হ্যান্ডস-অন রিভিউঃ Sony Ericsson Xperia Mini Pro

sony xperia mini pro

একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আপনি সাধারণত কী কী চান? দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, ভালো মানের ডিসপ্লে, ভালো গ্রাফিক্স সাপোর্ট, গেমস ইত্যাদি। তবে সাধারণত স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় জরুরি। সেটা হচ্ছে স্ক্রিনের আকার। লক্ষ্য করলে দেখবেন, বেশিরভাগ স্মার্টফোনের আকারই এখন ৪ ইঞ্চির আশেপাশে। আগামী বছর থেকে ৫ ইঞ্চি আকারের পর্দা ও ফুল এইচডি রেজুলেশনের পর্দাও আসতে পারে। কিন্তু এতো বড় ফোন কিন্তু সব ধরনের ব্যবহারকারীর জন্য খুব একটা আরামদায়ক না।

সাধারণত ৩ থেকে ৩.৫ ইঞ্চি আকারের ডিসপ্লে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক, যদিও স্মার্টফোনের আসল মজা পেতে একটু বড় আকারের পর্দাই ভালো। কিন্তু তাই বলে ছোট আকারের ডিভাইসের চাহিদা কিন্তু নিতান্ত কম না। আর ছোট আকারের স্মার্টফোনের সংখ্যাও বাজারে অনেক। কিন্তু ফোনের আকার ছোট হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে এর হার্ডওয়্যার ও পারফরম্যান্সও ছোট হয়ে যায়। তাই ছোট আকারের ডিভাইস কিনতে গেলে ভালো মান আর দামের সমন্বয়টা করা প্রায়ই কষ্টকর হয়ে ওঠে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সনি এরিকসনের দু’টি সেট রয়েছে। এগুলো সারাবিশ্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমে X10 Mini এবং X10 Mini Pro নামে দু’টি স্মার্টফোন বের করে। এগুলোর ব্যাপক সফলতার পর ২০১১ সালে সনি এরিকসন বাজারে আনে Xperia Mini ও Xperia Mini Pro. আমাদের আজকের রিভিউ হচ্ছে এই সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো স্মার্টফোনটি নিয়েই। এটি একটি হ্যান্ডস-অন রিভিউ, তাই অন্যান্য সাধারণ রিভিউর চেয়ে একটু বেশিই আশা করতে পারেন এই রিভিউ থেকে!

আরও পড়ুনঃ সিমফোনি ডব্লিউ ৫ হ্যান্ডস অন রিভিউ

সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো

মিনি প্রো

সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো হচ্ছে সনি এরিকসনের লো-এন্ড স্মার্টফোন। তবে বাজারে অন্যান্য লো-এন্ড স্মার্টফোনের থেকে এটি একদমই আলাদা। লো-এন্ড স্মার্টফোনের জগতে যেখানে গ্যালাক্সি ওয়াই, পকেট ইত্যাদি সেট রয়েছে, সেখানে প্রায় একই দামে সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো দিচ্ছে আরও শক্তিশালী হার্ডওয়্যার ও ভালো পারফরম্যান্স। প্রথমেই চলুন জেনে আসি এর হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন কী।

এক্সপেরিয়া মিনি প্রো এর স্ক্রিনের আকার হচ্ছে ৩.২ এবং ডিসপ্লে রেজুলেশন ৩২০*৪৮০ পিক্সেল। এর পিক্সেল ডেনসিটি হচ্ছে 192 পিক্সেল পার ইঞ্চি (পিপিআই)। ডিসপ্লের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য এতে ব্যবহৃত হয়েছে স্ক্র্যাচ-রেসিসট্যান্ট গ্লাস আর ডিসপ্লের মান দারুণ থেকে ‘অসাধারণ’ করে তুলতে এর ক্ষমতা যোগাচ্ছে সনির বিখ্যাত ব্রাভিয়া ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন ব্যবহারের ফলে ব্যাটারি খরচ একটু বাড়লেও চমৎকার ছবি দেখার উপযোগী করে তুলে আপনার মোবাইলের স্ক্রিন।

মিনি প্রো

এক্সপেরিয়া মিনি প্রোর স্ক্রিনের ক্ষমতা তো যোগাচ্ছে ব্রাভিয়া ইঞ্জিন, যেটা চাইলেই আপনি বন্ধ করে দিতে পারেন। কিন্তু এর অন্যান্য হার্ডওয়্যারের ক্ষমতা যোগানোর জন্য কী রয়েছে? এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র প্রসেসর হচ্ছে ১ গিগাহার্জ স্করপিয়ন আর গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটে রয়েছে অ্যাড্রিনো ২০৫। আর এর রয়েছে ৫১২ মেগাবাইট র‌্যাম ও মাত্র ৪০০ মেগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ।

