হ্যান্ডস-অন রিভিউঃ Micromax A110 Canvas 2

A110

অ্যান্ড্রয়েডের বাজারটা বাংলাদেশে পুরোপুরি জমে উঠেছে বলা যায়। ২০১৩ শুরু হতে না হতেই স্মার্টফোন এক্সপোতে আমরা দেখেছি বেশ কিছু নতুন স্মার্টফোন। ওয়াল্টন নতুন তিনটি স্মার্টফোন নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পসরা সাজিয়ে আছে। অন্যদিকে সিম্ফনিও বেশ ভালো চারটি ফোন বাজারে আনতে প্রস্তুত। এমন একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ঠিক পূর্বমূহুর্তে ক্রেতাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেয়া এক কোম্পানির নাম মাইক্রোম্যাক্স।

সপ্তাহখানেক আগে দেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যানভাস ২ নামের ৫” আকারের বিশাল স্মার্টফোন আনে ভারতীয় কোম্পানিটি। সেই থেকে মাইক্রোম্যাক্স নিয়ে নতুন ক্রেতাদের মনে আগ্রহ ও জিজ্ঞাসার শেষ নেই। কাস্টমার কেয়ার নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্থাপন হলেও মোটামুটি সবাই নতুন অ্যান্ড্রয়েড কেনার আগে মাইক্রোম্যাক্স নিয়ে একবার ভেবে দেখছেন। তাদের জন্যই আজ আমাদের হ্যান্ডস-অন রিভিউ, মাইক্রোম্যাক্স এ১১০ ক্যানভাস ২ — লিখেছেন সাকিবুল ইসলাম।

মাইক্রোম্যাক্স এ১১০ ক্যানভাস ২

Micromax-A110

বর্তমান যুগে অ্যান্ড্রয়েড বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, ভালো মানের ডিসপ্লে, ভালো গ্রাফিক্স সাপোর্ট, গেমস ইত্যাদি এর জন্য। তবে সাধারণত স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় জরুরি, সেটা হচ্ছে স্ক্রিনের আকার। লক্ষ্য করলে দেখবেন, বেশিরভাগ স্মার্টফোনের আকারই এখন ৪ ইঞ্চির আশেপাশে। এই বছর থেকে ৫ ইঞ্চি আকারের পর্দা ও ফুল এইচডি রেজুলেশনের মোবাইল আসা শুরু করেছে। কিন্তু এতো বড় ফোন কিন্তু সব ধরনের ব্যবহারকারীর জন্য খুব একটা আরামদায়ক না।

সাধারণত 3.5 থেকে 4.3 ইঞ্চি আকারের ডিসপ্লে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক, যদিও স্মার্টফোনের আসল মজা পেতে একটু বড় আকারের পর্দাই ভালো। কিন্তু বড় ডিসপ্লে ফোনগুলোর চাহিদা এখন বাড়ছে। বিভিন্ন কোম্পানিও কমদামে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন বের করা শুরু করেছে। Micromax A110 Canvas 2 তাদের মধ্যে একটি !

এখন আসলে কম দামে অনেক ভাল ফোন পাওয়া যাচ্ছে, Micromax A110 এর সাথে প্রতিযোগিতা দেওয়ার মত অনেক ফোন এই আছে এখন বাজারে কিন্তু হার্ডওয়্যারের দিকে A110 একটু এগিয়ে আছে। চলুন দেখে নেয়া যাক কেন।

Micromax A110 এর স্ক্রিনের আকার হচ্ছে ৫.০ এবং ডিসপ্লে রেজুলেশন ৪৮০*৮৫৪ পিক্সেল। এর পিক্সেল ডেনসিটি হচ্ছে ১৯৯ পিক্সেল পার ইঞ্চি (পিপিআই), এটির ডিসপ্লে হচ্ছে একটি IPS প্রযুক্তির ডিসপ্লে যা আসলেই এই দামের জন্য দারুণ একটি ডিসপ্লে !

