অ্যামাজনের কিন্ডল ফায়ার এইচডি’র নাম শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই? অ্যান্ড্রয়েড কথনে আমরা এই ট্যাবলেটকে গুগলের নেক্সাস ৭-এর সঙ্গে তুলনা করে পোস্ট প্রকাশ করেছি বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে। কিন্তু নেক্সাস ৭ অনেক আগেই বাংলাদেশের বাজারে চলে আসলেও অ্যামাজনের কিন্ডল ফায়ার এইচডি বাজারে আসেনি। তাই তুলনামূলক চিত্রটি দেখে যারা নেক্সাস ৭-এর বদলে অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার এইচডি কিনবেন বলে মনস্থির করেছিলেন, তাদের টাকা খরচের সময় চলে এসেছে। কেননা, ঢাকায়ই এখন পাওয়া যাচ্ছে অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার এইচডি।
আরও পড়ুনঃ অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার এইচডি বনাম গুগল নেক্সাস ৭
অ্যামাজন মূলত কিন্ডল বের করে ইবুক পড়ার জন্য। বিভিন্ন ধরনের পাঠকরা অ্যামাজন স্টোর থেকে বই কিনে কিন্ডলে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্ডল হচ্ছে সাদাকালো ডিসপ্লের এক ধরনের ডিজিটাল ইবুক রেডার। পরবর্তীতে ই-ইংক প্রযুক্তি ব্যবহৃত কিন্ডল টাচ বাজারে আনা হয় যা কিন্ডলের জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এদিকে অ্যাপল তাদের আইপ্যাড ও স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি ট্যাব নিয়ে বাজারে বেশ আলোড়ন তুললে ট্যাবলেট পিসির বাজারেও প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয় অ্যামাজন।
প্রথম প্রজন্মের কিন্ডল ফায়ার বের করার পর বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয় অ্যামাজন। কেননা, মাত্র ১৯৯ ডলারে অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার সত্যিই অভিভূত করার মতো একটি ডিভাইস ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির বাজারে বেশিদিন রাজত্ব করা যায় না। তাই গুগল যখন একই দামে তাদের নেক্সাস ৭-এর ঘোষণা দেয়, তখন অনেকখানি পিছিয়ে পড়ে অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার। সেই পিছিয়ে পড়াটুকু পূরণ করে নিতেই পরবর্তীতে অ্যামাজন আনে আপডেটেড কিন্ডল ফায়ার ও কিন্ডল ফায়ার এইচডি। আপডেটেড কিন্ডল ফায়ারের দাম কমানো হয় ও কিন্ডল ফায়ার এইচডিকে নেক্সাস ৭-এর সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামানো হয় একই দামে – ১৯৯ ডলার।
সেই কিন্ডল ফায়ার এইচডি-ই এবার দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্টোর গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার বিক্রি শুরু করেছে বলে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানিয়েছে। বলা হচ্ছে, নতুন এই ডিভাইস নিতে হলে ক্রেতাকে গুণতে হবে ২৫ হাজার ৯০০ টাকা।
কী আছে কিন্ডল ফায়ার এইচডিতে?
অ্যামাজনের কিন্ডল ফায়ার এইচডিতে ব্যবহৃত হয়েছে ৭” আকারের আইপিএস ও অ্যান্টি-গ্লেয়ার প্রযুক্তির ডিসপ্লে। এতে রয়েছে ১৬ মিলিয়ন কালার ও এর পিক্সেল রেজুলেশন হচ্ছে 800 x 1280 পিক্সেল এবং পিক্সেল পার ইঞ্চি ২১৬ পিপিআই। এর স্ক্রিন সর্বোচ্চ ১০ আঙুল পর্যন্ত মাল্টিটাচ সাপোর্ট করে।
কিন্ডল ফায়ার ১৬ গিগাবাইট ও ৩২ গিগাবাইটের স্টোরেজসহ পাওয়া যাচ্ছে। তবে উপরের ২৫,৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ১৬ গিগাবাইট ক্যাপাসিটির কিন্ডল ফায়ার এইচডি। কিন্ডল ফায়ার এইচডিতে সিম কার্ড ব্যবহারের কোনো সুবিধা নেই। এটি কেবল ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে সক্ষম।
কিন্ডল ফায়ার এইচডিতে রয়েছে ১.২ গিগাহার্জ করটেক্স এ৯ প্রসেসর ও PowerVR SGX540 গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। এতে ১ গিগাবাইট র্যাম দেয়া হয়েছে। আর এতে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ৪.০ আইসক্রিম স্যান্ডউইচের একটি হাইলি কাস্টোমাইজ সংস্করণ। অর্থাৎ, এটি অন্যান্য ডিভাইসের আইসক্রিম স্যান্ডউইচ থেকে একেবারেই আলাদা। বলা বাহুল্য, কিন্ডল ফায়ার এইচডি থেকে আপনি গুগল প্লে স্টোরে ঢুকতে পারবেন না। কেননা, অ্যামাজনের জন্য আলাদা অ্যাপ্লিকেশন স্টোর রয়েছে যেখান থেকে আপনি বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে ডিভাইস রুট করার মাধ্যমে কিন্ডল ফায়ার এইচডিতে গুগল প্লে স্টোর ইন্সটল করতে দেখা গেছে। অপারেটিং সিস্টেমের পার্থক্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন কিন্ডল ফায়ার এইচডি ও নেক্সাস ৭-এর তুলনামূলক রিভিউ।
অ্যামাজনের কিন্ডল ফায়ার এইচডিতে জিপিএস, জাভা বা রেডিও সুবিধা নেই। আর এতে কোনো ব্যাক ক্যামেরাও দেয়া হয়নি। কেবল রয়েছে ১.৩ মেগাপিক্সেল যেটি ভিডিও রেকর্ড করতে সক্ষম নয়। তবে স্কাইপে ভিডিও কল করার জন্য এই ক্যামেরা ব্যবহার করা যাবে।
শেষ সিদ্ধান্ত
নেক্সাস ৭ নাকি কিন্ডল ফায়ার এইচডি? এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যেসব বিষয় বিবেচ্য তার লিংক ইতোমধ্যেই কয়েকবার দেয়া হয়ে গেছে। অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ারকেই বেশি পছন্দ হলে কিনতে যাওয়ার আগে আরেকটি প্রশ্ন খটকা লাগতে পারে। ১৯৯ ডলারের ডিভাইস বাংলাদেশে কেন ২৫,৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে? ডলারের মূল্য ৮১ টাকা ধরলে ১৯৯ ডলারে আসে ১৬,১১৯ টাকা। কাস্টমস ও ট্যাক্সসহ ইত্যাদি খরচ মিলে কি প্রায় ১০ হাজার টাকা লাগছে? এই প্রশ্ন আমাদেরও। দাম কেন এতো বেশি এ নিয়ে আমরা গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারে ইমেইল করেছি। কোনো জবাব পেলে এই পোস্ট আপডেট করে দেয়া হবে ও তা আমরা ফেসবুক পেজে পোস্ট করবো (অতএব, পেজে যোগ দিয়ে রাখুন!)।
ঢাকায় গ্যাজেটস অ্যান্ড গিয়ারের বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে বসুন্ধরা সিটি, গুলশান এভিনিউ এবং উত্তরায়।
অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার কিনতে যাচ্ছেন কি? আপনার সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়ে যাবেন কিন্তু!