মিনি প্রো

এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র অন্যতম সুবিধা হচ্ছে কোয়ের্টি কিবোর্ড। হ্যাঁ, এটি ল্যান্ডস্কেপ মোডে বাম দিক থেকে স্লাইড-আউট করলে বেরিয়ে আসবে সম্পূর্ণ কোয়ের্টি কিবোর্ড। ভাবছেন, ৩ ইঞ্চি আকারের কিবোর্ডে কি লেখা যাবে নাকি! কিন্তু আপনি শুনলে অবাক হবেন, বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেয় ছোট এই কোয়ের্টি কিবোর্ড।

এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’তে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ২.৩ জিঞ্জারব্রেড তবে এটি আইসক্রিম স্যা্ন্ডউইচে আপডেট করা যাবে। পাশাপাশি সেটটিতে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ফ্রন্ট ক্যামেরা, রেডিও, ব্লুটুথ, জিপিএস, অ্যাক্সেলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি সেন্সর, কম্পাস, ওয়াই-ফাই ও ৩জি সুবিধা। এগুলো হচ্ছে এক নজরে এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র স্পেসিফিকেশন। এবারে চলুন হ্যান্ডস-অন রিভিউ-এর আসল পর্যায়ে যাওয়া যাক, যেখানে আমরা শেয়ার করবো আমাদের অভিজ্ঞতা।

মিনি প্রো

ডিসপ্লে

সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো কেনার পক্ষে অন্যতম যুক্তি হচ্ছে এর ডিসপ্লে রেজুলেশন ও কোয়ালিটি। এক্সপেরিয়া মিনি প্রো বাংলাদেশে ১২,৮০০ থেকে ১৫.৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান দাম সম্ভবত ১৫,৫০০। তবে আমি কেনার সময় পড়েছিল ১২,৮০০ টাকা। এই দামে আপনি ৩২০ বাই ৪৮০ পিক্সেল রেজুলেশন হয়তো পাবেন, কিন্তু সনির ব্রাভিয়া ইঞ্জিন পাবেন না। পাবেন না স্ক্র্যাচ রেসিসট্যান্ট গ্লাসও। ব্রাভিয়া ইঞ্জিনের পার্থক্যটা হয়তো আপনার খালি চোখে ধরা পড়বে না। কিন্তু এটি সত্যিই দারুণ একটি জিনিস। খামোকা আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো ব্রাভিয়া ইঞ্জিনের প্রশংসা করে না।

সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র ডিসপ্লে প্রথমেই আপনার নজর কাড়তে ব্যর্থ হবে না। বরং এর হাই ডেফিনিশন ভিডিও দেখেও আপনি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবেন। আমাকেও অবাক হতে হয়েছিল। এমনি সেটটি কেনার মাসকয়েক পর হাই-রেজুলেশনের একটি ভিডিও প্লে করে রীতিমতো হাঁ হয়ে যেতে হয়েছিল। আর তাও বাড়তি কোনো অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াই। বিল্ট-ইন প্লেয়ারই যথেষ্ট ভালো রেজুলেশনে ভিডিও প্লে করতে সক্ষম।

ইউজার ইন্টারফেস

সনি এরিকসনের ফিচার ফোন (জাভা) ব্যবহার করার সময় অনেকের কাছেই একটি অভিযোগ শোনা যেত। তা ছিল এর ব্যবহারে জটিলতা। কথা ঠিক যে, সনি এরিকসনের মোবাইল সবসময়ই নকিয়া বা স্যামসাং থেকে একটু বেশি দামী ছিল। আর তাই এর মধ্যে ফিচারও ছিল তুলনামূলক বেশি। বেশি ফিচার দিয়ে ইউজার ইন্টারফেসকে বেশিই জটিল করে তুলেছিল সনি এরিকসন। তাই অনেক সাধারণ ব্যবহারকারীই ফোনে সাধারণ সেটিংসগুলোই খুঁজে পেতেন না।

তবে স্মার্টফোন জগতে প্রবেশ করার আগে যথেষ্টই গবেষণা করে নিয়েছে এরিকসন। কেননা, সনি এক্সপেরিয়ার প্রতিটি সেটের ইউজার ইন্টারফেসই খুবই ব্যবহারবান্ধব। হয়তো সবার জন্য তা ভালো লাগবে না, কিন্তু ব্যবহার-বান্ধবতা বিচার হয় একজন ব্যবহারকারী কতোটা সহজে আর দ্রুততার সঙ্গে ডিভাইসের বিভিন্ন সেটিংস, গ্যালারি, মিউজিক ইত্যাদিতে যাতায়াত করতে পারবেন। আর এক্সপেরিয়া মিনি প্রো হচ্ছে ইউজার ইন্টারফেসের দিক দিয়ে দারুণ একটি সেট।

