যে ৮টি কারণে অ্যান্ড্রয়েড আইফোনের চেয়ে ভালো

আইফোন বনাম অ্যান্ড্রয়েড

উইন্ডোজ ভালো নাকি ম্যাক ভালো? এই বিতর্ক একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে আজও চলে আসছে। নেটে ঘাঁটলে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক পাবেন এই দুই অপারেটিং সিস্টেমের ভালো-মন্দ বিষয়ে। কিন্তু কোথাও কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত পাবেন না। কারণ, উইন্ডোজ ভালো নাকি ম্যাক ভালো, সেই হিসেব সাধারণভাবে করা যায় না। এটি নির্ভর করে আপনার প্রয়োজন ও ক্রয়ক্ষমতার উপর।

কালের বিবর্তনে ও প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রযাত্রায় উইন্ডোজ বনাম ম্যাক যুদ্ধের সঙ্গে যোগ হয়েছে আইফোন বনাম অ্যান্ড্রয়েড বিতর্ক। বিভিন্ন ব্লগে তো বটেই, সোশাল নেটওয়ার্ক ফেসবুকেও প্রায়ই রীতিমতো যুদ্ধ দেখা যায় এই অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের ভক্তদের মধ্যে। এই বিতর্ক কখনোই শেষ হবে না। কেননা, এটি ব্যক্তির উপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল। কারো কারো জন্য আইফোন ভালো। কারো কারো জন্য অ্যান্ড্রয়েড ভালো।

তবে কিছু সাধারণ বিষয় আছে যেগুলো একটির চেয়ে অপরটি বেশি ভালো করে থাকে। যেমন হার্ডওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশনের কম্প্যাটিবিলিটির দিক দিয়ে আইফোন তথা আইওএস (অর্থাৎ, আইফোন ও আইপ্যাড) অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো পারফরম্যান্স দেয় এ কথা বিশেষজ্ঞরাই স্বীকার করেছেন। যাই হোক, আজ জানাবো প্রভাবশালী মাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো বিবেচনায় আনলে এই আইফোন বনাম অ্যান্ড্রয়েড যুদ্ধে জয়ীর খেতাব গুগলের অ্যান্ড্রয়েডের ঘরেই উঠবে।

বাড়তি স্টোরেজ ক্যাপাসিটি

স্টোরেজ

অ্যাপলের যে কোনো পণ্যই কিনুন না কেন, অ্যাপল আপনাকে বিল্ট-ইন স্টোরেজের সঙ্গে আটকে দেবে। আইফোন কিনতে গেলে ১৬ গিগাবাইট বা ৩২ গিগাবাইট থেকে একটি বেছে নিতে হবে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের বেশিরভাগ ডিভাইসেই আপনাকে এই প্রতিবন্ধকতা দেয়া হয়নি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিল্ট-ইন স্টোরেজ দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে, তবুও জনপ্রিয় প্রায় সব ডিভাইসেই বাড়তি মেমোরি কার্ডের স্লট থাকে যেগুলো ৩২ বা ৬৪ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো যায়।

হয়তো প্রশ্ন করবেন, কেনার সময় আইফোনের ৩২ গিগাবাইট সংস্করণ কিনলেই তো ঝামেলা চুকে যায়। এর জন্য আইফোনকে পেছনে ফেলার দরকার কী? তাহলে বলবো, ৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজের ফোন কিনে ৩২ গিগাবাইট মেমোরি কার্ড কিনতে যত খরচ হয়, আইফোন ১৬ গিগাবাইট আর ৩২ গিগাবাইট ইউনিটের দামের পার্থক্য কিন্তু তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি!

কাজেই, এক্সপেন্ডেবল স্টোরেজ ক্যাপাসিটি থাকায় আইফোনকে পেছনে ফেলছে অ্যান্ড্রয়েড।

ম্যাপস যেগুলো বাস্তবের সঙ্গে মিলে যায়

ম্যাপস

শুনতে হাস্যকর লাগলেও এটাই আসলে সঠিক। আইওএস ৫ বা আইফোন ৫-এর সঙ্গে অ্যাপল তাদের নিজস্ব ম্যাপস সুবিধা জুড়ে দিয়েছে। গুগলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার আরেকটি ধাপ হিসেবেই এই কাজ করেছে তারা। কিন্তু অ্যাপল ম্যাপস এতোটাই অবাস্তব হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খুব সমালোচনার মুখে পড়েছে অ্যাপল। দেখা গেছে হাসপাতালের জায়গায় খোলা মাঠ দেখানো হচ্ছে আবার নদীর উপরে রেলস্টেশন! অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়েছে যে, অ্যাপলের সিইও টিম কুক অ্যাপল ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে একটি পত্র প্রকাশ করেন অ্যাপলের ওয়েবসাইটে