Micromax A110 এ রয়েছে ডুয়েল কোর ১ গিগাহার্জ Mediatek এর প্রসেসর। গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটে রয়েছে PowerVR SGX 531। আর এর রয়েছে ৫১২ মেগাবাইট র‌্যাম ও ৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ যা মাইক্রো-এসডি কার্ডের মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব।

এ ফোনটিতে চলছে অ্যান্ড্রয়েড ৪.০.৪ আইসক্রিম স্যান্ডউইচ । পাশাপাশি সেটটিতে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা, রেডিও, ব্লুটুথ, জিপিএস, অ্যাক্সেলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি সেন্সর, কম্পাস, ওয়াই-ফাই ও ৩জি সুবিধা। এগুলো হচ্ছে এক নজরে Micromax A110 এর স্পেসিফিকেশন। এবারে চলুন হ্যান্ডস-অন রিভিউ-এর আসল পর্যায়ে যাওয়া যাক, যেখানে আমরা শেয়ার করবো আমাদের অভিজ্ঞতা।

ডিসপ্লে

এই ফোনটি একটি কারণে এই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং তা হলো এর ডিসপ্লে। এতে আছে  ৫.০ ইঞ্চি  ডিসপ্লে যার রেজুলেশন ৪৮০*৮৫৪ পিক্সেল এবং পিক্সেল ডেনসিটি হচ্ছে ১৯৯ পিক্সেল। ফোনটির ডিসপ্লে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আসলেই এই দামে এই ডিসপ্লে আশা করা যায় না।

এই ডিসপ্লে প্রথমেই আপনার নজর কাড়তে ব্যর্থ হবে না। বরং এর হাই ডেফিনিশন ভিডিও দেখেও আপনি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবেন। আমাকেও অবাক হতে হয়েছিল। এমনি সেটটি কেনার পর হাই-রেজুলেশনের একটি ভিডিও প্লে করে রীতিমতো হাঁ হয়ে যেতে হয়েছিল। আর তাও বাড়তি কোনো অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াই। বিল্ট-ইন প্লেয়ারই যথেষ্ট ভালো রেজুলেশনে ভিডিও প্লে করতে সক্ষম।

ইউজার ইন্টারফেস, হোমস্ক্রিন ও উইজেট

এই ফোনটিতে চলছে অ্যান্ড্রয়েড আইসক্রিম স্যান্ডউইচের স্টক রম। অর্থাৎ, মাইক্রোম্যাক্স নিজেরা স্যামসাং বা সিম্ফনির মতো কাস্টোমাইজ করেনি। আইসক্রিম স্যান্ডউইচের ডিফল্ট ইন্টারফেসই এতে পাওয়া যাবে। তাই আর ইন্টারফেস নিয়ে কিছু এই বলার নেই । এটিতে পাচ্ছেন স্টক উইজেট যেগুলো অ্যান্ড্রয়েডের সাথেই থাকে। আর গুগলের অ্যাপ্লিকেশনগুলো তো থাকছেই।

কন্টাক্টস

ফোন করার স্ক্রিন থেকে আপনি সরাসরি কল লগ, কন্টাক্টস এবং ফেভারিটস নম্বরে যেতে পারবেন। এটি তে ৩জি আছে সরাসরি ভিডিও কলও করতে পারবেন এবং Skype, Tango ও ব্যবহার করতে পারবেন !

মেসেজিং

মেসেজিং স্ক্রিনও স্টক অ্যান্ড্রয়েড আইসক্রিম স্যান্ডউইচের মতোই। তবে এই ফোনের বিশালতার কারণে এখানে এসে একটু ঝামেলা আছে। অর্থাৎ, ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লেতে এক হাত দিয়ে লেখা বেশ কষ্টের ব্যাপার। তবে ২ হাত দিয়ে লিখলে ঠিক মতোই লেখা যায় না। অবশ্য টাইপিং-এর সময় আমি কোন ল্যাগিং বা Slow Response পাইনি। অর্থাৎ, এর ডিসপ্লের টাচ রেসপন্স বেশ ভালো।

মিউজিক

মিউজিকের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পাবেন না এই ফোনে। কিন্তু তবুও সেটের মিউজিক/সাউন্ড খুবই পরিস্কার ও স্পষ্টও। স্পিকারের সাউন্ডও মোটামুটি ভালোই বলা যায়!  তবে আলাদা হেডফোন কিনে নিলে সেটায় ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিতে হবে অ্যাক্সেসরিজ সাপোর্টেড কি না। কেননা, পোর্ট ৩.৫ এমএম হলেও সব হেডফোন কিন্তু কাজ করবে না।