মিনি প্রো

হোমস্ক্রিন।

অন্যান্য এক্সপেরিয়া সেট থেকে মিনি প্রো’র ইন্টারফেসে কিছুটা ব্যতিক্রমী ভাব আনা হয়েছে। কেননা, অন্যান্য এক্সপেরিয়ার তুলনায় এর স্ক্রিনের আকার কম। মাত্র ৩ ইঞ্চি। কীভাবে এই ৩ ইঞ্চির পুরোটা কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে সনি এরিকসন টিমের সৃজনশীলতাকে ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই। যেমনটা স্ক্রিনশটে দেখতে পাচ্ছেন, এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র হোমস্ক্রিনের চার কর্নারে দিয়ে দেয়া হয়েছে এক্সপ্যান্ডেবল প্যানেল। এগুলোয় টাচ করলে এক্সপ্যান্ড হবে ও আপনাকে এনে দিকে চারটি শর্টকাট আইকন। অর্থাৎ, আপনি যদি হোমস্ক্রিনে কেবল আবহাওয়ার উইজেট রাখেন ও অন্য কোনো অ্যাপ্লিকেশনের শর্টকাট না রাখার সিদ্ধান্ত নেন, তবুও আপনি যে কোনো সময় পাচ্ছেন ৪ * ৪ = ১৬টি শর্টকাট আইকন। আপনার হোমস্ক্রিনে ১৬টি শর্টকাট আইকন রাখলে কেমন মাছ বাজার মাছ বাজার দেখাবে নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন? তার চেয়ে এই সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখার ডিজাইনের জন্য ধন্যবাদ একটা সনি এরিকসন টিমের অবশ্যই প্রাপ্য, তাই না?

মিনি প্রো

তবে এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র নোটিফিকেশন বারে কোনো শর্টকাট সেটিংস নেই। এটি বেশ সমস্যাদায়ক। বিশেষ করে কমদামী সিমফোনি ডব্লিউ ৫-এর নোটিফিকেশন টুলকিট দেখার পর এক্সপেরিয়া মিনি প্রো-তে এটা বেশ মিস করছি। সিমফোনি অ্যান্ড্রয়েডে নোটিফিকেশন বার নামিয়েই ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস, ডেটা ট্রাফিক অন-অফ কিংবা সাইলেন্ট মোড অন-অফ করা যায়। এক্সপেরিয়া মিনি প্রোতে সেই সুবিধা দেয়া হয়নি। অবশ্য আলাদা অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে এই সুবিধা যোগ করে নেয়া যাবে। কিন্তু বিল্ট-ইনের স্ট্যাবিলিটিই অন্যরকম হয়ে থাকে।

আরেকটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে স্ক্রিনশট নেয়া। ডিভাইসের স্ক্রিনশট নেয়ার জন্য সাধারণত জিঞ্জারব্রেডে কোনো সুবিধা থাকে না। কিন্তু সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র পাওয়ার বাটন ১ সেকেন্ড চেপে রাখলেই একটি মেনু আসবে যেখানে স্ক্রিনশট নেয়ার বাটন রয়েছে। এটি ক্লিক করার ০.৫ সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার ফোনের স্ক্রিনশট নেবে এবং তা গ্যালারিতে আলাদা একটি অ্যালবামে সেভ করবে। অন্যান্য ছবির মতোই এটিকে আপনি তারপর ব্লুটুথে বা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে শেয়ার করতে পারবেন।

হোমস্ক্রিন ও উইজেট

এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’তে ডিফল্ট ৫টি হোমস্ক্রিন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাড়ানো বা কমানোর কোনো উপায় এখনও খুঁজে পাইনি। এই ৫টি হোমস্ক্রিনে আপনি বিভিন্ন প্রি-ইন্সটলড অ্যাপ্লিকেশনের উইজেট, পরবর্তীতে নতুন অ্যাপ্লিকেশনের উইজেট কিংবা যে কোনো অ্যাপ্লিকেশনের শর্টকাট যুক্ত করতে পারবেন। আর যদি কোনো স্ক্রিনে বেশি উইজেট হয়ে যায়, তাহলে যেই কর্নারে বেশি পড়বে সেই কর্নারের এক্সপ্যান্ডেবল প্যানেলটি চলে যাবে। তাই এই প্যানেলগুলো আপনার হোমস্ক্রিনে উইজেট যোগ করায় কোনো সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করবে না নিশ্চিত থাকতে পারেন।

এক্সপেরিয়া মিনি প্রো

নোটিফিকেশন প্যানেলে না থাকায় সব কিছু অন-অফ করতে একটি স্ক্রিন সাজিয়ে নিয়েছি এভাবে।

হোমস্ক্রিন সোয়াইপ, উইজেট যোগ করা, রিমুভ করা ইত্যাদি কাজের সময় ইফেক্টগুলোও আপনার মন কাড়তে পারে। যদিও এসব ইফেক্ট কেবলই দৃষ্টি নন্দনের জন্য তৈরি, তবুও কিছু ভালো ইফেক্ট দেখতে কার না ভালো লাগে! আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে ওভারভিউ। হোমস্ক্রিনে দুই আঙুলে পিঞ্চ আউট করলেই সবগুলো উইজেটকে এক স্ক্রিনে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পাবেন। এখান থেকে যে কোনো উইজেটে ক্লিক করলে সেই উইজেটটি যেই স্ক্রিনে আছে, সেটি চলে আসবে। তবে ওভারভিউ মোডে অ্যাপ্লিকেশন শর্টকাট ও ফোল্ডারগুলো দেখা যায় না।