তারচেয়ে মজার বিষয় হলো, সেই পত্রে অ্যাপল নিজেই আবার নকিয়া বা গুগল ম্যাপস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। অথচ একটি অ্যান্ড্রয়েড হাতে নিয়ে গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন-ইন করলেই বিশ্বের সবচেয়ে বাস্তব ম্যাপস পেয়ে যাবেন আপনার ডিভাইসে।

যদিও আইফোনেও এই গুগল ম্যাপস যোগ করে নেয়া যায়, বাই ডিফল্ট এই সুবিধা না থাকায়ই হয়তো বিজনেস ইনসাইডার একে আইফোনের দুর্বলতা ভাবছে। আর তাই আমরাও মনে করি এদিক দিয়ে অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্ম এগিয়ে রয়েছে। (গুগল ম্যাপস আর অ্যান্ড্রয়েড দু’টোই কিন্তু গুগলের অধীনে!)

উন্মুক্ত অ্যাপ্লিকেশন স্টোর

অ্যান্ড্রয়েড

উন্মুক্ত বলতে সরাসরি ওপেন বোঝানো হচ্ছে না, বরং অ্যাপ্লিকেশন ও গেমস প্রকাশ ডেভেলপারদের জন্য অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে আরও সহজ এটাই বোঝানো হচ্ছে। সাধারণত অ্যাপল যে কোনো অ্যাপ্লিকেশন নিজেরা রিভিউ করে অ্যাপ্লিকেশন স্টোরে প্রকাশ করে থাকে। এই পদ্ধতি সময় নিতে পারে কয়েক সপ্তাহ। অন্যদিকে গুগল তাদের নীতিমালার সম্মতি দেয়া সাপেক্ষে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়ই নতুন অ্যাপ্লিকেশন গুগল প্লে স্টোরে প্রকাশ করে থাকে।

এতে অবশ্য মাঝে মাঝে ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকারক অ্যাপ্লিকেশনও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপ্লিকেশন রাখলে ও যে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার আগে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের রিভিউ পড়ে নিলে নিরাপদ থাকা যায়। এছাড়াও যেকোনো জায়গা থেকেই অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে ইন্সটল করা উচিৎ নয়। অ্যাপ্লিকেশন প্রকাশে এই সহজ পদ্ধতির জন্য অ্যান্ড্রয়েডকে আইফোনের চেয়ে ভালো বলে মত দিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার।

ওয়েব ব্রাউজিং, ইমেইল ও অন্যান্যের জন্য ডিফল্ট অ্যাপ

আইফোনের অন্যতম একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এর ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশন। স্বাভাবিক অবস্থায় আপনি কোনোভাবেই ডিফল্ট ওয়েব ব্রাউজার হিসেবে ক্রোম, ডলফিন বা অন্যগুলোকে সেট করতে পারবেন না। ইমেইলের জন্যও জিমেইলকে ডিফল্ট অ্যাপ হিসেবে সেট করার কোনো অপশন নেই। অথচ অ্যান্ড্রয়েডে আপনি যে কোনো কাজের জন্য যে কোনো অ্যাপ্লিকেশনকে ডিফল্ট হিসেবে পছন্দ করতে পারবেন।

এছাড়াও এক গবেষণায় দেখা গেছে ফরচুন ১০০০ ওয়েবসাইট লোডিং-এ অ্যান্ড্রয়েড আইফোনের চেয়ে তুলনামূলক কম সময় নেয়।অর্থাৎ, হাই-এন্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোন অনেক সময় আইফোনের চেয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে থাকে (যদিও সেটি বাংলাদেশে অবস্থানকারীদের জন্য খুব একটা প্রযোজ্য নয়।)

বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস

সবার পছন্দ একরকম নয়। ঠিক না? অ্যাপল ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে কিন্তু কথাটি ঠিক। সবাই একরকম দেখতে আইফোন ব্যবহার করেন। আপনি যদি বিভিন্ন ডিজাইন, ব্র্যান্ড ও হার্ডওয়্যারের ডিভাইস চান, তাহলে অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমের কোনো বিকল্প নেই। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে উইন্ডোজ ফোন ৮-এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ফোন ও ট্যাবলেট বাজারে আনছে, কিন্তু কথা হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড আর আইফোনকে ঘিরে। অতএব, ব্যতিক্রমী ডিভাইস কিংবা বিভিন্ন দামে ডিভাইস চাইলে অ্যান্ড্রয়েডই আপনার লক্ষ্য হবে।

স্ট্যান্ডার্ড ক্যাবল

ইউএসবি

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর সঙ্গে কোনো লাইটনিং বা বিজলী-টাইপ কানেক্টর নেই! তবে এর ভালো দিক হচ্ছে, বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই স্ট্যান্ডার্ড ইউএসবি ক্যাবল ব্যবহৃত হয় যার এক মাথা নরমাল ইউএসবি ও অন্য মাথা মাইক্রো-ইউএসবি পোর্টের জন্য উপযুক্ত। দেখা যাবে, আপনার আগের কোনো ডিভাইসের ক্যাবল দিয়েই আপনি আপনার ফোন কম্পিউটারের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারবেন।