ইন্টারনেট

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের আসল মজাই ইন্টারনেটে নিহিত। তাই না? আর এই ইন্টারনেট ব্যবহারের পূর্ণ অভিজ্ঞতাটুকু দিতে সক্ষম করেই তৈরি করা হয়েছে Micromax A110।

অ্যান্ড্রয়েডের ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে যেটি দেয়া হয়েছে সেটা দিয়ে প্রায় সব ব্রাউজিং-এর কাজই চালিয়ে নিতে পারবেন। ইন্টারনেট দ্রুতগতির থাকলে এই ব্রাউজারও দ্রুত কাজ করবে। তবে ডিভাইসের ডিফল্ট ব্রাউজারে সবসময়ই সুযোগ সুবিধার কিছুটা কমতি থাকে। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে ডলফিন ব্রাউজার বা ফায়ারফক্স ডাউনলোড করে ব্যবহার করা। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও বিভিন্ন সুবিধা সম্পন্ন দুইটি ব্রাউজার।

বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনেও ইন্টারনেটের গতিতে কোনো সমস্যা লক্ষ্য করা যায়নি। ইন্টারনেট অ্যাকটিভ করার পর থেকে সব অ্যাপ্লিকেশনেই কানেকশন পৌঁছে গেছে। এর জন্য বাড়তি কোনো ঝামেলাও করতে হয়নি যেমনটা অনেক জাভা ফোনে (এমনকি সনি এরিকসনের ফিচার ফোনেও) করতে হতো। অবশ্য এটা সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনে একই।

এছাড়াও মাইক্রোম্যাক্স এ১১০-এ প্রক্সিমিটি সেন্সর, অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর, জিপিএস ইত্যাদি বেশ ভালোমতোই কাজ করে। এগুলোর মধ্যে প্রক্সিমিটির মাধ্যমে আপনি যখনই ফোন রিসিভ করবেন, তখন ফোনটি কানের কাছে নিলেই লাইটটি নিভিয়ে দেবে, অ্যাক্সেলেরোমিটার বিভিন্ন ড্রাইভিং গেম খেলতে এবং জিপিএস গ্লোবাল ম্যাপে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আপনার অবস্থান দেখাবে।

ডিফল্ট অনেক অ্যাপ্লিকেশনই দেয়া থাকে Miromax A110 তে। তবে এর মধ্যে যেগুলো কাজে লাগবে, সেগুলো হলো গুগল অ্যাপস এবং ফেসবুক।
Micromax এরও নিজস্ব কিছু অ্যাপ্লিকেশন দেওয়া আসে কিন্তু সেগুলো আসলে কোন কাজের না!

গেমস

unnamed

গেমসের পারফরম্যান্সও বেশ সন্তোষজনক। আসলেই আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এই ফোনের গেম এর পারফরম্যান্স দেখে ! শুরু শেষ পর্যন্ত সব গেমই চলে এই মোবাইলে। এমন অনেকে আছেন যারা গেম খেলতে পছন্দ করেন, তাদেরকে বলছি এই সেই কম দামের মোবাইল ফোন যার জন্য আপনি এতদিন দেরি করছিলেন!

ক্যামেরা

ক্যামেরার দিক দিয়ে হয়তো সেরা ফোন হবে না মাইক্রোম্যাক্স এ১১০, যদিও এটির ক্যামেরা ৮ মেগাপিক্সেল, তবুও এর কোয়ালিটি সত্যিই সন্তোষজনক। অবশ্যই একটি মোবাইলের ক্যামেরার সঙ্গে ডিএসএলআর ক্যামেরায় তোলা ছবির তুলনা করতে যাবেন না। এর ছবি তুলনা করতে পারেন স্যামসাং Nokia C5, Xperia Mini -এর সঙ্গে। পার্থক্যটা নিজেই বুঝবেন। নিচে দেয়া হলো মাইক্রোম্যাক্স এ১১০ এর ক্যামেরায় তোলা কয়েকটি ছবি।