মিনি প্রো

কন্টাক্টস

এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র ডানদিকের কর্নারে রয়েছে কিপ্যাড আইকন। বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই নিচে কিপ্যাড, মেসেজিং ইত্যাদির আইকন ডক করা থাকে। কিন্তু মিনি প্রো’তে কেবল অ্যাপ্লিকেশন ড্রয়ারের আইকনটি থাকে। কিপ্যাডের আইকন থাকে ডানদিকের একটি এক্সপ্যান্ডেবল প্যানেলে। আপনি চাইলে এই প্যানেলে আরও শর্টকাট যুক্ত করতে পারবেন, মুছে ফেলতে পারবেন কিংবা শর্টকাট আইকন হিসেবে হোমস্ক্রিনেও যোগ করতে পারবেন কিপ্যাড আইকন, যেটায় ক্লিক করলে আসবে ফোন করার স্ক্রিন।

মিনি প্রো

ফোন করার স্ক্রিন থেকে আপনি সরাসরি কল লগ, কন্টাক্টস এবং ফেভারিটস নম্বরে যেতে পারবেন। তবে এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র কন্টাক্টস দিয়ে একটু সমস্যায় পড়েছি আমি। এটি প্রথমেই সিম কার্ড থেকে সব কন্টাক্টস ফোনে ইমপোর্ট করে নেয় এবং পরবর্তীতে নম্বরগুলো ফোনেই সেভ করে। আমি এখন পর্যন্ত নম্বর সিম কার্ডে সেভ করার কোনো উপায় খুঁজে পাইনি। পাঠকদের কেউ এই সেটে নম্বর ফোন থেকে সিমে কপি করার এবং যে কোনো নম্বর সরাসরি সিম কার্ডে সেভ করার কোনো উপায় জেনে থাকলে মন্তব্যের ঘরে অবশ্যই জানাবেন।

মেসেজিং

মিনি প্রো

এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র বিশেষত্বটা কী, মনে আছে? হ্যাঁ, এক্সটার্নাল স্লাইড-আউট কিবোর্ড। ছবি দেখে মনে হতেই পারে যে এই কিবোর্ডে টাইপ করে শান্তি পাওয়া যাবে না। কিন্তু হাতে নিয়ে টাইপ করে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন যে, সত্যিই বেশ আরামদায়ক একটি কিবোর্ড তৈরি করেছে সনি এরিকসন। এই কিবোর্ডে আপনি দ্রুততার সঙ্গে টাইপ করতে পারবেন বারবার ভুল করা ছাড়াই। আর যদি কম্পিউটারে টাইপ করার অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। মাত্র দু’দিন পরেই কম্পিউটারের মতোই এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র কিবোর্ডে না দেখে টাইপ করা শুরু করে দিতে পারবেন।

মিনি প্রো

তবে আমার ক্ষেত্রে কিবোর্ডের চেয়ে স্ক্রিনের কিবোর্ডেই আমি দ্রুত টাইপ করতে পারি। স্বাভাবিক। টাচ করা প্রেস করার চেয়ে দ্রুততর, তাই না? তবে সবার জন্য এমনটা নাও হতে পারে। কেননা, ৩ ইঞ্চি আকারের স্ক্রিনে সবাই টাইপ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ নাও করতে পারেন। এক্সপেরিয়া মিনি প্রো কেনার আগে অনেকেই বলেছেন এতে টাইপ করতে বেশ সমস্যা হয়। কিন্তু আমার কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। কেননা, আমার এর চেয়েও ছোট স্ক্রিনে টাইপ করে অভ্যাস আছে। তাই ৩ ইঞ্চি স্ক্রিনেও ল্যান্ডস্কেপ বা পোর্ট্রেট দু’ভাবেই লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আমি। আর যদি অনেক কথা লিখতে হয়, তাহলে নিচের হার্ড কিবোর্ড তো আছেই! অর্থাৎ, মেসেজিং-এর জন্য দারুণ একটি ডিভাইস এই সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো।

মিউজিক

মিউজিক সিস্টেমে সনি এরিকসন মোবাইল অনেক আগে থেকেই এগিয়ে। ব্যতিক্রম নয় সনি এরিকসন এক্সপেরিয়া মিনি প্রো-ও। লাউড স্পিকারে গতানুগতিক চাইনিজ মোবাইলের তুলনায় কম আওয়াজ হলেও মান ঠিক রেখে যতটুকু জোরে আওয়াজ হওয়ার কথা ততটুকু জোরেই আওয়াজ শোনা যায়। কিন্তু মিনি প্রো’র সঙ্গে যেই হেডসেট বা হেডফোনটি দেয়া হয়, সেটি একেবারেই কাজের না। অবশ্য আমি আগে স্যামসাং চ্যাম্প ডুয়োস-এর সঙ্গে দেয়া হেডফোন ব্যবহার করেছি বলে হয়তো মিনি প্রো’র হেডফোন ততোটা ভালো লাগেনি। বারবার যেন কান থেকে খুলে পড়ে যাচ্চিল। তবে আলাদা হেডফোন কিনে নিলে সেটায় ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিতে হবে অ্যাক্সেসরিজ সাপোর্টেড কি না। কেননা, পোর্ট ৩.৫ এমএম হলেও সব হেডফোন কিন্তু কাজ করবে না।

