স ওএস এর বিশেষত্ব হচ্ছে এটি পুরো মোবাইল চালাবে এইচটিএমএল৫ এর শক্তি দিয়ে। অর্থাৎ, অনেকটা ওয়েব ব্রাউজারের মধ্যেই মোবাইলের সব সুবিধা ঢুকিয়ে দেয়ার মতো করে তৈরি করা হয়েছে এই ফায়ারফক্স ওএস।

মজিলার ফায়ারফক্স ব্রাউজারের মতোই ফায়ারফক্স ওএস-ও থাকবে ওপেন-সোর্স। অর্থাৎ, যে কোনো ডেভেলপার এর সোর্স কোড নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারবেন ও নিজের মতো করে কাস্টোমাইজ করতে পারবেন। এছাড়াও মজিলার মতে এর অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এই ফোনের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপাররা ফায়ারফক্স ওএস-এর নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন স্টোর ছাড়াও ডেভেলপাররা তাদের ওয়েবসাইট থেকেও অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করাতে পারবেন।

নতুন দু’টি ফোন

কিওন (Keon)

মজিলা তাদের ফায়ারফক্স ওএস চালিত দু’টি স্মার্টফোন তৈরি করাচ্ছে গিকসফোনের মাধ্যমে। তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে কিওন। কিওনে রয়েছে ৩.৫ ইঞ্চি আকারের স্ক্রিন, ৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এস১ প্রসেসর। বুঝতেই পারছেন, খুবই সাধারণ নিম্ন মানের কিছু হার্ডওয়্যার পুরে তৈরি করা হচ্ছে প্রথম স্মার্টফোনটি। কেননা, ফায়ারফক্স ওএস এর মাধ্যমে কমদামী বাজারটিই ধরতে চাচ্ছে মজিলা। আর তাই কম হার্ডওয়্যারের ফোনে কেমন পারফরম্যান্স পাওয়া যায় সেটা দেখা জরুরি।

পিক (Peak)

অন্যদিকে পিক নামে আরেকটি স্মার্টফোন তৈরি করছে গিকসমোবাইল। এটি কিওনের তুলনায় একটু উন্নতমানের। কেননা এতে দেয়া হয়েছে ৪.৩ ইঞ্চি ডিসপ্লে, ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও কোয়ালকমের শক্তিশালী স্ন্যাপড্রাগন এস৪ প্রসেসর। অবশ্য এই কনফিগারেশন দেখে খুশি হওয়ার কিছু নেই। কেননা, মজিলা জানিয়েছে, প্রথম জেনারেশনের যেসব ফায়ারফক্স ওএস-চালিত স্মার্টফোন বাজারজাত করা হবে, তার চেয়ে একটু বেশিই দ্রুতগতির ডিভাইস এই পিক।

মজিলা আরও জানিয়েছে, আগামী মাসেই গিকসমোবাইল এই দু’টি ফোন বাজারে বিক্রি করা শুরু করবে। তবে কত দামে বিক্রি হবে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য যখন চূড়ান্ত ফোনটি বাজারে আসবে, তখন এর দাম একই হার্ডওয়্যারের অন্যান্য ফোনের দামের চেয়ে অনেক কম হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও মজিলার লক্ষ্যই থাকবে বর্ধমান স্মার্টফোন মার্কেটগুলোর দিকে যেখানে কমদামে স্মার্টফোনের চাহিদা বেশি।

আর বাংলাদেশ সেই দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বলাই চলে।

কঠিন প্রতিযোগিতা

তবে বিশেষ একটা সুবিধা করে উঠতে পারবে না ফায়ারফক্স ওএস, এমনটাই মত অনেক বিশেষজ্ঞের। কেননা, একটি কমদামী অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সঙ্গে ৭ লক্ষ অ্যাপ্লিকেশন আসছে। এর সবগুলো সেই ফোনে না চললেও ব্যবহারকারীর ঐ ফোন পছন্দ করার জন্য এটাই অন্যতম কারণ হতে পারে। অন্যদিকে ফায়ারফক্স ওএস-এ এতোটা অ্যাপ্লিকেশন থাকবে না।

তারচেয়েও বড় বিষয় হলো, অ্যান্ড্রয়েডের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফায়ারফক্স একাই জেগে উঠছে না। ব্ল্যাকবেরি ১০ আগে থেকেই একটি শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। চলে আসছে উবুন্টু ফোন অপারেটিং সিস্টেমও। এমনকি স্যামসাংও অ্যান্ড্রয়েডের পাশাপাশি নতুন অপারেটিং সিস্টেম টিজেন/টাইজেন নিয়ে কাজ করছে। কাজেই, আসলেই বাজারমাত করতে পারবে কি না ফায়ারফক্স, তা কেবল বাস্তবে দেখার অপেক্ষায়।

ফায়ারফক্স ওএস-চালিত ফোন বাজারে আসলে কিনতে আগ্রহী হবেন?