ব্যাটারি

সারাক্ষণ ইন্টারনেট চালু রাখলেও একদিন পুরোপুরি ব্যাকআপ দেবে এ১১০ ! এটিতে থাকছে একটি ২০০০ mAh এর ব্যাটারি, তবে একটু চালাক হলেই কিন্তু ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো যায়। আর সেই চালাকিগুলো শিখতে দেখে নিন অ্যান্ড্রয়েড কথনের এই পোস্টঃ যেভাবে নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলবেন অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাটারি ব্যাকআপ

বেঞ্চমার্ক

বেঞ্চমার্ক দিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। নিজেই দেখে নিন বেঞ্চমার্ক ফলাফল ।

উপর থেকে তিন ও চার নম্বর হচ্ছে মাইক্রোম্যাক্স এ১১০।

সমস্যা

আমার মতে মাইক্রোম্যাক্স এ১১০-এ তেমন কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ব্যবহার করতে গিয়ে যেটি প্রায়ই সমস্যা মনে হয় সেগুলোর কথা বলছি। ডিসপ্লেটি একটু বেশিই বড় (আমার জন্য); মাঝে মাঝে রাস্তায় বের করতে সমস্যা হই, সবাই তাকিয়ে থাকে ! 😐

দাম

অনেকের চোখে দাম এড়িয়ে গেছে তাই আলাদা করে দেয়া হলো। মাইক্রোম্যাক্স নিজস্ব শো-রুম/বিক্রয়কেন্দ্রে ডিভাইসটি ১৪,৯৯০ টাকায় বিক্রি করা হলেও স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় ও ডিভাইসের চাহিদা অনেক বেশি থাকায় অনেক বিক্রেতাই ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা দাম হাঁকছেন। কেনার আগে তাই পাঠকরা জেনে রাখুন, ডিভাইসটির আসল দাম ১৫ হাজার টাকা। এর চেয়ে বেশি চাইলে কিনবেন না।

আর আমরা এইমাত্র জানতে পেরেছি ঢাকার বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের উল্টোদিকে “মোবাইল নেটওয়ার্ক” মাইক্রোম্যাক্সের ডিলার। তারা আগামীকাল থেকে ১৫,০০০ টাকা দামেই এই ফোন বিক্রি করতে পারে।

সিদ্ধান্ত?

সবশেষে মাইক্রোম্যাক্স এ১১০ কিনে আমি মোটেই পস্তাচ্ছি না এই কথা স্বীকার করতেই হবে। আপনিও পস্তাবেন না বলেই আশা করি। তবে সবই নির্ভর করে আপনি আপনার সেট থেকে কী আশা করেন। আপনি যদি সারাক্ষণ ওয়েব ব্রাউজিং আর পিডিএফ বই পড়তে চান তাহলে আগেই বলে দিয়েছি, এই ফোন আপনার জন্য । আর যদি আইসক্রিম স্যান্ডউইচ, জেলি বিনের কাস্টম রম ইত্যাদি ইন্সটলের ইচ্ছে থাকে তাহলেও মাইক্রোম্যাক্স এ১১০ (এটির জন্য জেলি বিন এর একটি কাস্টম রম আছে)।

আবার আপনি যদি আরও বেশি দামে আরও ফিচারসমৃদ্ধ সেট কিনতে চান, তাহলে অপেক্ষা করতে পারেন মাইক্রোম্যাক্স এ১১৬ ক্যানভাস এইচডি ফোনের জন্য, যা সম্প্রতি ভারতের বাজারে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ও বাংলাদেশে আসতে কিছুটা সময় নিতে পারে।

এবার আপনার সিদ্ধান্ত জানানোর পালা। মাইক্রোম্যাক্স এ১১০ ব্যবহারকারীরা আপনাদের মতামত জানাবেন। আর যারা কিনবেন ভাবছেন, তারাও যে কোনো প্রশ্ন বা সিদ্ধান্ত মন্তব্যের ঘরে আমাদের জানান। আপনার কোনো বন্ধু কিনবেন বলে ভাবছেন, তাকেও পাঠিয়ে দিন এই রিভিউ। আর এমনই হ্যান্ডস-অন রিভিউ’র জন্য ইমেইলে অথবা ফেসবুকে লাইক করুন অ্যান্ড্রয়েড কথন।