মিনি প্রো

আরও পড়ুনঃ সারাবিশ্বের সব ইন্টারনেট রেডিও এবার আপনার অ্যান্ড্রয়েডে

রেডিওতে গান শোনার সময় ট্র্যাক আইডি নামের একটি সুবিধা আপনাকে যে গানটি শুনছেন তার নাম জানতে সাহায্য করবে। অবশ্য এটি কেবল ইংরেজি ও হিন্দি গানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই আপনি যে কোনো গানের নাম, অ্যালবাম, শিল্পীর নাম ইত্যাদি জানতে পারবেন। তবে ট্র্যাক আইডি ব্যবহারের সময় ইন্টারনেট সংযোগ চালু থাকা লাগবে।

ইন্টারনেট

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের আসল মজাই ইন্টারনেটে নিহিত। তাই না? আর এই ইন্টারনেট ব্যবহারের পূর্ণ অভিজ্ঞতাটুকু দিতে সক্ষম করেই তৈরি করা হয়েছে এক্সপেরিয়া মিনি প্রো। ওয়াই-ফাই ইন্টারনেটে তো বটেই, একটু অবিশ্বাস্যভাবে গ্রামীণফোন ইন্টারনেটেও মডেম থেকে বেশি স্পিড পেয়েছি মিনি প্রোতে। এটা অবশ্য সবাই পাবেন তা বলা যায় না। কারণ, ২জি ইন্টারনেটের স্পিড এলাকাভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে এতটুকু জেনে রাখতে পারেন যে, বাড়তি স্পিডটুকু টেনে নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই ছোট্ট ডিভাইসে।

মিনি প্রো

ডিফল্ট ব্রাউজারে অ্যান্ড্রয়েড কথন।

অ্যান্ড্রয়েডের ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে যেটি দেয়া হয়েছে সেটা দিয়ে প্রায় সব ব্রাউজিং-এর কাজই চালিয়ে নিতে পারবেন। ইন্টারনেট দ্রুতগতির থাকলে এই ব্রাউজারও দ্রুত কাজ করবে। তবে ডিভাইসের ডিফল্ট ব্রাউজারে সবসময়ই সুযোগ সুবিধার কিছুটা কমতি থাকে। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে ডলফিন ব্রাউজার ডাউনলোড করে ব্যবহার করা। সেই ব্রাউজারটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও বিভিন্ন সুবিধা সম্পন্ন একটি ব্রাউজার।

বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনেও ইন্টারনেটের গতিতে কোনো সমস্যা লক্ষ্য করা যায়নি। ইন্টারনেট অ্যাকটিভ করার পর থেকে সব অ্যাপ্লিকেশনেই কানেকশন পৌঁছে গেছে। এর জন্য বাড়তি কোনো ঝামেলাও করতে হয়নি যেমনটা অনেক জাভা ফোনে (এমনকি সনি এরিকসনের ফিচার ফোনেও) করতে হতো।

ব্রাউজিং-এর ক্ষেত্রে ৩ ইঞ্চি ডিসপ্লে একটু ছোট বটে। বিশেষ করে পিডিএফ পড়ার উদ্দেশ্য থাকলে এই ডিভাইস একেবারেই রেকমেন্ডেড না। তবে ব্লগ পোস্ট, নিউজ আর্টিক্যাল ইত্যাদি পড়ার জন্য খুব খারাপও না। টেক্সট রিফ্লো সুবিধা থাকার ফলে ডবল ট্যাপ করলে জুম-ইন হবে। এরপরও পড়তে সমস্যা হলে পিঞ্চ করার মাধ্যমে সহজেই লেখা আরও বড় করতে পারবেন।

মিনি প্রো

বাংলা দেখার ক্ষেত্রেও একেবারে রেডিমেড সেট এক্সপেরিয়া মিনি প্রো। পুরো ইন্টারফেসকে তো বাংলায় রূপান্তর করা যায়ই, সেই সঙ্গে যে কোনো ওয়েবে বা অ্যাপ্লিকেশনে (যেমন ফেসবুক বা টুইটার) বাংলা লেখাও দেখতে পারবেন পরিষ্কার অক্ষরে। তাই বাংলা নিয়েও সনি এক্সপেরিয়া ডিভাইস নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। জিঞ্জারব্রেডেই আপনি স্পষ্ট বাংলা পড়তে পারবেন।