এই সুবিধাটি ছোট্ট মনে হলেও বেশ কাজে আসে। আমি প্রায়ই আমার এক্সপেরিয়া মিনি প্রো’র চার্জার ও ক্যাবল বাসায় ফেলে আপুর বাসায় চলে যাই। তখন আপুর সিমফোনি ডব্লিউ ৫-এর ইউএসবি ক্যাবল কম্পিউটার ও আমার এক্সপেরিয়ার সঙ্গে কানেক্ট করে মোবাইল চার্জ করতে পারি।

উইজেট ও লকস্ক্রিন

লক স্ক্রিন

আপনার অ্যান্ড্রয়েডের হোমস্ক্রিনে বিভিন্ন উইজেট দেখেছেন নিশ্চয়ই? আবহাওয়ার উইজেট, ফেসবুকের উইজেট, গুগল ড্রাইভ বা এভারনোটের উইজেট ইত্যাদি। এগুলো কিন্তু সত্যিই বেশ কাজের। প্রয়োজনের মূহুর্তে অ্যাপ্লিকেশন ড্রয়ারে গিয়ে খুঁজে বের করার কাজটা সহজ করে দেয় নানা উইজেট ও শর্টকাট। সাধারণত শর্টকাট পুরো অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করে আর উইজেট অ্যাপ্লিকেশনের বিশেষ কোনো সুবিধা হোমস্ক্রিনেই নিয়ে আসে।

এছাড়াও কিছু কিছু কাস্টম রম ব্যবহার করলে আপনি লকস্ক্রিনেও বিভিন্ন সুবিধা বা উইজেট যোগ করতে পারবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই একটি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে যদি আপনি আইফোনে যান। কেননা, আইফোনে লকস্ক্রিন আনলক করলে আপনি পাবেন অ্যাপ্লিকেশন ড্রয়ার যেখান থেকে প্রতিবারই আপনাকে প্রয়োজনের অ্যাপ্লিকেশনটি খুঁজে বের করে নিতে হবে।

গুগল সেবা

গুগল

আপনি যদি আমার মতো হার্ডকোর গুগল ফ্যান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য অ্যান্ড্রয়েডের এক্সপেরিয়েন্স বেশি ভালো হবে। এটি গুগলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় গুগলের সেবাগুলো এর সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন বেশ ভালো। অন্যদিকে অ্যাপল তাদের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমকে গুগল থেকে যতোটা সম্ভব আলাদা করছে। নতুন সংস্করণ থেকে গুগল ম্যাপকেও প্রাথমিকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। তাই গুগলের বিরাট ভক্ত হয়ে থাকলে অ্যান্ড্রয়েডেই গুগলের সেবাগুলো ভালো উপভোগ করতে পারবেন।

অ্যান্ড্রয়েডই সেরা?

সবশেষে প্রশ্নটা আবারও ঘুরেফিরে আসবে। অ্যান্ড্রয়েডই তাহলে সেরা? উত্তরটা নির্ভর করে। এমনও অনেক বিষয় আছে যেদিক দিয়ে আইফোন আবার অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে ভালো। সেগুলো নিয়ে পরে কোনোদিন পোস্ট করা হবে। তবে কেউ অ্যান্ড্রয়েড ফোন আর আইফোনের মধ্যে তুলনা করার সময় অন্তত একটি বিষয় মনে রাখবেন, তুলনা করার সময় একটি কমদামী অ্যান্ড্রয়েড আর ৭০০ ডলারের আইফোনকে তুলনা করবেন না। আইফোনের সঙ্গে যদি তুলনা করতেই হয়, আইফোনের দামের মতোই সমমূল্যের কোনো হাই-এন্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিন। অনেককেই দেখেছি তাদের গ্যালাক্সি এইস (Ace) বা এক্সপেরিয়া মিনি/রে-তে একটু সমস্যা করলেই “এর চেয়ে আইফোন অনেক ভালো” বলে মন্তব্য করছেন। একটি বিষয় মনে রাখা ভালো, দাম কমাতে গিয়ে হার্ডওয়্যারের দিকেও কিন্তু কমাতে হয় অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস উৎপাদকদের। তাই ৭০০ ডলারের আইফোনের চেয়ে এসব লো-এন্ড অ্যান্ড্রয়েডে কম পারফরম্যান্স থাকাটা যৌক্তিক ও স্বাভাবিক।

এবার আপনিই বলুন, উপরের বিষয়গুলোতে কিছুটা ছাড় দিয়ে কি আইফোন নেবেন, নাকি অ্যান্ড্রয়েডই আপনার পছন্দ? আইফোন ব্যবহারকারীরাও আপনাদের মন্তব্য জানান।