ঢাকার রাস্তায় বাইসাইকেলের হঠাৎ বেড়ে যাওয়াটা লক্ষ্য করেছেন কি? পুরোদস্তর সাইক্লিস্টের সুট পরিহিত ট্রেক, মেরিডাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের ছড়াছড়ি এখন বাংলাদেশেই। তবে এ দেশে এখনও বাইসাইকেলকে খুব একটা মর্যাদার চোখে দেখা না হলেও বিশ্বের প্রেক্ষাপট কিন্তু ভিন্ন। সারাবিশ্বেই বাইসাইকেলকে যাতায়াতের প্রশংসনীয় মাধ্যম বলে বিবেচনা করা হয়। আর এই বাইসাইকেলকে ঘিরে নিত্যনতুন উদ্ভাবনও থেমে নেই। এই ধারাবাহিকতায় এবার এলো নতুন এক ওয়্যারলেস প্রযুক্তির গিয়ার-শিফটার যা আপনা-আপনিই সাইকেলের গিয়ার পরিবর্তন করতে সক্ষম।
ক্যামব্রিজ কনসালটেন্ট লিমিটেড সম্প্রতি নতুন এই ওয়্যারলেস গিয়ার শিফটার সিস্টেম আবিষ্কার করেছে। এটি সাইক্লিং-এর সময় রাইডারকে গিয়ার পরিবর্তন করার ঝামেলা দূর করে রাস্তার অবস্থা, পেডালিং-এর গতি এবং দ্রুততার উপর ভিত্তি করে নিজে নিজেই গিয়ার শিফট করা সম্ভব হবে।
নিউ সায়েন্টেস্ট জানিয়েছে, তারহীন এই পদ্ধতিতে সাইকেলের ক্র্যাংকে পেডালিং গতি নির্ণয়ের জন্য একটি সেন্সর এবং সামনের চাকায় বর্তমান গতি নির্ণয়ের জন্য আরেকটি সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এই দু’টি সেন্সর থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশনে পাঠানো হয়। অ্যাপ্লিকেশনটি এই দু’য়ের সমন্বয় করে কোন গিয়ার সবচেয়ে কার্যকর হবে তা নির্ধারণ করে ও গিয়ার শিফট করে দেয়।
বাইসাইকেলে ইলেকট্রিক গিয়ার শিফট
জাপানের শিমানো ইনকরপোরেটেডের মতো বেশ কিছু কোম্পানি মিলে এই নতুন ওয়্যারলেস গিয়ার শিফট প্রযুক্তির জন্য ইলেকট্রিক গিয়ার শিফটার তৈরি করেছে। সাধারণ ইলেকট্রিক গিয়ার শিফটারের ক্ষেত্রে এগুলো একটি লিথিয়াম ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। আর এর গিয়ার সুইচ থাকে সাইকেলের হ্যান্ডলবারে। ক্যামব্রিজ কনসালটেন্ট লিমিটেডের টিম ফওলার বলেছেন, ‘আমরা ক্যাবলটুকু কেটে দিয়েছি ও তার জায়গায় একটি স্মার্ট ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্লুটুথ বসিয়ে দিয়েছি যা ব্যাটারির শক্তিতেই অনেকদিন পর্যন্ত চলতে সক্ষম।’
নতুন এই গিয়ার শিফটারে ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক দু’টি মোড রয়েছে। ম্যানুয়াল মোডে প্রাপ্ত ডেটার ভিত্তিতে কোন গিয়ারে থাকা উচিৎ তা অ্যাপ্লিকেশনটি নির্ণয় করে তা রাইডারকে জানায়। রাইডার ইচ্ছে করলে অ্যাপ্লিকেশন থেকেই গিয়ার শিফট করতে পারেন।
অন্যদিকে অটোমেটিক মোডে কার্যকর গিয়ার নির্ণয় করার পর রাইডারের নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে নিজে নিজেই গিয়ার শিফট করে দেবে নতুন এই অ্যাপ্লিকেশন। গত দুই মাস ধরে ক্যামব্রিজ কনসালটেন্ট লিমিটেড পেশাদার সাইক্লিস্টদের দিয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনটি পরীক্ষা করিয়েছেন। সাইক্লিস্টরা জানিয়েছেন, তাদের কখনই এমনটা মনে হয়নি যে তারা ভুল গিয়ারে চালাচ্ছেন।
ব্লুটুথ প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা
লন্ডনের ইভান সাইকেলস-এর জোয়েল নাটালি বলছেন, ব্লুটুথ প্রযুক্তির উপর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে এখনও অনেকেই সন্দিহান। তার মতে, শিমানো চাইলেই তারহীন প্রযুক্তির গিয়ার-শিফটার তৈরি করতে পারতো। কিন্তু তারা তা করেনি।
“কল্পনা করে দেখুন, ২০০জন সাইক্লিস্ট একসঙ্গে রাইডিং করছেন ব্লুটুথ প্রযুক্তির তারহীন গিয়ার শিফটারের মাধ্যমে। আপনি কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে একজনের ব্লুটুথ সিগন্যালে আরেকজনেরটার নির্দেশ পৌঁছে যাচ্ছে না অথবা কেউ ইচ্ছেপূর্বক একজনের গিয়ার শিফটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছেন না?”
তিনি মন্তব্য করেছেন, নতুন এই অ্যাপ্লিকেশনে সিরিয়াস সাইক্লিস্টদের জন্য তাদের পারফরম্যান্স সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া গেলেও ম্যানুয়াল মোড ছেড়ে এখনই কেউ অটোমেটিক গিয়ার শিফটারে যেতে চাইবেন না।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
স্মার্টফোনের জিপিএস প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর ইচ্ছে আছে ক্যামব্রিজ কনসালটেন্ট লিমিটেডের। এর মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার বর্তমান অবস্থান নির্ণয় করবে এবং আপনার যাত্রাপথের সামনে উঁচু বা নিচু রাস্তা থাকলে সে জন্য আগেভাগেই গিয়ার পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। এছাড়াও গাড়ির মতো এবিএস (অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম) প্রযুক্তিও বাইসাইকেলে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে স্মার্টফোন থেকেই বাইসাইকেলের ব্রেকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
নতুন এই অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করা হয়েছে আইফোনের জন্য। তবে অ্যান্ড্রয়েডের বিশাল ইউজার বেসের বিষয়টি বিবেচনা করলে এই ধারণা করাই যেতে পারে যে, সফলতার মুখ দেখলে শীঘ্রই অ্যান্ড্রয়েডেও চলে আসবে এখনও কোনো নাম না পাওয়া এই অ্যাপ্লিকেশন।