মিনি প্রো

আরও পড়ুনঃ অ্যান্ড্রয়েডে ইউনিজয় ও ফোনেটিকে বাংলা লিখুন রিদ্মিক কিবোর্ডে

এছাড়াও এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র প্রক্সিমিটি সেন্সর, অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর, জিপিএস ইত্যাদি বেশ ভালোমতোই কাজ করে। এগুলোর মধ্যে প্রক্সিমিটির মাধ্যমে আপনি যখনই ফোন রিসিভ করবেন, তখন ফোনটি কানের কাছে নিলেই লাইটটি নিভিয়ে দেবে, অ্যাক্সেলেরোমিটার বিভিন্ন ড্রাইভিং গেম খেলতে এবং জিপিএস গ্লোবাল ম্যাপে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আপনার অবস্থান দেখাবে।

মিনি প্রো

অ্যাপ্লিকেশন

মিনি প্রো

ডিফল্ট অনেক অ্যাপ্লিকেশনই দেয়া থাকে এক্সপেরিয়া মিনি প্রোতে। তবে এর মধ্যে যেগুলো কাজে লাগবে, সেগুলো হলো ট্র্যাক আইডি, কিউআর কোড রেডার নিওরেডার, গুগল অ্যাপস এবং ফেসবুক। টাইমস্কেপ নামের আরেকটি সুবিধা রয়েছে যেটি আপনার ফোনে ঘটে চলা সব কিছু একটি টাইমলাইনের মাধ্যমে দেখাবে। এতে রয়েছে ফোন কল লগ, এসএমএস, ফেসবুক আপডেট ইত্যাদি। কিন্তু টাইমস্কেপ অনেক ব্যাটারি খরচ করে বিধায় এটি ইন্সটল না করাই শ্রেয় বলে মনে করি।

গেমস

ডেড ট্রিগার

স্ক্রিনশট এক্সপেরিয়া মিনি প্রো থেকে নেয়া।

প্রি-ইন্সটল কোনো গেমস নেই এক্সপেরিয়া মিনি প্রো-তে। তবে গুগল প্লে-তে লগইন করে আপনি সঙ্গে সঙ্গেই যে কোনো গেমস ডাউনলোড করতে পারবেন। এতে বেশিরভাগ এইচডি গেমসই কাজ করে। কোনো গেমস কাজ চলবে কি না তা দেখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আপনি যেই গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে ঐ ডিভাইসে লগইন করেছেন, সেই গুগল আইডি দিয়ে গুগল প্লে-তে কম্পিউটার থেকে লগইন করুন এবং যেই গেমসটি ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন সেটির পেজে যান। আপনি সেখানেই দেখতে পাবেন গেমটি চলবে কি না।

মিনি প্রো

গেমসের পারফরম্যান্সও বেশ সন্তোষজনক। অবশ্য ইন্টার্নাল মেমোরি ভারি হয়ে গেলে গেম থেকে বের হওয়ার পর কিছুক্ষণ স্লো হয়ে থাকে সেটটি। কিন্তু সাপোর্টেড গেমগুলো খেলতে কোনো অসুবিধাই হয় না এই ফোনে।

আরও পড়ুনঃ যে ৫টি গেমস আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে থাকতেই হবে

ক্যামেরা

ক্যামেরার দিক দিয়ে সত্যিই দারুণ একটি সেট মিনি প্রো। যদিও এটি মাত্র ৫ মেগাপিক্সেল, তবুও এর কোয়ালিটি সত্যিই সন্তুষ্টজনক। অবশ্যই আপনি ছোট একটি মোবাইলের ক্যামেরার সঙ্গে ডিএসএলআর ক্যামেরায় তোলা ছবির তুলনা করতে যাবেন না। এর ছবি তুলনা করতে পারেন স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াই, ওয়াই ডুয়োস কিংবা গ্যালাক্সি এইস-এর সঙ্গে। পার্থক্যটা নিজেই বুঝবেন। নিচে দেয়া হলো সনি এক্সপেরিয়া মিনি প্রো-এর ক্যামেরায় তোলা একটি ছবি।

 

xperia mini pro camera

বড় করে দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন।

এক্সপেরিয়া ফোনে ৩ডি ক্যামেরা নামে একটি অপশন আছে কিন্তু এটা ততোটা কাজের না। আমি তো ভালোমতো ছবি তুলতে পারিইনি, যাদের জিজ্ঞেস করেছি তাদের অধিকাংশই বলেছেন, এটা দিয়ে ছবি তোলা বেশ কষ্টের। থ্রিডি ক্যামেরা বলতে অবশ্য থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক বোঝানো হচ্ছে না। এটি ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে প্যানোরামিক ছবি তোলার জন্য সনির একটি প্রযুক্তি যাকে সুইপ প্যানোরামাও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এক্সপেরিয়া ফোনে এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো একটু কঠিনই।

ভিডিও রেকর্ডের জন্যও অসাধারণ এই ক্যামেরা। যদিও রাতে ইনডোর ভিডিও খুব একটা ভালো আসে না, আউটডোর ভিডিও এইচডি মোডে সত্যিই দারুণ রেকর্ড হয়। এতোটাই যে, আমরা বন্ধুরা মিলে এর ক্যামেরা ব্যবহার করে শর্টফিল্ম করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। হ্যাঁ, শর্টফিল্ম শুট করার মতোই এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র ক্যামেরা কোয়ালিটি। আর এর কন্টিনিউয়াস অটোফোকাস ও পেছনের এলইডি ফ্ল্যাশের উজ্জ্বল আলো প্রয়োজনে পুরো অন্ধকারেও স্পষ্ট ছবি বা ভিডিও দেখতে সাহায্য করবে। আর যদি দরকার হয়, টর্চলাইট হিসেবেও এই ফ্ল্যাশ লাইট ব্যবহার করতে পারবেন। তাই মোবাইল ফটোগ্রাফিতে যাদের আগ্রহ আছে বা যাদের মোবাইলে ক্যামেরা একটি বাঞ্ছনীয় বিষয়, তাদের বলছি, এক্সপেরিয়া মিনি প্রো আপনাকে হতাশ করবে না।

ব্যাটারি

battery

সারাক্ষণ ইন্টারনেট চালু রাখলে একদিনও পুরোপুরি ব্যাকআপ দেবে না মিনি প্রো। সেটটির আকার তুলনামূলক ছোট ও ডিসপ্লে রেজুলেশন বেশ উন্নত হওয়ায় এতটুকু ছাড় আপনাকে দিতেই হবে। তবে একটু চালাক হলেই কিন্তু ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো যায়। আর সেই চালাকিগুলো শিখতে দেখে নিন অ্যান্ড্রয়েড কথনের এই পোস্টঃ যেভাবে নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলবেন অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাটারি ব্যাকআপ

আরও পড়ুনঃ নোটিফিকেশন বারেই দেখুন কত পার্সেন্ট ব্যাটারি ব্যাকআপ রয়েছে

বেঞ্চমার্ক

মিনি প্রো

বেঞ্চমার্ক দিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। নিজেই দেখে নিন বেঞ্চমার্ক ফলাফল ও অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে এর তুলনামূলক চিত্র (বারচার্ট)। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখেছি যে, বেঞ্চমার্কের ফলাফল একেকবার একেকরকম আসছে। সম্ভবত এটি সিপিইউ’র বর্তমান অবস্থা এবং কতটুকু চাপ ইতোমধ্যেই পড়ে রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল দিয়ে থাকে।

মিনি প্রো বেঞ্চমার্ক

মিনি প্রো বেঞ্চমার্ক

সমস্যা

এক্সপেরিয়া মিনি প্রোতেও কিছু সমস্যা রয়েছে। অনেক বড় কিছু না। কিন্তু ব্যবহার করতে গিয়ে যেগুলো প্রায়ই সমস্যা মনে হয় সেগুলোর কথা বলছি। প্রথমেই পিডিএফ পড়তে না পারা একটি সমস্যা। পড়তে পারবেন না বলতে খুলতে পারবেন না এমনটা বলা হচ্ছে না। বরং, আপনি বারবার ডানে-বামে জুম করে পড়তে গিয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলবেন।

আরও পড়ুনঃ আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য ইবুক-রেডার অ্যাপ্লিকেশন

অনেক অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার পর ডিভাইসের ইন্টার্নাল স্টোরেজ কম থাকায় দ্রুতই মেমোরি লো দেখাতে শুরু করবে। রুট করার মাধ্যমে কিছু অ্যাপ্লিকেশন এসডি কার্ডে পাঠাতে পারবেন বটে, কিন্তু মেমোরি কার্ড পার্টিশন না করার আগ পর্যন্ত প্রায়ই ডিভাইস কিছুটা স্লো হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ভারি কোনো অ্যাপ্লিকেশন বা গেমস টানা অনেকক্ষণ চালানোর পর বের হয়ে এলে ডিভাইস ওয়ার্কিং স্টেটে আসতে একটু সময় নেয়।

আরেকটি সমস্যা রয়েছে কিপ্যাড নিয়ে। ফোন করার সময় কিপ্যাড আইকনে ক্লিক করলে প্রায়ই আসতে একটু সময় নেয়। এটিও ইন্টার্নাল মেমোরি প্রায় ফুল হওয়ার কারণে হতে পারে। আর এই সমস্যাগুলো প্রায় সব লো-এন্ড বা কম বাজেটের অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই কম বেশি বিদ্যমান।

ওয়াই-ফাই হটস্পট হিসেবে এই ফোন ব্যবহার করলে এর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ডিভাইসের কোনো সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি। কিন্তু এতোটা তাপমাত্রা বেড়ে যাবে যে আপনারই ভয় লাগতে শুরু করবে। তাই ওয়াই-ফাই হটস্পটের চেয়ে ইউএসবি ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট শেয়ার (অ্যান্ড্রয়েড টু পিসি) করলেই বেশি ভালো হবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে সনি এরিকসনের কোনো শোরুম না থাকায় এক্সপেরিয়ার কোনো ডিভাইস কিনলেই আপনি ওয়ারেন্টি পাবেন না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদিও একটু গবেষণা করে কিনতে পারলে সাধারণত এক্সপেরিয়া সেটে সমস্যা করে না। বাকিটা আপনার কপাল।

এক্সপেরিয়া মিনির সঙ্গে তুলনা

আমি কেনার সময় এক্সপেরিয়া মিনির দাম ছিল ১২ হাজার টাকা আর মিনি প্রোর দাম ছিল ১২ হাজার ৮০০ টাকা। মাত্র ৮০০ টাকার জন্য কিবোর্ডটা মিস করার কোনো মানে হয় না। কিন্তু এখন দাম বেড়ে গেছে। কিবোর্ডের দামে ঢুকে পড়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। যেখানে ১২ হাজারের আশেপাশেই এক্সপেরিয়া মিনি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে মিনি প্রো’র দাম উঠে গেছে ১৫ হাজারের দিকে। আর এখানেই মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করেছেন।

ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলবো, এক্সপেরিয়া মিনি কিনবেন না। কেননা, এক্সপেরিয়া মিনির বেশিরভাগ ডিভাইসেরই ক্যাপাসিটিভ টাচ বাটনে (ব্যাক বাটন) সমস্যা থাকে। আন্তর্জাতিক সাইট ও জিএসএম এরিনায় একটু ঘাঁটলেই দেখবেন অনেক ব্যবহারকারীই এক্সপেরিয়া মিনি নিয়ে সমস্যায় আছেন। অর্থাৎ, সব ফোনে না, তবে অনেক ফোনেই এই ব্যাক বাটনে সমস্যা আছে। এটি হয় কাজ করতে বন্ধ করে দেয়, অথবা নিজে নিজেই কাজ করতে থাকে। এই একটি known issue আর এর কোনো ফিক্সও আসছে না। তাই বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে এক্সপেরিয়া মিনি প্রো কেনাই ভালো হবে।

সিদ্ধান্ত?

সবশেষে এক্সপেরিয়া মিনি প্রো কিনে আমি মোটেই পস্তাচ্ছি না এই কথা স্বীকার করতেই হবে। আপনিও পস্তাবেন না বলেই আশা করি। তবে সবই নির্ভর করে আপনি আপনার সেট থেকে কী আশা করেন। আপনি যদি সারাক্ষণ ওয়েব ব্রাউজিং আর পিডিএফ বই পড়তে চান তাহলে আগেই বলে দিয়েছি, এই ফোন আপনার জন্য নয়। আবার আমার মতো ক্যাজুয়াল ব্যবহারকারী হলেও আপনি এই ফোন নিতে পারেন। আর যদি আইসক্রিম স্যান্ডউইচ, জেলি বিনের কাস্টম রম ইত্যাদি ইন্সটলের ইচ্ছে থাকে তাহলেও এক্সপেরিয়া মিনি প্রো খারাপ হবে না। কারণ, এটি সারাবিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সেট আর এই সেটের যে কোনো ট্রাবলশুটিং-এর জন্য গুগলে খুঁজলেই প্রচুর সাহায্য পেয়ে যাবেন।

তবে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, নতুন করে আর এক্সপেরিয়া মিনি প্রো উৎপাদিত হচ্ছে না। সনি এরিকসন কোম্পানি সনির কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় এখন কেবল সনি এক্সপেরিয়া সেট বাজারে আসছে। এক্সপেরিয়া মিনি প্রো সনি এক্সপেরিয়ার ব্র্যান্ডে আসবে এমন কোনো তথ্য এখনও শোনা যায়নি। তাই এই সেট কিনতে চাইলে একটু তড়িঘড়ি করেই কিনে ফেলুন। মূলত সেটটির সহজলভ্যতা কমে আসাই এর দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের একটি সূত্র।

এবার আপনার সিদ্ধান্ত জানানোর পালা। এক্সপেরিয়া মিনি প্রো ব্যবহারকারীরা আপনাদের মতামত জানাবেন। আর যারা কিনবেন ভাবছেন, তারাও যে কোনো প্রশ্ন বা সিদ্ধান্ত মন্তব্যের ঘরে আমাদের জানান। আপনার কোনো বন্ধু কিনবেন বলে ভাবছেন, তাকেও পাঠিয়ে দিন এই রিভিউ। আর এমনই হ্যান্ডস-অন রিভিউ’র জন্য ইমেইলে অথবা ফেসবুকে লাইক করুন অ্যান্ড্রয়েড কথন।

বিশেষঃ রিভিউয়ের জন্য অ্যান্ড্রয়েড কথনে নিয়ে আসুন আপনার অ্যান্ড্রয়েড